ঘটনার সূত্রপাত মাস দশেক আগে। সেদিন বৈশাখ মাসের সতেরো তারিখ। দিনটা এখনও মনে আছে পালকের। বোধহয় সারাজীবন-ই মনে থেকে যাবে। মারাত্মক গরম পড়েছিল সেদিন। এর আগে এপ্রিল মাসে এত গরম পালক দেখেনি কখনও। সেদিন-ই সে মোক্ষম জবাব দিয়েছিল কেয়াকে।

প্রায় বছর দুয়ে হল এই ফ্ল্যাটে এসেছে পালক। কেয়া অবশ্য তার-ও আগে থেকেই এখানে থাকে। এই ফ্ল্যাটটার পজিশন সবচাইতে ভালো বলে দামটাও তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি-ই ছিল। দামে-দরে ঠিকঠাক পোষাচ্ছিল না বলে প্রোমোটার ফ্ল্যাটটা নিজের হাতেই রেখেছিল। নীচের তলায় ডানপাশে ফ্ল্যাট। পালকের ফ্ল্যাটটা পছন্দ হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে তার ফ্ল্যাটের সামনে পুর্বমুখী এক চিলতে ফাঁকা জায়গা। এই অঞ্চলে এরকম ফ্ল্যাট আর একটাও তার চোখে পড়েনি। তাই এক দেখাতেই পালকের পছন্দ হয়ে যায় ফ্ল্যাটটা।

পালকের হাজব্যান্ড সায়ন্তন ভোলাভালা গোবেচারা টাইপের মানুষ। বউ-এর পছন্দের ওপর ভরসা রেখে চলা পুরুষদের মধ্যে একজন। তাই ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে কোনও দ্বিমত বা দ্বিরুক্তি করার মতো কেউ না থাকায়, পালক ফ্ল্যাটটা খুব সহজেই কিনে নিতে পেরেছিল। যদিও ওদের একমাত্র সন্তান জুলির স্কুলটা এই ফ্ল্যাট থেকে একটু বেশি দূর হয়ে গেল। তা হোক সামনের এত সুন্দর জায়গাটাতে বেশ কয়েকটা টব বসানো যাবে।

ফুলে ফলে ভরে যাবে তার ঘরের সামনের জমি। একি কম আনন্দের কথা! আর তাছাড়া পালক তো হাউস ওয়াইফ। জুলিকে স্কুলে দেওয়া নেওয়া সে-ই তো করে। বাড়ি থেকে একটু আগে বেরোতে হবে এই যা। দামটা একটু বেশি দিতে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পছন্দসই জিনিসের জন্য দাম নিয়ে ভাবলে চলে না। তাই মানে মানে নিয়ে ফেলেছিল ফ্ল্যাটটা।

পালকের পাশের ফ্ল্যাটে প্রায় পালকের-ই বয়সের আর একটি বউ থাকে। সে-ই হল কেয়া। প্রথম থেকেই পালক কেয়াদের এড়িয়ে চলে। যদিও কেয়া ভীষণই মিশুকে এবং হেল্পফুল। এই তো ফ্ল্যাটে ঢোকার পরপর-ই পালকদের পুরোনো ওয়াটার পিউরিফায়ারটা কাজ করছিল না ঠিকঠাক। সেই সময় কেয়াই ওদের ঘর থেকে ফিলটার্ড জল বোতলে করে দিয়ে সমস্যা মিটিয়েছিল। তারপর যখন ফ্ল্যাটে কাজ চলছিল তখন মইটা দাও তো, এটা দাও তো সেটা দাও তো এসব তো লেগেই ছিল। কেয়া কিন্তু সবকিছুই হাসিমুখে করেছে। কখনও মনে হয়নি যে, সে বিরক্ত।

তবুও পালক ওদের এড়িয়ে চলত। কারণ, নিঃসন্তান কেয়ার ঘরে ওর পোষ্য মুনিয়া থাকত। মুনিয়া ফটফটে সাদা রঙের একটা বজ্জাত বেড়াল। কেয়াদের ঘরের দরজা খোলা পেলেই সে বেরিয়ে আসে। আর ঢুকবি তো ঢোক ঢুকে পড়ে পালকদের ঘরে। পালকের জাস্ট গা ঘিনঘিন করে বেড়াল দেখে। কুকুর ওর যদি-বা একটু সহ্য হয়, বিড়াল জাতটাকে সে মোটেই সহ্য করতে পারে না।

ফ্ল্যাট কেনার আগে পালক দুবার এসেছিল ফ্ল্যাটটা দেখতে। কিন্তু সেই সময় কেয়ার শাশুড়ি অসুস্থ থাকায় ওরা সপরিবারে মেদিনীপুর ছিল। ফ্ল্যাট কেনার আগের :  পর্যন্ত পালক জানতেই পারেনি যে, তার পাশের ফ্ল্যাটেই অমন একটা ইরিটেটিং অ্যানিম্যাল থাকবে আর যখন তখন তার ঘরে ঢুকে দুধ, মাছে মুখ লাগাবে।

এর আগে কেয়াকে বেশ কয়েকবার বলেওছে পালক, তোমার মুনিয়াকে গলায় চেন দিয়ে বেঁধে রাখো কেয়া। এভাবে আর পারা যাচ্ছে না জাস্ট।

কিন্তু কেয়া একই কথা বলেছে প্রত্যেকবারেই, পালক, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড প্লিজ। ওরা জাতে বিড়াল হলেও আসলে মানুষের-ই মতো। তোমার গলায় যদি সারাক্ষণ দড়ি বেঁধে রাখা হয়, ভালো লাগবে তোমার?

কী কথার কী উত্তর! একটা বিড়ালের সঙ্গে মানুষের তুলনা! জাস্ট ডিসগাস্টিং। সেই বাদানুবাদের ঠিক দশ দিনের মাথায় দুই কেজি মাছ সবে ধুয়ে রেখেছে পালক। সায়ন্তন রোজ বাজারে যেতে পারে না বলে যেদিন-ই মাছ আনে বেশি করেই আনে। যেন দু-তিনদিন ফ্রিজে রেখে চালিয়ে নেওয়া যায়।

পালক ফ্রিজের পাশে মাছের গামলা রেখে কিচেনে ঢুকেছে, তিনটে বাটিতে তিন দিনের জন্য মাছ আলাদা আলাদা করে ফ্রিজে ঢোকাবে বলে। সে সময় কেন জানি না জুলি কি একটা কারণে দরজাটা খুলে রেখেছিল। ঠিক সেই সময় কেয়াদের বিড়াল মুনিয়া গ্রিলের ফাঁক দিয়ে পালকের রান্নাঘরে ঢুকেই বসে পড়ল মাছ খেতে। যেন মাছগুলো ওর জন্যেই গামলায় যত্ন করে সাজিয়ে রেখে দিয়েছে পালক। ব্যস। পালক দেখেই জোরে চিত্কার করে উঠল। পুরো দু-কেজি মাছ ফেলে দিতে হয় সেই দিন।

জুলির পছন্দের পাবদা আর ভেটকি মাছ ফেলে দিতে পালকের বুক ফেটে যাচ্ছিল। বারো-তেরোশো টাকার মাছ জুলিকে না খাইয়ে নিজেরা না খেয়ে এভাবে ফেলে দিতে মন চায় কারও! সায়ন্তন তবু মিনমিন করে বলেছিল বটে, যেদিক থেকে মুনিয়া খেয়েছে সেদিক থেকে ফেলে দিয়ে বাদবাকিটা নেওয়া যায় না পালক! কিন্তু না। বিড়ালের মুখের জিনিস খেয়ে অন্য কোনও বড়ো অসুখ বাধাবে! পালক কি পাগল হয়েছে নাকি!

তারপর থেকেই ভেতরে ভেতরে ফুটছে পালক। মুনিয়ার একটা চরম এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু সেটা ঠিক কী এবং কীভাবে করবে তা সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না। তারপরেই তনয়াকে ফোন করে বেশ কিছুক্ষণ জরুরি আলোচনা সেরে নেয় সে।

তনয়া হচ্ছে পালকের সেই ছোটোবেলার স্কুল ফ্রেন্ড। মনের গঠনগত দিক থেকে দুজনেই প্রায় একই রকম। দুজনেই ভীষণ ভাবে ঘেন্না করে এই বিড়াল জাতটাকে। দুজনেই ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেছে। দুজনের-ই প্রিয় রং ম্যাজেন্টা। দুজনেই বাগান করতে ভালোবাসে। এরকম আরও কত কী! তনয়ার মাথা থেকেই আইডিয়াটা বের হয়। ব্যস। তারপর আর কি! দেখেশুনে একটা দিন ঠিক করল পালক।

পরের সপ্তাহে মঙ্গলবার সায়ন্তন অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পরে জুলিকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে জিনিসটা কিনে নিয়ে ফিরল পালক। তারপর একটা বাটিতে মাছ আর একটা বাটিতে দুধ রেখে তার মধ্যে বিষটা বেশ যত্ন করে মাখিয়ে দিল সে। শত হলেও শেষ খাওয়া খাবে মুনিয়া। একটু ভালো করে দেওয়াই ভালো। এরপর সে গ্রিলটা টেনে দিয়ে দরজাটা খুলে রেখে ফ্রিজের পাশে বাটি দুটো সাজিয়ে রেখে আরাম করে স্নান করতে লাগল।

ওয়াশরুমের দরজা ফাঁক করে একবার দেখে নিল পালক। হ্যাঁ। প্ল্যান মতোই সবকিছু এগোচ্ছে। মুনিয়া আরাম করে দুধের বাটিতে চুমুক দিচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ পর পালক বেরিয়ে দেখল দুটো বাটিই সাফ করে মুনিয়া পালিয়ে গেছে। যাক বাবা! এতদিন পর একটা কাজের কাজ করেছে পালক। এরকম একটা কিছুর ভীষণ-ই দরকার ছিল। সবকিছুর-ই একটা সীমা থাকা উচিত। একেই তো বিড়ালের পশমকে দারুণ ভয় পায় পালক, তার ওপর আবার যখন তখন ঘরে ঢুকে খাবারে মুখ দিয়ে দেওয়া। উফ! অসহ্য!

দুপুর পর্যন্ত মুনিয়ার আর কোনও সাড়াশব্দ পায়নি পালক। একবার উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সেরকম কিছুই বুঝতে পারেনি সে। জুলিকে আনতে যেতে হবে। হাতে এই মুহূর্তে প্রচুর কাজ পালকের। রান্না করতে করতে একরকম ভুলেই গেছিল মুনিয়ার কথা, ঠিক সেই সময় কলিং বেলটা সশব্দে বেজে উঠল। কে এল! কেয়া নাকি! ও কিছু সন্দেহ করছে না তো!

দু-বার ঢোঁক গিলে পালক দরজা খুলল। সাথে সাথেই কেয়া চিত্কার করে বলল, কী করে এরকম একটা নোংরা কাজ করতে পারলে পালক! আমার মুনিয়া প্রেগন্যান্ট ছিল। এই অবস্থায় নিজে একজন মা হয়ে আরেকটা মাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে একটুও হাত কাঁপল না তোমার! ছিঃ।

—বিষ! এসব তুমি কী বলছ কেয়া! না বোঝার ভান করল পালক।

—ন্যাকামো না করে তোমার বাগানে গিয়ে দেখে আসো মুনিয়ার কী অবস্থা!

বাগানের নাম শুনেই এক লাফে সিঁড়ির প্যাসেজ পার হয়ে মেন গেটের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল পালক। বেরিয়ে ডান হাতে তার বাগান। বাগানের বেশিরভাগ-ই সব ছোটো ছোটো টব। তাতে কোনটা তুলসী, কোনটাতে ধনেপাতা, আবার কোনওটাতে গোলাপ। একটাই শুধু বড়ো গামলার মতো টব। গামলায় একটা বনসাই আম গাছ। গাছটা বেশ সুন্দর ডালপালা ছড়িয়েছে। এই গরমে মাঝে মাঝেই মুনিয়া আম গাছটার তলায় এসে বসে থাকে। এখনও যেমন শুয়ে আছে। তবে এই শোয়ার সঙ্গে আগের শোয়ার বেশ পার্থক্য রয়েছে, সেটা ভালো মতোই বুঝতে পারল পালক। মুখে সেসব কিছুই প্রকাশ না করে পালক বলল, ও মা! মুনিয়া এভাবে শুয়ে আছে কেন!

—এই প্রশ্নটাই আমি তোমাকে করতে চাই পালক। মুনিয়া একটা ছোট্ট প্রাণী তার ওপর সে মা হতে চলেছিল। তাকে এভাবে খুন করলে কেন পালক?

তার মধ্যেই পালক দেখে নিয়েছে মুনিয়ার মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরিয়ে জিভ বের করে সে ঠিক আমগাছের গোড়ায় পড়ে রয়েছে।

—উফ! দুনিয়ায় এত জায়গা থাকতে এখানে এসেই মরতে হল! মরেও শান্তি দেবে না দেখছি মুনিয়া!

মুনিয়াকে বুকের মধ্যে নিয়ে কেয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল, এই গর্ভবতী মাকে মারার শাস্তি ভগবান তোমায় দেবে না ভেবেছ! এর শাস্তি তুমি পাবেই পালক। আমার মুনিয়া এত বড়ো অন্যায় কিছুতেই সহ্য করবে না। তুমি মিলিয়ে নিও।

পালক এরকম অভিশাপ শুনে একটু থমকে গেছিল প্রথমে। কেয়ার কান্না দেখেও বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে পালকের। কেয়া মুনিয়াকেই যে তার নিজের সন্তান ভাবত তা সে মরমে মরমে বুঝতে পারছে। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে পালক দেখল আম গাছটাও গর্ভবতী। ডালে ডালে মুকুল এসেছে। কদিন বাদেই ফল ধরবে। কিন্তু না। ফল ধরার আগেই বিনা নোটিশে গাছটা মরে গেল। কিছুদিন ধরেই গাছের গোড়ায় জল দিলেও জল শুষে নিচ্ছিল না আমগাছটা। তার দিন কয়েক পরে মুকুলগুলোও হলুদ হয়ে ঝরে পড়তে লাগল।

পালকের মনে কু ডাকতে লাগল। তাহলে মুনিয়ার আত্মা-ই কি গাছটাকে মেরে ফেলল! ভগবান কি এভাবেই শাস্তি দিল পালককে! এরপর আম গাছের জায়গায় খুব ভালো জাতের একটা বনসাই বাতাবি লেবুর গাছ লাগাল পালক। রোজ পালকের হাতের পরিচর‌্যা পেয়ে গাছটা বাড়তে লাগল দ্রুত। কিছুদিন পরে ফুল ধরল তাতে। ততদিনে পালকও বুঝতে পেরে গেছে ওসব আত্মা-টাত্মা পুরো ফালতু ব্যাপার।

তনয়াও এই ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছে পালককে। নিজের হাতে লাগানো গাছের বাতাবি লেবু জুলি খাবে। এটা ভেবেই খুব ভালো লাগছে পালকের। কিন্তু সেসব কিছুই ঘটল না। বরং ঘটল ঠিক তার উলটোটা। ফুল আসার কদিন পর থেকেই গাছটা শুকোতে আরম্ভ করল। এবার সত্যি সত্যি ভেতরে ভেতরে ভীষণ রকম ভয় পেতে শুরু করেছে পালক।

আম গাছটা না হয় এমনিই মরে গেছিল। কিন্তু বাতাবি লেবুগাছ! সেটা কোন কারণে মারা গেল! গাছগুলোর যদি মরার-ই ইচ্ছে হয় তাহলে আগে বা পরে নয় কেন! ঠিক মুকুল এলেই গাছগুলো মরে যায় কেন! এবারে আর কোনও বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিকেও মানতে নারাজ পালক। তনয়ার নানারকম যুক্তি শুনতে ইচ্ছে করে না তার। তার মনের মধ্যে ভয়, দুশ্চিন্তা ক্রমশই দানা বাঁধতে শুরু করেছে। আজ অনেক দিন যাবত ঘুমাতে পারছে না পালক। কখনও যদি বা একটু ঘুমিয়ে পড়ে তাহলেই স্বপ্নের মধ্যে মুনিয়াকে দেখতে পায় সে।

মুনিয়া যেন মিহি সুরে বলছে, আমার বাচ্চাদের মেরেছিস কেন পালক! আমাকেই বা মারলি কেন পালক!

যখন তখন ডুকরে কেঁদে ওঠে পালক। দুই চোখের তলায় জমাটবাঁধা কালি। পেলব মসৃণ ত্বক জৌলুস হারিয়ে কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। শরীর ভেঙে আধখানা হয়ে গেছে। সায়ন্তন কোনও কিছুই বুঝতে না পেরে পাড়ার নার্সারি থেকে আবার একটা বনসাই আম গাছ এনে ফাঁকা টবে লাগিয়ে দিয়েছে।

পালক আর কাউকে সহ্য করতে পারছে না। সায়ন্তনকে না। জুলিকে না। কাউকে না। বহু রাত সে ঘুমোতে পারছে না ঠিকমতো। ঘুম এলেও একটু পরেই ভেঙে যায়। বারেবারে মুনিয়ার মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। কেয়ার দেওয়া অভিশাপ সবসময়-ই যেন শুনতে পায় সে। তবে কি পালক পাগল হয়ে যাচ্ছে!

সকালে উঠতেই সায়ন্তন পালকের হাতটা ধরে বলল, পালক, আমগাছে মুকুল এসেছে। এবার আর কিছুই হবে না। এবারে তোমার গাছে আম ধরবে দেখো!

মুকুল ধরেছে! আবার মুকুল ধরেছে! উফ! আবারও আসবে মুনিয়া। এই গাছটাকেও বাঁচতে দেবে না ও। কিছুতেই বাঁচতে দেবে না মুনিয়া।

পাশের কোনও একটা ফ্ল্যাট থেকে রাত দুটোর ঘন্টা বাজল। ঘুম আসছে না পালকের। এভাবে শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না। বরং ওয়াশরুমে গিয়ে একটু মুখে জল দিয়ে আসি। ভাবতে ভাবতেই খুব আস্তে করে শোবার ঘরের দরজা খুলল পালক। নাহ! জুলিদের ঘুম ভাঙেনি। ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে বারান্দার দিকে চোখ পড়ে গেল হঠাত্। আমগাছটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমগাছের পাশে ওটা কে দাঁড়িয়েছিল মনে হল! বসে পড়ল নাকি! আর দেখা যাচ্ছে না তো! পা টিপে টিপে বারান্দার কাছে এসে দেখল, কেকা একটা মগে একটা নুনের প্যাকেট থেকে নুন ঢেলে জলে গুলছে আর আম গাছের গোড়ায় ঢেলে দিচ্ছে।

ওহ মাই গড! গাছে মুকুল এলেই গাছগুলো তাহলে এভাবেই মরে যায়! হায় রে কেয়া! পালক প্রেগন্যান্ট মুনিয়াকে মেরেছে বলে তুমি আমার ফলবতী গাছগুলোকে এভাবে মেরে ফেলছ! মুনিয়ার মতো যে গাছগুলিও নিষ্পাপ গো কেয়া! আমি তো মহাপাপ করেছিলাম কেয়া। সেটা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছি। কত বড়ো ভুল আর অন্যায় যে সেদিন করেছিলাম এক গর্ভবতী মাকে খুন করে, সেটা ভেবে জ্বলে পুড়ে মরছি আমি। সেই একই ভুল তুমিও করলে কেয়া! ভুল দিয়ে ভুলকে কি উপড়ে ফেলা যায় কেয়া!

আজ বহু দিন পর ভীষণ ঘুম পাচ্ছে পালকের। আজ থেকে আবার ঘুমোবে সে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...