পায়েলের বিয়ে হয়ে গেছিল। কিন্তু বাড়ির পরিবেশ যে কে সেই। দিদির কথাতেই চলছিল ওর জীবনের প্রতিটা বাঁক। এর থেকে রেহাই নেই, নিস্তার নেই। এর মাঝে একদিন স্কুলেও চলে গিয়েছিল পায়েল। কস্তুরীর স্কুলের বড়দির সঙ্গে কথাও বলে এসেছে ওকে না জানিয়ে স্বাভাবিক ভাবে কোনওরকম ইতিবাচক উত্তর পায়নি। বিশেষ করে ক্লাসের ইংরেজির টেস্টগুলোর নাম্বার বেশ নীচের দিকে হওয়ায় ওই বিষয়ে বিশেষ করে নজর দিতে বলেছেন উনি। সেইদিনই বাড়িতে এসে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধায় পায়েল। হয়তো বড়দির কথাতে আরও কয়েক দাগ রং চড়িয়ে মশলা দিয়ে বলে। জোর করে পড়াতে পাঠাতে চায় নিজের বরের কাছে।

বলে, আমার কাছে পড়তে আসলে বাবু চোখে চোখে থাকবে। বিশেষ এদিক ওদিক করতে পারবে না। ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল কারণ ওর দিদির বাড়িতে পড়তে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না ও। জামাইবাবু…। আর কোনও উপায় ছিল না তখন। কোনও কথা না ভেবে স্যারের কথাতেই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা মানে বুম্বা স্যারের কাছে পড়া নিয়ে কোনও কথা কস্তুরী বাড়িতে বললে কোনওমতেই বাড়ি থেকে রাজি হবে না।

এক বাড়তি টাকা খরচ, দুই পায়েলেরও নিশ্চয়ই মত থাকবে না কারণ ও জানে দিদি মুখে যাই বলুক মনে মনে কখনওই চায় না ওর রেজাল্ট আশানুরূপ হোক। তাই এক ছুটির দিনে বাজার করার সময় স্যারকে বলে বাপির কাছে কথাটা পাড়ে। স্যার বললে নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে না করার আর কোনও প্রশ্ন আসে না। যেহেতু কস্তুরী বাকি বিষয়গুলো ওনার কাছে কম খরচেই পড়ে।

বাপিরও ভয় ছিল হয়তো কোনও কারণে ওর পড়া যদি ছেড়ে যায় প্রভাস স্যারের কোচিং থেকে, তবে বাইরের কোনও বেশি ফিজ-এর স্যারের কাছে না ভর্তি করতে হয়।

প্রায় কয়েকদিন পর একরকম জোর করেই দিদির কথার অবাধ্য হয়েছিল কস্তুরী। পরের দিকে বাপিও তেমন একটা না করেনি। ভেতর থেকে মনকে শক্ত করছিল, এবারে নিশ্চয়ই ও পারবে। পারতে ওকে হবেই। স্কুলটা পেরিয়ে গেলেই কলেজ। তারপর ঠিক একটা চাকরি…।

ছোটোবেলায় মামাবাড়িতে কোনও এক জ্যোতিষী কস্তুরীর হাত দেখে বলেছিল, ঠিক ৩৪-৩৫বছর বয়সে তোমার জীবনে খুব ভালো সময় আসবে। তুমি মাথা তুলে দাঁড়াবে।

কথাগুলো আর-পাঁচজনের কাছে ছেলেখেলা হাসির মনে হলেও, কোনও অজ্ঞাত কারণে মনে মনে কস্তুরী যেন ওই সময়টার অপেক্ষায় থেকে গেছে। মনকে দুর্দান্ত ঝড়ের সময়ে সান্ত্বনা দিয়েছে, একসময় ঠিক সব কালো হটে যাবে। প্রতিবছর জন্মদিন এলে মনে মনে গুনছে চৌত্রিশ বছর আর ঠিক কতদিন বাকি?

কিন্তু কস্তুরী তখনও জানত না, এই ভালো সময়টায় পৌঁছোতে গেলে ওকে আর কতগুলো কাঁটা মাড়াতে হবে? ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত শরীরে ও আদপেই কি ওই সময়ে পৌঁছোতে পারবে? আদৌ কি ওই সময়টা কোনওদিন আসবে? দিন একটা এসেছিল। তবে কস্তুরী যেমনটা চাইত তেমন করে নয়। একটু অন্য ভাবে।

বুম্বা স্যারের কাছে পড়তে রাজি হলেও যথেষ্ট বুঝেশুনে পা ফেলছিল ও। ছেলেটার তাকানো, কাছে এসে কথা বলার ভঙ্গিতে কেমন একটা গা রি রি করত। এতগুলো ছাত্রের মাঝে পড়ানোটায় মন দেওয়া যাবে না বলে যখন ওকে বলেছিল, তুমি আমাদের বাড়ি গিয়ে পড়ো। এখানে

ক্যালোর-ব্যালোরের মধ্যে ঠিক পড়াতে পারছি না। আর আমার সবকটা ছাত্র-ছাত্রী কলেজের। একমাত্র তুমি নীচু ক্লাস। তোমারও তো অসুবিধা হচ্ছে নিশ্চয়ই?

না আমি এখানেই কমফর্টেবল। গলায় জোর এনে বলেছিল কস্তুরী।

সামনাসামনি না তাকালেও, ও বুঝেছিল ছেলেটা চোখ সরু করে ওর দিকে তাকিয়েছিল। হয়তো মনে মনে এও বলছিল, আচ্ছা এতদূর…?

হাজার হলেও একটা বিষয়ে নিশ্চিন্ত ছিল, এটা স্যারের বাড়ি এখানে তেমন করে কোনও বিপদ আসতে পারে না। তাই দিদির বাড়ির তুলনায় এটা অনেকটাই নিরাপদ। কিন্তু বিপদ কি বলেকয়েক জাল বোনে? সে তো পথের যে-কোনও বাঁকেই তার ওৎ পেতে রাখে। অপেক্ষা শুধু উপযুক্ত সময়ে তাতে পা দেওয়া।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...