শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মা ও শিশুর মধ্যে গড়ে ওঠে এক অটুট বন্ধন, Mother’s Love সে বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। কেমন করে যেন, শিশুও বুঝে যায় মায়ের কোমল স্পর্শেই সে সব থেকে বেশি সুরক্ষিত।
বাচ্চা কাঁদলে মা-কেই বুঝে নিতে হয় সন্তানের প্রয়োজন। বাচ্চার সুরক্ষার পুরো দাযিত্ব মা নিজের কাঁধে তুলে নেয় এবং দাযিত্ব সামলাতে সামলাতেই শিশুর প্রতিটি প্রয়োজন তার নখদর্পণে হয়ে ওঠে। নিজের উপর পূর্ণ আস্থা রেখে মা তার সন্তানকে সবদিক থেকে সুরক্ষা দিতে নিজেকে প্রস্তুত করে তোলে। বাচ্চা মানুষ করতে একজন নতুন মা কীভাবে নিজের কনফিডেন্স গড়ে তুলতে পারে, তাই আমাদের আজ আলোচ্য বিষয়।
শিশুর স্নানের সময়
অনেক সময় বাচ্চাকে প্রথমবার স্নান করাতে মা ভয় পায়। কিন্তু যদি সাবধানতা অবলম্বন করা হয় এবং স্নান করাবার সঠিক পদ্ধতি জানা থাকে, তাহলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। স্নান করাবার সঠিক পদ্ধতি হল :
- বাথটাবে বাচ্চাকে স্নান করানো উচিত তবে খেয়াল রাখতে হবে টাব-এর গভীরতা যেন কম থাকে।
- বাচ্চাকে স্নান করাবার সময় ঈষদুষ্ণ জল স্নানের জন্য ব্যবহার করুন। নিজের কনুই জলে ডুবিয়ে আগে দেখে নিন জল ঠান্ডা না গরম। জল যদি গরম না লাগে তাহলে বাচ্চাকে ওই জলে স্নান করাতে পারেন।
- প্রথমে বাচ্চার উপর জলের ছিটে দিন। প্রথমেই মগে করে মাথায় জল না ঢেলে ধীরে ধীরে ঢালুন।
- বাচ্চাদের জন্য তৈরি প্রোডাক্টস-ই ব্যবহার করুন বাচ্চাকে স্নান করাবার সময়। খেয়াল রাখবেন এইসব সামগ্রীতে যেন প্যারাবেনস, এসএলএস, বা এসএলইএস-এর মতো উপাদান না থাকে।
- বাচ্চার কানে বা নাকে যাতে জল না ঢোকে তারও খেয়াল রাখতে হবে।
- বাচ্চার মাথায় এক নাগাড়ে সোজা করে মগ থেকে জল ঢালবেন না। এতে বাচ্চার নরম মাথার তালুতে আঘাত লাগতে পারে।
- স্নানের পর নরম তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে শিশুর ত্বক শুকিয়ে নিন। তোয়ালে দিয়ে রগড়াবেন না। ত্বক শুকিয়ে গেলে লোশন লাগিয়ে দিন।
বাচ্চা বেশি কাঁদলে
অনেক সময় বাচ্চা কাঁদতে থাকলে চুপ হতে চায় না কিছুতেই। মা-ও অনেক সময় কান্নার কারণ বুঝতে পারে না। বাচ্চা যদি ৩ মাসের থেকে ছোটো হয় তাহলে কারণ ছাড়াও বাচ্চা কাঁদতে পারে। সেই সময় বাচ্চাকে কোলে নিয়ে একটু ঘুরলেই বাচ্চা আরাম পায় এবং চুপও হয়ে যায়। কিন্তু যদি শিশুটি চুপ না করে, তাহলে বুঝতে হবে তার কোনও সমস্যা হচ্ছে। যেমন কোথাও ব্যথা করছে বা খিদে পেয়েছে অথবা ডায়াপার নোংরা হয়ে গেছে। তৎক্ষণাৎ বাচ্চার সমস্যা দূর করা বাঞ্ছনীয়।
বাচ্চার কান্নার সমস্যা দূর করতে কিছু জিনিসের খেয়াল রাখুন
- বাচ্চার ডায়াপার সম্পূর্ণ ভিজে গেলে বাচ্চা অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। বাচ্চার ঘুমও এর ফলে ভেঙে যায়। বাচ্চা নিজের অস্বস্তি বোঝাতে কাঁদতে শুরু করে। সুতরাং মাঝে মাঝেই বাচ্চার ডায়াপার বদলে দিলেই সে শান্ত হয়ে যাবে।
- অনেক সময় ডায়াপার অনেক্ষণ ভিজে থাকার ফলে ত্বকে র্যাশেজ হয়। এর কারণে জ্বালা, চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং ডায়াপার বদলাবার সময় সেটা খেয়াল রাখা একান্ত দরকার। বাচ্চার ওই অংশের ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখা একান্ত দরকার। এছাড়াও প্রতিবার ডায়াপার বদলাবার সময় জিংক অক্সাইড-যুক্ত ন্যাপি ক্রিম বাচ্চার ওই অংশের ত্বকে অবশ্যই লাগান।
- ৬ থেকে ৮ মাস বয়স, বাচ্চার নতুন দাঁত বেরোবার সময়। সেটাও বাচ্চাকে সমস্যায় ফেলতে পারে।
- অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও মায়ের কোলের আরাম চায়। এই ক্ষেত্রে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করলে এবং ধীরে ধীরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেও বাচ্চা আরাম পায় এবং চুপ করে যায়।
বাচ্চা যদি সারারাত জাগে
জন্মের পর পরই বেশিরভাগ শিশু দিনে ঘুমোয় এবং রাতে জেগে থাকে। কোনও কোনও সময় দিনে না ঘুমিয়ে বাচ্চা রাতেও ঘুমোতে চায় না। সুতরাং বাচ্চার সঙ্গে মা-বাবাকেও রাত জাগতে হয়। মা-বাবা বাচ্চাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন। বাচ্চার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়, যার ফলে সে ঠিকমতো ঘুমোতে পারে না। বাচ্চার যদি খিদে পায় অথবা অন্য কিছুর প্রয়োজন থাকে তাহলেও শিশু ঘুমোতে পারে না। সুতরাং এই বিষয়গুলির খেয়াল রাখা জরুরি—
রাতে বেশ কয়েবার উঠে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবার দরকার পড়ে। কারণ বাচ্চা একবারে বেশি পরিমাণে দুধ খেতে পারে না। ব্রেস্টপাম্পের সাহায্যে মাতৃদুগ্ধ স্টোর করে রাখতে পারেন এবং রাতে প্রয়োজনে সেটাই বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। এতে মায়েরও আরাম হবে এবং বাচ্চাও ক্ষুধার্থ থাকবে না।
- কোনও বিশেষ খেলনা বা চাদর নিয়ে শোবার অভ্যাস যদি বাচ্চার থাকে তাহলে যতক্ষণ না সে, সেটা কাছে পাচ্ছে ততক্ষণ বাচ্চা কিছুতেই ঘুমোতে চাইবে না। সুতরাং মা-কে তা খেয়াল রাখতে হবে।
- একটা সময় নির্দিষ্ট করে সেই সময়টাতেই বাচ্চাকে রোজ ঘুম পাড়ান। ইচ্ছেমতো সময় বদলাবেন না।
- জ্বর, সর্দি-কাশি, পেট ব্যথা, কানে ব্যথার কারণেও বাচ্চা অনেকসময় ঘুমোতে পারে না। এগুলোও মা-কেই দেখে নিতে হবে।