আপনি কে বলছেন? ওর কোচিং ক্লাসে… কস্তুরীর কথাটা শেষ হবার আগেই

অ্যাই স্বাগতা…। ফোনের ওপার থেকে একটা গলার আওয়াজ পায়। কে বলল কথাটা? ও? কাকে ডাকল? ইনি তাহলে ওর মা নন? স্বাগতা…? নামটা খুব খুব চেনা লাগছে কস্তুরীর। খুব চেনা। কোথায় যেন শুনেছে কিন্তু মনে পড়ছে না। হ্যাঁ তাই তো চেনে! মনে পড়ে গেছে। ওর ভাইতো এর নামই সেদিন বলেছিল? আর বলেছিল…।

রিনরিনে একটা ব্যথা চাগাড় দিয়ে ওঠে। তাহলে কী…? উফঃ মারাত্মক সেই রাতের স্বপ্ন যন্ত্রণাটা শুধু পিঠে বিঁধে থাকে না কিলবিল করে সম্পূর্ণ শরীরী অস্তিত্ব হয়ে কস্তুরীর শরীরময় কাঁটা বেঁধাতে থাকে বাস্তবে। কস্তুরী হাত দিয়ে চামড়ার ওপর থেকে বুঝতে পারে ওর সমস্ত শিরা-উপশিরাকে দলা পাকিয়ে মুচড়ে ফেলছে কাঁটাটা।

স্বাগতা ওদের বাড়িতে আসে? বাড়ির ফোন রিসিভ করে? রিসিভারটা সঙ্গে সঙ্গে নামিয়ে রাখে কস্তুরী। মনের কোণার রংমাখা পালকগুলো কখন যেন দমকা হাওয়ায় পথ ভুলে এলোমেলো উড়ে যায়।

( ৮ )

মনের দিক থেকে এতটাই এলোমেলো ছিল কস্তুরী, পড়াশুনায় তেমন করে মন দিয়ে উঠতে পারেনি। মাধ্যমিক পরীক্ষায় যথারীতি সেকেন্ড ডিভিশন। যা হওয়ার হলও তাই। বাপি মায়ের দিক থেকে তেমন করে ওকে ভবিষ্যতে পড়ানোর গরজ চোখে পড়ছিল না। এত তাড়াতাড়ি সবকিছু থেমে যাবে? নিজের স্কুলেই ইলেভেন-এর ফর্ম তুলে কোনওমতে ভর্তি হয়ে যায়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, যে করেই হোক দিদির মতো আকাশছোঁয়া রেজাল্ট না হলেও থেমে থাকা যাবে না। একটা কিছু করতেই হবে। সবাই কি আকাশের তারা হতে পারে?

পাড়ায় আশেপাশে দুচারটে টিউশনি শুরু করে। হাতখরচা আর স্যারের পড়ানোর টাকাটা মোটামুটি উঠে আসে। তবে টিউশনির ব্যাপারটা এগিয়েছিল ধীমান স্যারের জন্য। স্যারের কাছে ও পলিটিক্যাল সাযে্স আর ইতিহাসটা দেখে বুঝে আসত। একেবারে কচিকাঁচাগুলোকে কিছুতেই সামলে উঠতে না পারায় স্যার একদিন বলেছিলেন, কস্তুরী মাঝেমধ্যে ওদের একটু দেখিয়ে দিও না। এতে তোমার পড়ার কোনও ক্ষতি হবে না। বরং চর্চা আরও বাড়বে। শুধু বাবা-মাকে একটু জানিয়ে নিও।

বাপি-মাকে জানানোর আগে ও নিজেই নব্বই শতাংশ ঠিক করে নিয়েছিল পড়াতেই হবে। ফাইভ-সিক্সের গোটা দশেক ছাত্র-ছাত্রী। স্যার বলেছিলেন, ওদের পেছনে বেশি খাটতেও হবে না। পাশটা করিয়ে দিলেই ওদের বাড়ির লোক নিশ্চিন্ত। এমনই যে-কয়েক ঘর থেকে ওরা আসত তাদের কাছে নম্বর নয়, পাশ-টাই বড়ো সাকসেস।

ধীমান স্যারের কোচিংটা ছিল বেশ জমজমাট। মানে এ এক হরেক মেলার আসর। ক্লাস ওয়ান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত। ওদিকে কলেজের থার্ড ইয়ার অবধি ঝেড়েপুঁছে সবাই আসে। স্যারের মাইনেটাও কম, গাইডেন্সটাও খুব একটা যে খারাপ তা নয়, তাই…।

কস্তুরীকে সপ্তাহে দুটো দিন সকালের দিকে এসে বাচ্চাগুলোকে দেখে দিয়ে যেতে হতো। ওই সময়টায় বাচ্চাগুলো ছাড়া একটাই ক্লাস হতো, কলেজের ইংলিশ অনার্সের। প্রথম প্রথম দুএকজন থাকলেও কয়েক মাস পর কলেজের ক্লাসটার স্টুডেন্ট হয়ে গেছিল প্রায় কুড়িজন মতো। একতলায় পাশাপাশি দুটো ঘরে ক্লাস চলত জোরকদমে। বড়োদের হই-হুল্লোড়ে অসুবিধা হলে, মাঝেমধ্যে ছাত্র-ছাত্রী পাঠিয়ে বারণ করলেও কাজ হতো না অধিকাংশ দিন। ইংলিশ স্যারটা তো বেজায় বেয়াদপ। সে পড়া নয় আড্ডাটাই বেশি চালাতে ভালোবাসে।

কম বয়সি স্যার, আড়ালে হিরো হিরো বলে ডাকত ছাত্র-ছাত্রীরা। আর ছাত্রীরা তো এককথায় ফিদা। পুরো ব্যাপারটা খোলতাই হয় সেদিন ধীমান স্যারের কথায়, ও বুম্বা? হ্যাঁ ও তো আমার কাছে সেই ছোটো থেকে পড়ছে। পড়াশোনায় মাথা আছে কিন্তু ওই টিভি সিরিয়াল নাটক নাটক করেই সময় কাটাল। কতবার বললাম অভিনয়টা ছেড়ে এমএ করে নে। তা শুনল আমার কথা? ক’পয়সা আর ইনকাম হয় ওতে?

উনি অভিনয় করেন? অবাক হয়ে স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে কস্তুরী!

সেকী তুমি জানো না? ওকে চেনে না এমন লোক এই পাড়ায় কমই আছে বলতে পারো। ছোটোবেলায় অনেকগুলো সিনেমা করেছে। এখন ওই টুকটাক। তুমি আর কতটা জানো। তোমার বাবা জানবে জিজ্ঞেস কোরো।

হতে পারে…।

ঠিক আছে আমি বুম্বাকে ডেকে বলে দেব। তোমার ক্লাস থাকলে একটু বুঝেশুনে পড়াতে। ছোঁড়াটা বড্ড বেশি কথা বলে…

ক্রমশ…

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...