জীবন একই ছন্দে চলে না। কখনও দুঃখ কখনও আনন্দ, এভাবেই জীবন এগোতে থাকে। আনন্দ, দুঃখ, বেদনা সব মিলিয়েই আমাদের জীবন। তাই মন খারাপ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে বেশিক্ষণ মন খারাপকে টিকিয়ে রাখা ঠিক নয়। কারণ এতে হতাশা তৈরি হয়। নিজের ওপর রাগ হয়, কোনও কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। এমনকী সেই সময় অন্যের সঙ্গে কথা বলা তো দূরের, সামনে আসতেও ইচ্ছা করে না। এর পাশাপাশি মন খারাপ শরীরের উপরেও প্রভাব ফেলে। তাই মন খারাপ রেখে কোনও লাভ নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক মন ভালো করার সহজ কিছু উপায়।  এই সহজ সরল টিপ্স ফলো করে আবার মন ভালো করে ফেলতে পারি।

মেডিটেশনে শান্তিলাভ

যখন খুব একা লাগবে, তখন নিবিষ্ট মনে কিছুটা সময় ধ্যান করে দেখুন। দেখবেন, সঙ্গে সঙ্গে আপনার মন কিছুটা পজিটিভ এবং ভালো হয়ে যাবে।

মেলামেশার পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করুন

সব সময় মন ভালো না লাগার সমস্যা তাদের মধ্যে বেশি দেখা যেতে পারে, যারা বেশিরভাগ সময় একা থাকেন।তাই, যতটুকু সম্ভব লোকেদের সাথে মিশতে এবং বন্ধুত্ব করতে শিখুন।এতে আপনি তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয় ও  জীবনযাপনের প্রণালী ইত্যাদির বিষয়ে জানতে পারবেন ও শিখতে পারবেন।

এছাড়া, নিজের মনের কথা কোনও বিশেষ বন্ধু বা প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করে মন হালকা করতে পারবেন।

যদি লাগাতার আপনার এই মনখারাপের পর্যায়টা চলতে থাকে, তাহলে জোর করে হলেও কারো সাথে কথা বলেই দেখুন না।অনেকটা হাল্কা লাগবে। সে আপনার ঘরের যে-কোনও সদস্য হলেও হবে, দেখবেন কিছুক্ষণ কথা বলার পর আপনার মন অনেকটাই ভালো লাগতে শুরু করবে।

মনে রাখবেন, talk therapy-র মাধ্যমে অনেক জটিল মানসিক সমস্যাগুলোর সমাধান সহজেই করা যায়। তাই, সাধারণ মন ভালো না লাগার সমস্যা এর মাধ্যমে সহজেই দূর করতে পারবেন। একবার এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করেই দেখুন না।

বই পড়ে মন ভালো রাখুন

বর্তমান সময়ে বই পড়ার ট্রেন্ড অনেক কমে গিয়েছে এবং এই জেনারেশন মোবাইল এবং কম্পিউটার ছাড়া কিছুই জানে না। কিন্তু, বই পড়ে মন ভালো রাখার এই প্রক্রিয়া এক সময়ে খুব জনপ্রিয় ছিল।যখন আপনি কোনও ভালো বই পড়েন, তখন আপনার মন সম্পূর্ণ ভাবে সেই বই এর তথ্যের ওপরে ফোকাস করে থাকে। যার ফলে, বই এর মধ্যে থাকা তথ্য, রহস্য, গল্প, কাহিনি, চরিত্র ইত্যাদি আপনাকে আপনার চিন্তা, দুঃখ এবং ভয় থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।

নিয়মিত ভাবে নিজের ফাঁকা সময়ে বই পড়ার অভ্যেস করতে পারলে দেখবেন আপনার মন আগের থেকে অনেক ফুরফুরে এবং খুশি থাকবে। অনেকেই বই পড়ার অভ্যেসের মাধ্যমে নিজের মন মেজাজ ভালো করতে সফল হয়েছেন। ভালো ভালো বই পড়ে আপনি নিজের মুড সম্পূর্ণ চেঞ্জ করে ফেলতে পারবেন।

জীবনের উদ্দেশ্যের প্রতি ফোকাস

যদি আপনার জীবনে কোনো উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে এখনই নিজের উদ্দেশ্য নির্ধারিত করুন।কারণ, উদ্দেশ্য ছাড়া আপনার জীবনে কোনও মানে থাকবে না, আর তাই মন ভালো রাখতে সমস্যা হবে।

যদি আপনি নিজেই না জানেন যে, জীবনে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তাহলে খুশি থাকবেন কীভাবে।যখন আপনার জীবনের একটি উদ্দেশ্য নির্ধারিত করবেন তখন দেখবেন আপনার মন সেই উদ্দেশ্যের প্রতি ফোকাসড হয়ে থাকবে।

যখনই আপনার মন খারাপ লাগবে, আপনি নিজের উদ্দেশ্য,  জীবনে কী করতে চান,  জীবনে কী পেতে চান– সেগুলোর বিষয়ে ভাবতে থাকুন।যখনই আপনি এটা করবেন, তখন মনের ফোকাস আবার উদ্দেশ্যের প্রতি চলে আসবে এবং মনে উৎসাহভাব তৈরি কবে। 

অপরকে সাহায্য করুন

সবাই কিন্তু অন্যেকে সাহায্য করার মতো মানসিকতা রাখতে পারেন না এবং এটা স্বাভাবিক।তবে, জীবনে একদিন হলেও আর্তের পাশে দাঁড়িয়ে দেখুন না, দেখবেন মনে কতটা শান্তি পাবেন।মানুষ কেন শুধু, রাস্তায় কত রকমের নিরীহ প্রাণী রয়েছে যারা কষ্ট পাচ্ছে, একদিন তাদের জন্যই কিছু করে দেখুন।

যখন আমরা মন থেকে অন্যেকে সাহায্য করি, তখন আমাদের মধ্যে একটি positive feeling এবং energy তৈরি হয়ে থাকে। আর এই ইতিবাচক শক্তি আমাদের মনে প্রচুর শান্তি এবং সন্তুষ্টির ভাব এনে দেয়। তাই, যদি আপনার মন ভালো না লাগে,, তাহলে কোনও অসহায় ব্যক্তির জন্য কিছু করেই দেখুন না।

জোরে জোরে হাসুন

বিভিন্ন গবেষণা  থেকে পাওয়া গেছে যে, জোরে জোরে হাসির অভিনয় (act of smiling)  করলেও আমাদের মুড  ভালো হয়ে যায় এবং আমরা খুশি অনুভব করতে শুরু করি।

এর মধ্যে কারণ অবশই রয়েছে। হাসির ফলে জরুরি কিছু ব্রেইন ক্যামিক্যাল নিসৃত হয়ে থাকে, যেগুলো আমাদের মন মেজাজ ভালো করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনার হাসার মুড না থাকলেও, জোর করে হাসুন। ভালো কাজ হবে এবং আপনার মন ভালো লাগবে।

এছাড়া, মন ভালো করার জন্য আপনি কোনও হাসির সিনেমা দেখতে পারেন বা এমন কোনও বন্ধুর সাথে কথা বলুন- যে আপনাকে হাসাতে পারবে বলে আপনি জানেন।

আসল কথা হল, যদি আপনি সব সময় খুশি থাকতে চান তাহলে নিজের মানসিকতা পজিটিভ রাখতে চেষ্টা করুন।সব সময় নেগেটিভ কথা ভাবলে আপনার জীবন থেকে আনন্দ উধাও হয়ে যেতে পারে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...