শ্রুতির বরাবরের জেদ, সে হায়ার স্টাডিজ Hostel থেকেই করবে। কিন্তু ওর মা তার এই ইচ্ছেয় একেবারেই সহমত ছিলেন না। মেয়ের রাত করে শোওয়ার অভ্যাস, জামাকাপড় ছেড়ে বাথরুমে ফেলে রাখা, খাবার নিয়ে রোজের অশান্তি এসব শ্রুতির মা সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু শ্রতি-কে কিছু বলতে গেলেই ওর সেই এক কথা, ঘাড়ে এসে পড়লে সবই শিখে যাব। শ্রুতির একটাও কথা ওর মায়ের বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো না।

একবার শ্রুতির এক বন্ধু মিতালি শ্রুতির সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসে। শ্রুতির মা চায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে মিতালি বলে, কাকিমা, আপনি বসুন আমি চা করে নিয়ে আসছি। শ্রুতি শুধু দেখিয়ে দিক কোথায় কী আছে।

শ্রুতির মা আশ্চর্য হয়ে যান। মিতালি দ্রুত তিন কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসে। শ্রুতির মা মুখে কিছু বলেন না, শুধু শ্রুতির দিকে তির্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চুপ করে চা খেতে থাকেন।

—তুই এসব করা আবার কবে শিখলি? আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে শ্রুতি।

—আরে পরের মাসেই তো মুম্বই যাচ্ছি। ওখানকার কলেজে ইকোনমিক্স-এ চান্স পেয়েছি, Hostel-ও ঠিক হয়ে গেছে। সুতরাং মায়ের কাছে শিখে নিচ্ছি সব, যাতে অচেনা শহরে গিয়ে মুশকিলে না পড়তে হয়। জানিসই তো গতবছর পুণায় গিয়ে পিয়ালের কী হাল হয়েছিল, মিতালি বলে।

শ্রুতির মা কী হয়েছিল জানতে চাইলে মিতালি আবার বলে, মাসিমা, পুণার হোস্টেলের খাবার পছন্দ না হওয়াতে ও পিজিতে চলে যায়। কিন্তু সেখানেও ওর খাবার পছন্দ হয় না। হবেই বা কী করে? ও বাঙালি আর মহারাষ্ট্রের খাবারের স্বাদ একেবারেই আলাদা। কী করে বেচারা? নিজে কিছু জানে না করতে। বাইরে খাওয়া আরম্ভ করল। ফলে ওজনও বেড়ে গেল আর পেটে আলসার ধরা পড়ল। সব খাওয়া এখন ওর বারণ হয়ে গেছে। ওর মায়ের কাছে তেলমশলা ছাড়া খিচুড়ি বানানো শিখে এখন পিজিতে তা-ই রান্না করে খাচ্ছে।

শ্রুতির মা বলে উঠলেন, তুমি শ্রুতিকে বোঝাও মিতালি। ও কোনও কিছু শিখতে চায় না, ওরও পিয়ালের মতোই অবস্থা হবে। বাড়ির বাইরে গিয়ে একা থাকা কি অতই সোজা? শ্রুতির দিকে ইশারা করে বললেন, ও তো সেই তোমার বন্ধুর পথই অনুসরণ করছে।

—মাসিমা, শুধু খাওয়ার সমস্যাই নয় আরও হাজারো সমস্যা ফেস করতে হয় একা থাকতে গেলে, যেগুলো বাড়ির সুরক্ষিত চার দেয়ালের মধ্যে কল্পনাই করা যায় না। সুতরাং সময় থাকতে আমাদের উচিত প্রয়োজনীয় সবকিছু শিখে নেওয়া।

আজকের যুবক বা যুবতি যাদের একা গিয়ে অচেনা জায়গায় থাকতে হচ্ছে তাদের কিছু জিনিস শিখে নেওয়া উচিত যাতে প্রবাসে তাদের সমস্যায় না পড়তে হয়।

ব্যক্তিগত ট্রেনিং

  • বাড়ির বাইরে গিয়ে একা থাকতে হলে প্রথম সমস্যা হয় খাওয়াদাওয়া নিয়ে। Hostel, পিজি সর্বত্রই খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে কিন্তু রোজের খাবার, জলখাবার যে পছন্দসই হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন ভাষাভাষীর ছেলেমেযেরা একসঙ্গে থাকছে এবং সকলের জন্যই ওই একই খাবার। সুতরাং বেসিক কিছু খাবার বানানো ও নিজের পছন্দের কয়েকটা রেসিপি শিখে রাখাটা একান্ত প্রযোজন।
  • খাবার বানাতে গেলে বাসন ব্যবহার করতে হবে এবং হোস্টেলে থাকলে নিজের রান্না করা বাসনটা নিজেকেই ধুয়ে নিতে হবে। বাড়িতে থাকলে পরিচারিকা হয়তো এই কাজটা করে দেয়। কিন্তু বাইরে থাকলে নিজেকে বাসন মাজাটা শিখে নিতে হবে।
  • খাবার তৈরি করতে যে-উপকরণগুলোর প্রযোজন যেমন গ্যাসস্টোভ, হিটার বা ইন্ডাকশন প্লেট এগুলো সম্পর্কেও সামান্য জ্ঞান থাকা দরকার।
  • খাবারের পরেই আসে জামাকাপড়ের চিন্তা। বাইরের পোশাক, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ধোপাকে দিয়ে ধুইয়ে নেওয়া গেলেও রোজকার সর্বক্ষণের পরার পোশাক, অন্তর্বাস এগুলো নিজেকেই ধুয়ে নিতে হবে। এমারজেন্সি সিচুয়েশনের জন্য পোশাক ঠিকমতো প্রেস করাটাও শিখে রাখা একান্ত জরুরি।
  • Hostel বা পিজি-তে যে-ঘরে থাকছেন সেটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাটাও খুব দরকার। এটা শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, গোছানো ঘর ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখতে যেমন সাহায্য করবে, তেমনি কিছু করার উৎসাহও বাড়িয়ে তুলবে। জিনিসপত্র অগোছালো পড়ে থাকলে তা অবসাদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
  • শেয়ারিং বেসিসে যদি থাকেন তাহলে রুম পার্টনারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার রাখুন। কারণ আপনার সমস্যায় সে-ই প্রথম আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।

ব্যবহারিক ট্রেনিং

ব্যক্তিগত এবং প্রযুক্তিগত ট্রেনিং যে-কোনও অন্য ব্যক্তির সহায়তাতেও নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ব্যবহারিক ট্রেনিং নিজেকেই নিতে হবে। এগুলি জেনে রাখা একান্ত জরুরি—

  • একা বাড়ির বাইরে থাকতে গেলে প্রথমেই দরকার আত্মবিশ্বাস। যে-কোনও অপ্রিয় পরিস্থিতিতে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সঠিক সমাধান খুঁজতে আত্মবিশ্বাস-ই আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
  • অচেনা ব্যক্তির সঙ্গেও ব্যবহার সবসময় ভালো রাখবেন। আপনার ব্যবহার অনেক সমস্যার হাত থেকে আপনাকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।
  • শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা এই দুয়েরই খেয়াল রাখতে হবে। একাকিত্বে যাতে না ভোগেন তার জন্য নিজের শখ-সাধ বজায় রাখুন। বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।

প্রযুক্তিগত ট্রেনিং

ব্যক্তিগত ট্রেনিং-এর সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা খুব দরকার। দৈনন্দিন জীবনে হয়তো এটার প্রযোজন না-ও পড়তে পারে কিন্তু এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

  • যাওয়া-আসার জন্য অনলাইন টিকিট বুক করা
  • ব্যাংক এবং পোস্ট অফিসের সঙ্গে যুক্ত কিছু সাধারণ কাজকর্ম
  • ইন্টারনেট ডেটা-র সঠিক ব্যবহার
  • নিজের জিনিস ঠিকমতো প্যাকিং করা
  • এমারজেন্সি ওষুধপত্র সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান
  • খরচা চালাবার জন্য সঞ্চিত অর্থের সঠিক ব্যবহার।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...