রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই সংবাদমাধ্যমে জানা গিয়েছিল, ভারত থেকে ইউক্রেনে মেডিকেল পড়তে যাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ২০ হাজার৷ এদের ভবিষ্যৎ এই মুহূর্তে অনিশ্চিত যে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। শোনা গেছে কিছু কিছু দেশ দয়া পরবশ হয়ে তাদের নাকি পঠনপাঠন শেষ করার সুযোগ দেবে৷বস্তুত এ যেন চিনেরই পুনরাবৃত্তি, যেখানে ২০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিল এবং কোভিড ১৯-এর কারণে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ইউক্রেন থেকে কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরেছেন এই শিক্ষার্থীরা, কারণ যুদ্ধের পরিণাম মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। মেডিকেল পড়ার ঝোঁক ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে প্রবল। সেই কারণেই ৮০ হাজার মেডিকেল সিট দেশে ভরে যাওয়ার পরও, এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অন্য দেশে পাড়ি দেয় চিকিৎসাশাস্ত্রে কেরিয়ার তৈরি করবে বলে। কিছু দালাল এইসব পড়ুয়াদের বিদেশি কলেজে সুযোগ করে দেওয়ার সুবাদে বিস্তর টাকাও উপার্জন করে চলেছে।
কিছুদিন আগেই নয়ডা পুলিশের জালে ধরা পড়েছিল এমনই এক ভুয়ো সংস্থা, যারা কাউন্সেলিং করে ছাত্রদের নানা সংস্থায় অ্যাডমিশন করায়। এ বাবদ তারা ছাত্রপ্রতি ৩০ লক্ষ টাকা উশুল করে। নয়ডার সারদা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আগ্রার সরোজিনী নগর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার জাল ডকুমেন্টস তৈরি করে।
এই ফাঁদে পা দেন যে-অভিভাবকরা, ভুলটা তাদের। ছাত্ররাও অভিভাবকদের প্ররোচিত করে এই দালালচক্রের বলি হতে। তাদের ধারণা এদেশে সব কাজই টাকার জোরে হয়। এমনই পরিস্থিতি যে, কোনও ছাত্র তার মেধার জোরে ভালো প্রতিষ্ঠানে সিট পেলেও, লোকে ভাবে এ আসলে টাকারই খেলা।
আসলে এদেশের মানুষ অসৎ পথে সাফল্য লাভের সহজ রাস্তা বেছে নিতে চান। সেই কারণেই এই অসাধু চক্রের বাড়বাড়ন্ত। সুযোগের আশায় যারা ইউক্রেন বা উহানে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গের মুখোমুখি হলেন, এদেশে থেকেও তারা কি সত্যিই সফল হওয়ার মতো মেধাবী ছিলেন?
প্রশ্নটা অমোঘ। লুঠেরাদের হাতে লুঠ করার সুযোগ করে দিচ্ছি আমরাই। অভিভাবকদের উচ্চাশা, ছাত্রদের নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা অনুভব না করা, যে-কোনও মূল্যে কেরিয়ার গঠনের লোভই এই চরম পরিস্থিতির মূলে। ভাবার সময় এসেছে। কোচিংয়ের জাল যত বিস্তার করছে, তত ছড়াচ্ছে ভুয়ো শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া সংস্থা। চকচকে প্রতিষ্ঠান দেখেই ভুলবেন না, মোহগ্রস্ততা বিপদ ডেকে আনে।