কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান বা পার্টিতে যাওয়ার আগে মেয়েরা একটু সাজগোজ করে নিতে ভালোবাসে। এতে চেহারার স্বাভাবিক সৌন্দর্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু কারও মুখে যদি দাগছোপ থাকে এবং তার যদি সঠিক মেক-আপ করার নিয়মগুলো সঠিক না জানা থাকে— তাহলে মেক-আপের সাহায্যে কীভাবে মুখের দাগছোপ লুকোনো সম্ভব সেটাও তার অজানা রয়ে যাবে। এর ফলে নয় তাকে পার্টিতে যাওয়া ক্যানসেল করতে হবে আর নয়তো সে নিজেকে আর সমস্ত অতিথিদের মাঝে ঠিক ভাবে প্রেজেন্ট করতে পারবে না।

সর্বপ্রথম জেনে রাখা ভালো যে, কোন স্কিন প্রোডাক্ট নিজের স্কিনের টাইপ অনুযায়ী কেনা উচিত। ত্বকের সঙ্গে যদি মেক-আপ ভালো করে ব্লেন্ড ও ম্যাচ না করে তাহলে দেখতে অত্যন্ত কুশ্রী লাগতে পারে।

মেক-আপ করার সময় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে Foundation-এর উপরে। ত্বকের সৌন্দর্য এবং আকর্ষণ বাড়াতে ফাউন্ডেশন সবথেকে কার্যকরী। সুতরাং নিজের ত্বকের ধরন এবং টোন ভালো ভাবে জেনে নিয়ে তবেই ফাউন্ডেশন বাছুন।

ফাউন্ডেশন কত রকমের

লিকুইড ফাউন্ডেশন: যারা প্রথমবার ফাউন্ডেশন ব্যবহার করছেন এবং যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের অবশ্যই লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং সহজে এটি ত্বকের সঙ্গে ব্লেন্ড করে যায়। অয়েল এবং ওয়াটারবেস ফর্মুলার মিশ্রণে লিকুইড ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়।

রোমছিদ্র এবং মুখের দাগছোপ লুকোবার সঙ্গে সঙ্গে লিকুইড ফাউন্ডেশন, স্কিন টোনকে ন্যাচারাল লুকও দেয়। এছাড়া ত্বক উজ্জ্বল দেখাতেও এটি যেমন সাহায্য করে, তেমনি সব ধরনের ত্বকের জন্যও এটি সমান কার্যকরী।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডস: ল্যাকমে পারফেক্টিং লিকুইড ফাউন্ডেশন, মেবেলিন ফিট মি ফাউন্ডেশন, রেভলন কালার স্টে লিকুইড ফাউন্ডেশন, লোরিয়েল ইনফ্যানিবল ফাউন্ডেশন।

খেয়াল রাখুন: লিকুইড ফাউন্ডেশন ত্বকে মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘন্টা স্টে করে। কিন্তু যদি দীর্ঘ সময় আপনি এটা ত্বকে লাগিয়ে রাখেন তাহলে ত্বকে ঘাম হওয়া শুরু হবে এবং ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পড়বে। ফলে ত্বকের উপর প্যাচেস ফুটে উঠবে। সুতরাং লিকুইড ফাউন্ডেশন লাগাবার সময় এই অসুবিধাগুলি মাথায় রাখবেন।

পাউডার ফাউন্ডেশন: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য পাউডার ফাউন্ডেশন চয়ন করুন। কারণ এটি একটি ড্রাই সলিউশন। পিগমেন্টস এবং মিনারেল-এর মিশ্রণে এটি তৈরি হয়। ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিতে এটি সাহায্য করে, সেই সঙ্গে ত্বকের লুক-এ এনে দেয় ন্যাচারাল ফিনিশ। ব্রাশ বা স্পঞ্জের সাহায্যে খুব সহজে এই ফাউন্ডেশন আপনি ত্বকে প্রয়োগ করতে পারবেন।

মার্কেটে প্রেসড বা লুজ ফর্ম-এ এই ধরনের ফাউন্ডেশন খুব সহজে পাবেন। যাদের ত্বক ড্রাই তাদের এই ফাউন্ডেশন লাগানো উচিত নয় কারণ ত্বকের বলিরেখা, ডার্ক স্পটস ভালো করে কভার না হওয়ার ফলে, আপনার লুক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডস: মেবেলিন ফিট মি পাউডার ফাউন্ডেশন, লোরিয়েল প্যারিস ট্রু ম্যাচ প্রেসড পাউডার, ম্যাক্স স্টুডিও ফিক্স পাউডার প্লাস ফাউন্ডেশন, এভন মিনারেল ফাউন্ডেশন।

খেয়াল রাখুন: অয়েলি ত্বকে ব্রন, মেচেতা, দাগছোপ বেশি হয়ে থাকে। আপনার যদি এই সমস্যাগুলি থেকে থাকে তাহলে মিডিয়াম কভারেজ-এর জায়গায় ফুল কভারেজ দেবে, এমন ফাউন্ডেশন বেছে নিন। এই ধরনের ফাউন্ডেশন দুই থেকে তিনঘন্টার বেশি সাধারণত স্টে করে না।

ক্রিম ফাউন্ডেশন: একে তো ড্রাই স্কিনের সমস্যা, সঙ্গে যদি একটা গোটা দিন ধরে কোনও ইভেন্ট অ্যাটেন্ড করতে হয়— তাহলে ক্রিম ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ফেস-কে দশ থেকে বারো ঘন্টা কভারেজ দিতে পারেন। দীর্ঘ সময় ধরে আপনার মুখশ্রীর গ্লো বজায় থাকবে। এটি ত্বককে হাইড্রেট রাখতেও সাহায্য করে কারণ ফাউন্ডেশনে এসেনসিয়াল অয়েলও ব্যবহার করা হয়।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডস: মেবেলিন মুজ ফাউন্ডেশন, ল্যাকমে নাইন টু ফাইভ মুজ ফাউন্ডেশন, ম্যাক মিনারালাইজ ফাউন্ডেশন, কালার গার্ল ৩৬০ ক্লিন হুইপড ক্রিম ফাউন্ডেশন।

খেয়াল রাখুন: ত্বক যদি বেশি ড্রাই হয় তাহলে Foundation ব্রেক হওয়া রুখতে, প্রথমে মুখে ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই লাগান।

সিরাম ফাউন্ডেশন: এটির চাহিদা এখন তুঙ্গে কারণ এটি ত্বককে পুষ্টি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেস-এ এনে দেয় ফ্রেশ এবং গ্লসি লুক। এর কারণ হচ্ছে বাজারে উপলব্ধ বেশিরভাগ সিরাম ফাউন্ডেশনে থাকে ভরপুর অর্গান অয়েল।

এটির সিলিকোন বেসড ফর্মুলা এটিকে জলের মতো পাতলা বানায়। এর ফলে লাগানো যেমন সহজ, তেমনি খুব সুন্দর ভাবে সহজে ত্বকে এটি সেট করে যায়। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যাকে মাথায় রেখে এটি ডিজাইন করা হয়েছে। দুই থেকে তিন ঘন্টার মতো এটি স্টে করলেও এর রেজাল্ট খুব ভালো।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডস: লোরিয়েল প্যারিস এজ পারফেক্ট রেডিয়েন্ট সিরাম ফাউন্ডেশন, ল্যাকমে অ্যাবসোলিউট অর্গান অয়েল সিরাম ফাউন্ডেশন, ডিওর ডিআরএক্স নিউড এয়ার সিরাম ফাউন্ডেশন।

খেয়াল রাখুন: সিরাম Foundation ড্রাই এবং অয়েলি দুই ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যায়। সুতরাং কেনার সময় নিজের ত্বকের ধরন সম্পর্কে আগে শিয়োর হন, তবেই এটির সুফল আপনি পাবেন।

মুস ফাউন্ডেশন: এটিকে হুইপড ফাউন্ডেশনও বলা হয়। এটি খুবই হালকা এবং ত্বকে এটির প্রয়োগে সফট টাচ অনুভূত হয়। ত্বককে এটি ম্যাট ফিনিশ প্রদান করে এবং ত্বকের যে-কোনও দাগছোপ, ফাইন লাইনস এটা দিয়ে খুব সহজে কভার করা যায়। এটির সফট টাচ-এর কেরামতি স্কিন টোন ইমপ্রুভ করতেও সহায়তা করে। সব ধরনের ত্বকে এটি স্যুট করে কিন্তু মাত্র তিন ঘন্টা এটি ত্বকে স্টে করে।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডস: ল্যাকমে অ্যাবসোলিউট মুস ফাউন্ডেশন, ফেসেড মুস ফাউন্ডেশন, ব্ল্যাক রেডিয়েন্স কালার পারফেক্ট এইচডি মুস ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশন লাগাবার নিয়ম

মুখে ফাউন্ডেশন যখনই অ্যাপ্লাই করবেন, তার আগে ত্বক ভালো করে ক্লিনজারের সাহায্যে পরিষ্কার করে নেবেন যাতে ত্বকে জমে থাকা ধুলোমাটি, নোংরা পরিষ্কার হয়ে যায়।

ত্বকের রোমছিদ্রের মুখ টাইট করার জন্য টোনার অবশ্যই ব্যবহার করবেন। এরপর ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন। যদি রোমছিদ্রের মুখ বড়ো হয় তাহলে প্রাইমার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকে স্মুদ বেস বানাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সুরক্ষিতও রাখে।

এর উপর ড্রপ ড্রপ ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করুন। বিউটি ব্লেনডার-এর সাহায্যে সারা মুখে ফাউন্ডেশনটি স্মুদ করে চারিয়ে দিন এবং ত্বকের সঙ্গে যাতে ভালো করে ব্লেন্ড করে যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে মুখের টোনে সামঞ্জস্যতা বজায় থাকবে। ত্বক অতিরিক্ত ফরসা দেখাবার অভিপ্রায় নিয়ে বেশি পরিমাণে ফাউন্ডেশন লাগাবেন না কারণ তাতে আপনার পুরো মেক-আপটাই নষ্ট হয়ে যাবে।

ফাউন্ডেশন কেনার সময়

যখনই আপনি নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন কিনবেন, সবসময় স্কিন টোন-এর থেকে এক-দুই টোন হালকা কিনবেন তাহলেই সেটা আপনার স্কিন টোন-এর সঙ্গে ম্যাচ করবে।

কখনও হাতে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে চেক করবেন না কারণ ওখানকার ত্বক মুখের ত্বকের তুলনায় উজ্জ্বল হয়। সেজন্য সঠিক শেড বেছে নিতে জ-লাইন থেকে গলা অবধি লাগিয়ে চেক করুন।

মুখে দুইটি পরতের বেশি ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করবেন না। এরকম করলে মুখে ফাউন্ডেশন শক্ত হয়ে ফুটে উঠবে। ফাউন্ডেশন সারারাত লাগিয়ে রাখবেন না, এতে ত্বকে ওপেন পোরস, ব্রন এবং ব্রেকআউট- এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যে, মেক-আপ রিমুভার দিয়েই ফাউন্ডেশন পরিষ্কার করতে হবে কারণ তাহলে ত্বক অকালে বুড়িয়ে যাবে না।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...