কাজিরঙ্গা

ব্রহ্মপুত্র নদীর কোল ঘেঁষা, এলিফ্যান্ট গ্রাস ও ঢাকা জঙ্গল আজ গন্ডারের শান্তিপূর্ণ বিচরণভূমি হিসাবে পরিচিত। লুপ্তপ্রায় প্রজাতির একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য সুখ্যাত  Kaziranga National Park -এর গৌরবে গর্বিত রাজ্য অসম। বিশ্বের মানচিত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে এই কাজিরঙ্গা। সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা আসেন গন্ডার দেখার জন্য।

বর্ষায় প্রতি বছর প্লাবিত হয় এই বনাঞ্চল৷বস্তুত বর্ষায় ব্রহ্মপুত্র নদীর জল উপচে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে এই বনভূমি। এর ফলে প্রচুর প্রাণী, প্রাণও হারায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা ভেবেই এই উদ্যানে বেড়ানোর সময়সীমা শুধুমাত্র নভেম্বর থেকে এপ্রিল। আমাদের পরামর্শ, শেষ-শীতে কাজিরঙ্গা ভ্রমণ করাই যুক্তিযুক্ত৷

এই অরণ্যে এলে, Elephant Safarir-র মাধ্যমে গন্ডার দেখার রোমাঞ্চ সত্যি ভোলার নয়। গুয়াহাটি কিংবা জোড়হাট, দু’জায়গা থেকেই পৌঁছোনো যায় কাজিরঙ্গায়। গুয়াহাটি থেকে ২১৭ কিমি দূরত্বে এই জঙ্গল। ৩৭ নং জাতীয় সড়ক ধরে এই ন্যাশনাল পার্কে পৌঁছোনো যায়।  এলিফ্যান্ট গ্রাস, কাদাজলে ভরা স্যাঁতসেঁতে গহ্বর আর ঝিল– এই তিন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে পৃথক ভাবে চিনে নেওয়া যায় কাজিরঙ্গাকে।

ব্রিটিশ রাজত্বকালে ভাইসরয় লর্ড কার্জনের স্ত্রী-কে, তাঁর এক বান্ধবী গন্ডারের কথা বলেন। সেই কৌতূহল থেকেই ‘ম্যাডাম’ চলে আসেন জঙ্গল ভ্রমণে।১৯০৪ সালের সেই ভ্রমণে তাঁর গন্ডার দেখার সৌভাগ্য হয়নি ঠিকই, কিন্তু স্থানে স্থানে গন্ডারের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়ে, তিনি এই প্রাণীটির অস্তিত্ব বিষয়ে নিঃসন্দেহ হন। লেডি কার্জনের এই প্রকৃতিপ্রেমই কার্জন সাহেবকে উদ্বুদ্ধ করে, এই বনাঞ্চলকে গন্ডারের জন্য সুরক্ষিত উদ্যান তৈরির প্রকল্প হিসাবে চিহ্নিত করতে। অবশেষে ১৯০৫ সালে কাজিরঙ্গার ৫৭,২৭,৩৬০ একর অঞ্চল জাতীয় উদ্যান হিসাবে স্বীকৃত হয়।

Kaziranga National Park Assam

গন্ডার প্রাণীটি অত্যন্ত বিস্ময়কর। প্রায় ১৬২০ কিলো ওজনের এই পশু, শুধুমাত্র ঘাস ও গাছগাছালি খেয়ে বেঁচে থাকে। একটি গন্ডারের আয়ুষ্কাল গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ বছর। এই জীবনকালে গন্ডার ৮ থেকে ১০টি সন্তানের জন্ম দেয়। গন্ডারের প্রসবকাল ১৭ মাসের। এলিফ্যান্ট গ্রাসের আড়ালে লুকিয়ে বাঘের কাছ থেকে আত্মরক্ষা করে গন্ডার। খানিকটা লাজুক স্বভাবের এই প্রাণী মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। কিন্তু হাতির পিঠে পর্যটক দেখতে অভ্যস্ত কাজিরঙ্গার গন্ডাররা।

কাজিরঙ্গায় শুধু গন্ডারই নয়, এর অন্যতম আকর্ষণ বাঘের উপস্থিতি। রয়েছে হরিণ, সম্বর, জংলি শুয়োর, ভাল্লুক, লেপার্ড, লঙ্গুর প্রভৃতি।পর্যটকরা ফ্রেব্রুয়ারি মাসে গেলে গন্ডার দেখা সহজ হবে। কারণ এই সময় এলিফ্যান্ট গ্রাসের অপ্রতুলতা প্রাণীটিকে সামনে এনে দেয়। কাজিরঙ্গায় থাকার জন্য সরকারি ও প্রাইভেট নানা লজ ও হোটেল রয়েছে। Vacation in Kaziranga  সুখকর করার জন্য যোগাযোগ করুন অসম পর্যটনের সঙ্গে৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...