আলোর উৎসব সমস্ত মলিনতা দূর করে আমাদের জীবনে শুভবোধের সঞ্চার করে। তাই ঘরের অপরিচ্ছন্নতা, ম্লান লুক বদলে ফেললে একটা ফিল গুড অনুভূতি তৈরি হয়। Diwali শেষ হলেই হুড়মুড়িয়ে শীত এসে পড়বে, আর তার পরই আগমন হবে নতুন বছরের। তাই এই সময়টাই ঘরের অন্দরসজ্জায় বদল আনার জন্য আদর্শ। Home decoration বিষয়ে রইল আমাদের পরামর্শ।
কালার্স: রং আপনার অন্দরসজ্জায় একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গরমের দিনে যেমন হালকা রং চোখকে আরাম দেয়, তেমন শীতে ভালো লাগে ভারী, উজ্জ্বল রং। ঘরের পেইন্ট বারবার করা সম্ভব নয় কিন্তু ঘরের অন্যান্য আসবাবে তো রং বদল ঘটানোই যায়। পর্দায়, কুশন প্রভৃতিতে তাই গাঢ় রং ব্যবহার করুন। ওয়ার্ম কালার্স ঘরে একটা উষ্ণতার অনুভূতি নিয়ে আসবে। তাই সোফা, চেয়ারের কভার, বিছানার চাদর, মেঝেতে বিছিয়ে রাখা দরি সবেতেই আনুন ওয়ার্ম কালার্স-এর ছোঁয়া। একই ধরনের শেড ব্যবহার না করে, প্রিন্ট আর রঙের বিন্যাসে বিভিন্নতা আনুন, অচিরেই Festival special home decoration আমেজ এসে যাবে।
লেয়ারিং: শীতে যেভাবে আমরা শরীরের পোশাকের ক্ষেত্রে লেয়ারিং করি, আপনার ইন্টিরিয়র-এও তা করা সম্ভব। আর এই প্রস্তুতি নিন দীপাবলি থেকেই। শীত পড়ার আগেই, কুইলটস, ব্ল্যাংকেটস, ভারী চাদর কিনে ফেলুন। বিছানায় চাদর পাতার সময়, দুটি আলাদা রঙের চাদর অর্ধেক করে বিছিয়ে লেয়ার তৈরি করুন। পিলো কভার ও কুশন কভারে কনট্রাস্ট শেড রাখুন। দরি এবং ম্যাট্রেস-এও এমন ভাবে লেয়ারিং করুন, যাতে দুটি রং-ই আলাদা ভাবে দেখা যায়।
আপনার যদি ফ্লোরে সিটিং-এর ব্যবস্থা থাকে, তাহলে গদির উপর ভেলভেট-এর চাদর আর সুতির চাদর দিয়ে দু-রঙা লেয়ার করুন। পিলো আর কুশনের সংখ্যা বাড়িয়ে দিন। এতে রং আর ডিজাইন-এর বৈচিত্রের পাশাপাশি, টেক্সচারেও একটা বৈচিত্র আসবে। চাদর আর কার্পেট কেনার সময় অবশ্যই দেয়ালের কালার টোনস-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখুন।
লাইটিং: দীপাবলির প্রসঙ্গ উঠলেই অচিরে আলোকসজ্জার বিষয়টিরও উত্থাপন হয়। ঘরের আলো বদলানোর এটাই আদর্শ সময়। ঘরে টাস্ক আর অ্যাকসেন্ট দু’ধরনের লাইটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট রাখতে পারেন। এছাড়া ফ্লোর আর ওয়াল লাইটিং-ও ঘরে একটা উষ্ণতার আমেজ আনবে। ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব-এর পরিবর্তে, টাংস্টেন বাল্ব ব্যবহার করুন, এতে ঘরে একটা ওয়ার্ম লুক আসবে।
পর্দা: ঘরের পর্দা লাগানোর সময়, হালকা ও ভারী দুটি লেয়ারে লাগান। এতে দিনেরবেলা সূর্যের আভা ঘরে ঢুকবে। যখন ঘরে ছায়াভাব চান, ভারী পর্দা টেনে দিতে পারবেন। সিটিং এরিয়াতে একটা কফিটেবল রাখুন, ২-৩টি চেয়ার। কর্নারে বড়ো মোমবাতি। লাইটস্ট্যান্ড ক্যান্ডেলেস বা ফ্র্যাগরান্ট স্টিকস দিলে বেশ একটা রোমান্টিক আমেজ আসবে।
উইন্ডোসিট: শীতের রোদ অনেকেরই অসম্ভব প্রিয়। তাই বারান্দায় টব সাজিয়ে একটা সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে পারেন। যাদের বারান্দা নেই কিন্তু এই বিলাসিতা করতে চান, তারা পুবের জানলার উইন্ডো পেন চওড়া করে নিন। ওখানে বসার ব্যবস্থা করুন। বই পড়া, কফি খাওয়া, বা গান শোনার জন্য এই জানলাটিই আপনার অতি প্রিয় জায়গা হয়ে উঠবে।
কিচেন: মডার্ন ফ্ল্যাটগুলিতে, কিচেন ডেকরেশনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। আজকাল ওয়ার্কটপ এবং ইউনিটগুলিতে একইরকম কালার স্কিম রাখা হয় না। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ-ই ট্রেন্ডিং। কনট্রাস্ট টেক্সচারের উপর জোর দিচ্ছেন ইন্টিরিয়র ডিজাইনাররা। আপনার কিচেন যদি রিমডেলিং করাতে পারেন, তাহলে উৎসবের আগেই তা করিয়ে নিন। স্লিক ওয়ার্কটপ, ডার্ক ক্যাবিনেটরিজ এবং ক্লিন মার্বেল ও ফ্ল্যাশব্যাক-ই এই সময়ে ক্রেজ।
গার্ডেনিং: শীত আসছে। তাই আপনার সাধের বাগান আগে থেকেই সংস্কার করিয়ে রাখুন। ঘরেও যদি কিছু সিজন ফ্লাওয়ারের পট রাখেন উৎসবের আমেজে ভরে উঠবে। রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিয়োলাই, আপনার সিটিং এরিয়াতে একটা আলাদা টাচ এনে দেবে। সঙ্গে সুগন্ধের আবেশ। আপনার আলাদা করে যদি বাগান করার জায়গা না থাকে, জানলা বা বারান্দাতেও টব ঝোলাতে পারেন। পাত্রগুলি যদি মাটির হয়, এগুলি নিজেই পেইন্ট করুন। কড়ি এবং ঝিনুক দিয়ে সাজিয়ে দিন। ঘরের মধ্যে এরকম বাহারি পট রাখলে ঘরের লুকটাই বদলে যাবে। পাতাবাহার বা অন্য ইন্ডোর প্ল্যান্টস-ও রাখতে পারেন। ঘরের ভেতরটা কোজি হয়ে উঠবে। যাদের ফুলের পরাগে অ্যালার্জি হয়, তারা বড়ো টেরাকোটা পটে আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার্স রাখতে পারেন। এটাও ঘরের সাজে আলাদা মাত্রা যোগ করবে।
জরুরি পরামর্শ
- আপনার ঘরের সৌন্দর্য ও রুচির ছাপ বহন করে ঘরের আসবাবগুলি। ফার্নিচার খুব দামি হতে হবে, এমন কথা নেই। বাজারে এমন ফার্নিচার পাওয়া যায় যা আপনি অ্যাফোর্ড করতে পারবেন। শুধু কেনার আগে মাথায় রাখুন, এই আসবাব যেন দেখতে আকষর্ণীয় হয় এবং ঘরের বাকি সাজসজ্জার সঙ্গে যেন মানানসই হয়। সিম্পল অ্যান্ড কমফর্টেবল এটাই হওয়া উচিত আপনার লক্ষ্য। আপনার পারপাস সার্ভ করবে এবং একাধিক কাজে আপনি এই আসবাব ব্যবহার করবেন, এই বিষয়টি মনে রেখে ফার্নিচার কিনুন।
- অনেকসময় আসবাবের জায়গা অদলবদল করলেও ঘরে একটা আলাদা লুক আসে। তাই উৎসবের আগে ফার্নিচারগুলির অ্যারেঞ্জমেন্ট বদলে দিন। যদি সেগুলোকে রং করানোর প্রয়োজন হয়, করিয়ে নিন।
- বাতিল করার মতো জিনিস অযথা জমিয়ে রাখবেন না। এগুলি অনর্থক জায়গা জুড়ে থাকে আর ঘরের লুকটাও নষ্ট করে দেয়। তাই ভাঙা অকেজো জিনিস বিদায় করুন।
- চেয়ারের চাকাগুলি বদলান। উৎসবের দিনে এই ছোট্ট পরিবর্তনটাও ঘরে একটা নতুন টাচ আনবে। নিজের পুরোনো সিল্কের শাড়ি দিয়ে কভার বানিয়ে বা এমব্রয়ডারি করেও এই চেয়ারগুলির হাল ফেরাতে পারেন।
- ঘর যত ব্রাইট আর আরামদায়ক রাখবেন, ততবেশি তা বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। রান্নাঘর আর বাথরুমের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। রান্নাঘরের তাকের পুরোনো কৌটো বিদায় করে সুন্দর সুন্দর জার আর বয়াম কিনুন। বাথরুমে প্ল্যান্টস রাখুন। বেসিন, কোমোড পরিচ্ছন্ন রাখুন।