বহু প্রতীক্ষিত একটি উৎসব হল Diwali। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ মেতে ওঠে এ কটা দিন। হাসি, আড্ডা, হইচই, আলোকসজ্জা, উপহার ও মিষ্টান্ন আদানপ্রদান, বাজি পোড়ানো, নানা অনুষ্ঠান, প্যান্ডেল হপিং কিছুই বাদ থাকে না।

আর Diwali উৎসবের কটা দিনের কথা মাথায় রেখেই নানা ফ্যাশনদুরস্ত পসরা সাজিয়ে নিয়ে সেজে ওঠে ফুটপাথের দোকানগুলো থেকে বড়ো বড়ো মল। আলোকসজ্জার সঙ্গে মানানসই সাজগোজ এবং পোশাক নির্বাচন যে-কোনও উৎসবেরই অঙ্গ। মানুষ শুধু অপেক্ষা করে পকেট বুঝে পছন্দমতো পোশাক এবং তার সঙ্গে মানানসই অ্যাকসেসরি কিনে নেওয়ার। পছন্দমতো পোশাকের সঙ্গে নিজেকে কীভাবে ক্যারি করবেন সেটার উপরেই নির্ভর করবে, আপনার সাজসজ্জা ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে উঠছে কিনা। ফ্যাশনের সৃষ্টি এভাবেই ক্রমবর্ধমান হয়ে উঠেছে এবং প্রতিবছরই কিছু না কিছু পরিবর্তনও সঙ্গে করে আনছে। গত দু’তিন বছর ধরে ফ্যাশনে নতুন সংযোজন মাস্ক, যেটা করোনাকালীন সুরক্ষায়ও একান্ত প্রয়োজনীয়।

তাহলে এবার সময় হল ঠিক করার যে আপনি কীভাবে সাজাতে চান নিজেকে। নজরকাড়ারূপে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে সকলেই কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু পছন্দ হল বলেই কিনে ফেললেন সেটা কিন্তু করে বসবেন না। বরং এমন কিছু বাছুন যেটা পরে বেরোলেই সকলে বুঝে নেবে আপনি কতটা ট্রেন্ডি এবং স্টাইলিশ।

কেনাকাটা করার আগে মনে রাখতে হবে পোশাকটির ফ্যাশন চলছে বলেই আপনাকেও মানাবে তা কিন্তু নয়। কী ধরনের পোশাক আপনাকে স্যুট করবে তার একটা স্পষ্ট ধারণা করে নিয়ে তবেই শপিং শুরু করুন। ঢিলেঢালা না টাইট কোনটা প্রেফার করেন সেটাও মনের মধ্যে রাখুন। ট্রায়াল দিয়ে দোকানেই যদি ফিটিংস-টা নিশ্চিত করে নেন, তাহলে বারবার বদলাবার ঝঞ্ঝাট থেকে রেহাই পাবেন।

মডার্ন কিছু পোশাকের স্টাইল দিয়ে উৎসবের শুরুটা করতেই পারেন। বাজারে খুব চলছে ক্রপ টপ এবং হাইওযে্ট জিনস। কী রং পছন্দ বেছে নিন। এর সঙ্গে ফ্যাশন হল স্টিলেটোস। তবে অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে অনেকের বাড়ি বাড়ি যেতে হলে স্টিলেটোস-এর বদলে পায়ে দিতে পারেন ট্রেন্ডি স্নিকার্স।

বোহেমিয়ান ফ্যাশন যদি পছন্দ হয় তাহলে সন্ধের জন্য শিমারি জাম্পসুটের সঙ্গে জ্যাকেট ম্যাচ করিয়ে পরতে পারেন। অথবা ক্রপ টপস তো থাকলই সঙ্গে পালাজো প্যান্ট, লং জ্যাকেট-এর সংযোজন মন্দ হবে না।

নতুন প্রজন্ম-কে জিনস কিনতে বেশি উদ্যোগী হতে দেখা যায়। এখন ফ্যাশনে ইন রিপড জিনস। যে-কোনও ডার্ক রঙের ডেনিমের স্লিম ফিট কিংবা বয়ফ্রেন্ড জিনস বাছতে পারেন। ট্র‌্যাকস্যুটের মতো স্ট্রাইপড জিনস এখন ভীষণ ভাবে চলছে। এর সঙ্গে মানানসই হবে সরু বেল্ট এবং যে-কোনও ডিজাইনের টপ।

টপ-এর রোজই নতুন নতুন ডিজাইন বেরোচ্ছে। তবে এখন একটু ফ্লেয়ার্স-যুক্ত ফিশ কাট টপ বেশি চলছে বডি হাগিং টপ-এর থেকে। একই সঙ্গে ইযং জেনারেশনের পছন্দ ব্যাগি টি-শার্ট। এটা গরমে যেমন আরামদায়ক হবে তেমনি ট্রেন্ডি তো বটেই। তবে আতশবাজি পোড়াবার যদি প্ল্যান থেকে থাকে তবে ঢিলেঢালা পোশাকের থেকে টাইট পোশাক পরাই শ্রেয় এবং সিনথেটিক পোশাকের বদলে সুতির পোশাক বেছে নেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।

ওয়ান পিস পোশাকও এখন হট কেকের মতো বিকোচ্ছে। ফেমিনিটি ধরে রাখতে এই পোশাকের কোনও তুলনা হয় না। টপ জিনস যাদের একঘেয়ে হয়ে উঠেছে তারা অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন এই ধরনের লং ফ্রক। তাছাড়া সুন্দর টপ-এর সঙ্গে লং স্কার্ট এবং মানানসই অ্যাকসেসরি ও জুতি পরে বোহো লুক-এ আপনি ফ্যাশনিয়েস্তা হয়ে উঠতে পারেন।

ওয়েস্টার্ন ধাঁচের পোশাক যদি আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট না হয় তাহলে এথনিক পোশাকের উপর জোর দিন।

সিম্পল ডিজাইনের লহঙ্গার সঙ্গে আকর্ষণীয় সিলভার কিংবা অক্সিডাইজ গয়নার মেলবন্ধন ঘটাতে পারেন। লম্বা ঝুলের কুর্তি এখন ফ্যাশন। কোমরে কুঁচি দেওয়া রাউন্ড শেপড কুর্তির রমরমা বাজার এখন। এর সঙ্গে ম্যাচ করে পরুন লেগিংস অথবা সিগারেট প্যান্ট। নানা ডিজাইনের বিশেষ করে কাটওয়ার্ক-এর পালাজো-ও কিন্তু এর সঙ্গে কম ফ্যাশনেবল নয়। ম্যাচিং গয়নায় হয়ে উঠুন সকলের চোখে আকর্ষণীয়।

বর্তমানে জিনস প্রায় জাতীয় পোশাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বছর এর প্রয়োজন হেলাফেলা করার নয়। কিন্তু উৎসবের কটা দিন জিনস না বেছে একটু অন্য লুক-এ নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারেন যার জন্য ছোটো ঝুলের টপ-এর সঙ্গে পালাজো বা লং স্কার্ট দারুণ মানানসই হবে।

শাড়ি ছাড়া কিন্তু বাঙালির কোনও উৎসবই সম্পূর্ণ নয়। তাঁত, সিল্ক এগুলো তো আছেই। হ্যান্ডলুম এবং খাদির শাড়ি ও পোশাক কিন্তু এখন ফ্যাশনে একদম টপ-এ জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়াও অর্গ্যানিক ফ্যাব্রিক, ভেজিটেবল ডাই করা ফ্যাব্রিক-এর সম্ভারও ক্রেতাদের নজর কাড়ছে। বিভিন্ন গাছের পাতা শাড়িতে শুকিয়ে শিল্পী প্রাকৃতিক রং এবং নকশা তৈরি করে নানাধরনের শাড়িও তৈরি করছেন, যার একেকটা একেকরকম ডিজাইনের। বিদেশে যেমন এর প্রভূত চাহিদা রয়েছে, আমাদের দেশেও এই আর্ট কালেকশন ধীরে ধীরে প্রসিদ্ধি পাচ্ছে। আজ যা সেলিব্রিটিদের ওয়ার্ডরোবে জায়গা নিচ্ছে কাল জনসাধারণ তাকেই ফ্যাশন করে তুলবে।

এসব কিছুর সঙ্গে চাই মানানসই জুয়েলারি, জুতো বা চপ্পল এবং মেক-আপ। জুয়েলারি খুব কম টাকাতেই কিনতে পারবেন শহরের যে-কোনও নামি মার্কেট থেকে কিন্তু জুতো, চটি এবং মেক-আপ ভালো মানের হওয়া একান্ত প্রয়োজন। জুতো-চটি আপনার পুরো শরীরের ভার বহন করে তাই কমফর্ট-এর কথাটা ভুললে চলবে না। আবার ত্বকের খেয়াল রেখে নামি ব্র‌্যান্ডের মেক-আপ ব্যবহার করাটাই সমীচীন হবে।

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...