মেট্রোপলিটন শহরগুলি ভরে গেছে ছোটো-বড়ো বিভিন্ন সাইজের অ্যাপার্টমেন্টে। পরিবার ছোটো হয়ে যাওয়ায় বাড়ির কনসেপ্ট উঠে গিয়ে চলে এসেছে ফ্ল্যাটের পরিকল্পনা, স্বল্প পরিসরে মানিয়ে নিতে পারার মানসিকতা। সকলের কাছেই এখন সময় কম, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জায়গার অভাব। অথচ এরই মধ্যে ব্যবস্থা করে নিতে হবে আরামের।
ছোট্ট দুই কামরার Small Flat-টাকেই করে তুলতে হবে বাসযোগ্য অথচ কোজি এবং আকর্ষণীয়। যাতে সারাদিনের ক্লান্তিকর খাটুনির পর ছোট্ট জায়গাটাই হয়ে ওঠে স্বপ্নের প্রাসাদ। এই প্রাসাদ গড়ে তুলতে শুধু দরকার একটু প্ল্যানিং, রঙের একটা ধারণা। কতটা জিনিস দিয়ে ফ্ল্যাট-টা ভরানো উচিত অথবা কোথায় কোন জিনিসটা থাকলে মানাবে বেশি, এই সম্পর্কে একটা আইডিয়া করে নিতে পারলেই স্বপ্নপূরণ নিশ্চিত।
জায়গার প্ল্যানিং : সাধারণ ভাবে পরিষ্কার করা থেকেই শুরু করা যেতে পারে ফ্ল্যাটের ভিতরকার পরিবর্তন।
১) প্রথমেই আলমারি এবং ফ্ল্যাটের প্রতিটি কোণ থেকে অতিরিক্ত জিনিস সরিয়ে ফেলুন কারণ ছোটো জায়গায় অল্প জিনিসেই দমবন্ধ স্থিতি তৈরি হয়। দরকারে নয়তো কিছুই খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
২)আপনার Flat-এ যত কম জায়গা থাকবে ততই ক্রিয়েটিভ হতে হবে আপনাকে। ঘরে জায়গা ততটাই খালি রাখা উচিত, যতটা চলাফেরা এবং দৈনিক কাজকর্মের জন্য দরকার।
৩)কালেভদ্রে বাড়িতে যে অনুষ্ঠান হয়, তার জন্য অযথা জায়গা ছাড়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
৪)সারাদিনে ঘরের জানলা দিয়ে সূর্যের আলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিকে রিফ্লেক্ট করে। কোথায় কতটা আলো পড়ছে সেটার উপর নির্ভর করে ঘরের আসবাবপত্র সাজালে দেখতেও সুন্দর লাগবে এবং ঘরও বড়ো এবং ব্রাইট লাগবে।
৫)ডাইনিং টেবিল কিনুন এমন, যেটাকে প্রয়োজনে ডেস্ক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। পায়া আছে এমন আসবাব অনেক হালকা হয়। ওয়ান পিস আসবাব যেটা পায়া ছাড়াই সরাসরি মাটিতে রাখা যাচ্ছে এমন জিনিস ছোটো ঘরে মানানসই হয় না আর জায়গাও দখল করে অনেকখানি।
৬)অল্প জায়গার জন্য ডিরেক্টরস চেয়ার সব থেকে আদর্শ কারণ সহজেই ভাঁজ করে রাখা যায় যদি হঠাৎ খালি জায়গার প্রয়োজন এসে পড়ে।
৭)ছোটো কাউচ অথবা ডিভান শোবার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অন্য সময়ে অতিথিসৎকারের কাজেও দরকার লাগে।
৮)যা অপ্রয়োজনীয় তা-ই বাতিল করুন। সমালোচকের দৃষ্টিতে চারিদিক চোখ বুলিয়ে নিন। ঘরে দেয়ালের পাশে রাখা চেয়ারটা মনে হবে নেহাতই অবহেলায় পড়ে আছে। সারাদিনে বসার কথা দূরে থাক, ফিরেও তাকায় না কেউ তার দিকে। শুধু শুধু জায়গা জুড়ে বসে রয়েছে। সরিয়ে ফেলুন। খালি জায়গা পূরণ করুন ভালোবাসায় মোড়া কোনও ঘর সাজাবার জিনিস দিয়ে। অকারণে অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ঘর ভরিয়ে তুলবেন না।
৯)শোবার ঘরে নিয়ে আসুন মডার্ন ডিজাইনের খাট, যেগুলি জায়াগার কথা ভেবেই সেই ভাবে ডিজাইন করা হয়। প্রয়োজন পড়লে বিভিন্ন অংশ খুলে রেখে সাময়িক ভাবে খাট তুলে রেখে দেওয়া যায়।
সংরক্ষণের পদ্ধতি :
রোজ যে-জিনিস ব্যবহার করা হচ্ছে তাকে প্রথম প্রায়রিটি তালিকায় রাখুন। ভাঙা কাপ, ফুলদানি, পুরোনো ক্ষয়ে যাওয়া জুতো বাতিল করুন। এগুলো অনেকটা জায়গা অপচয় করে। কোনও জিনিস অপ্রয়োজনীয় মনে হলে ফেলে দিন, নয়তো যার দরকার তাকে দিয়ে দিন অথবা রিসাইকেল করুন। এর ফলে দেখবেন দরকারি জিনিস বাড়িতেই রয়েছে, আবর্জনা বিতাড়িত হয়েছে। অল্প জায়গায় বই, জামাকাপড়, ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস রাখার ফলে, কাজের জায়গা সবসময় অল্প মনে হয়। পুরোনো স্টাইলের আলমারি, ড্রেসার, ডেস্ক ইত্যাদি না নিয়ে এসে পছন্দমতো বিল্ট-ইন মডিউলার ফার্নিচার ফ্ল্যাটে রাখা উচিত, যাতে দেয়াল থেকে দেয়াল অথবা মাটি থেকে সিলিং পর্যন্ত অনায়াসে ধরে যায় এবং একটা কমপ্যাক্ট জায়গার মধ্যে সবকিছু সুন্দর ভাবে সংরক্ষণও করা যায়।
সম্ভব হলে, সব থেকে ভালো হয় মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত জায়গা ব্যবহার করা। অল্প জায়গার মধ্যে এত সুন্দর ভাবে স্পেস ম্যানেজমেন্টের বিকল্প আর ভাবা যায় না। দেয়ালের ভিতরেই জায়গা বার করে ক্যাবিনেট বানিয়ে নিতে পারলে জিনিসপত্র রাখতেও সুবিধা হবে এবং গুছিয়ে রাখার ফলে জায়গাটাও বড়ো লাগবে দেখতে।
ছড়ানো কাবার্ডের বদলে, একটার উপর একটা থাক বিশিষ্ট কাবার্ড (বুককেস) ব্যবহার করতে পারেন বই, ইলেকট্রিকাল জিনিস ইত্যাদি একসাথে গুছিয়ে রাখার জন্য। এতে, ছড়ানো রয়েছে বলে মনেও হবে না অথচ একই জায়গার মধ্যে অনেক জিনিস রাখাও যাবে।
রঙের ব্যবহার :
ওয়ার্ম কালারস যেমন বাদামি, লাল, হলুদ এবং কমলা রং আপনার ছোট্ট ঘরকে কমফর্টেবল এবং কোজি বানাবে।
যদি ফ্ল্যাটের সিলিং খুব নীচু হয় তাহলে দেয়ালের রং থেকে হালকা রং সিলিং-এ লাগান। সাদা সব ক্ষেত্রেই ভালো চয়েস। এটাতে সিলিং উঁচু দেখতে লাগবে।
মাটিতে কার্পেটের বদলে রাগস ব্যবহার করুন। ডার্ক কালারের মেঝে, হালকা রঙের দেয়াল এবং আসবাবপত্রের সঙ্গে ব্লেন্ড করাতে পারলে ঘরে মনে হবে অনেক জায়গা।
ঘরের দরজা, জানলার রং দেয়ালের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা উচিত। নয়তো কনট্রাস্টিং কালার করালে ঘরকে দেখতে অনেক ছোটো লাগে।
ফার্নিচার এমন বাছা উচিত যেটা চাক্ষুসভাবে দেয়াল এবং মেঝের সঙ্গে মানিয়ে যায়। বড়ো কোনও চিত্রকলা দেয়ালে টাঙাতে ইতস্তত করবেন না বিশেষত তার রং যদি হালকা হয় যেমন নীল রং। চোখকে আকর্ষণ করবে এমন জিনিস দিয়েই ঘর সাজাবেন।
বড়ো আয়না এবং ল্যাম্প রাখলে ঘর দেখতে দ্বিগুণ বড়ো মনে হয়।
ফার্নিচারের ঢাকা, সোফার ঢাকা, দরজা-জানলার পর্দাও ঘরের রঙের সঙ্গে মানানসই রাখতে হয়। এছাড়াও ঢাকা থাকলে জিনিস চট করে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে না। ঘরের ফার্নিচারও এমন রাখতে হয় যাতে প্রয়োজনে নড়ানোচড়ানো যায় এবং বিভিন্ন কাজেও ব্যবহূত হতে পারে। ‘যদি অতিথি আসে’– এই ভেবে ফ্ল্যাট জিনিসে ভরিয়ে তুলবেন না। নর্মালি বাড়িতে সোফা, ডাইনিং চেয়ার, বসে পড়াশোনা করার চেয়ার, একটা-দুটো স্টুল থাকলেই অতিথিদের ভালোভাবে অভ্যর্থনা করা যায়। এছাড়া এক্সপ্যান্ডেবল ডাইনিং টেবিলও খুব ভালো সমাধান অতিথি অভ্যর্থনার জন্য।
সুতরাং Flat যত Small হবে ততই ভালো। নিজেকে ক্রিয়েটিভ করে তোলার সুযোগও মিলবে।