এরপর জিজ্ঞাস্য কিছুই আর থাকে না। সুতরাং সঞ্জয়ের সঙ্গে নমিতার বিয়ের দিন পাকা হয়ে গেল। সঞ্জয়ের ছোটোভাই আমেদাবাদে এমবিএ করছিল। ওটাই ওর শেষ বছর সুতরাং সঞ্জয়ের পরিবার চাইছিল ছোটো ছেলে ফিরলে তবেই আশীর্বাদ আর বিয়ে দিন ফাইনাল করতে। মেয়ের বাড়িও রাজি ছিল, কারণ মেয়ের বিয়ের কেনাকাটায় সময় তো দরকার পড়েই।

নমিতা আর সঞ্জয় মাঝেমধ্যেই বাইরে একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যেত বা রেস্তোরাঁতে খেয়ে বাড়ি ফিরত। বাড়িতেও ওদের

আসা-যাওয়া লেগেই থাকত। ধীরে ধীরে নমিতাও সঞ্জয়কে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা শুর করল। আশীর্বাদ হওয়ার কিছুদিন আগে নমিতা সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করল বিয়ে জন্য ও নিজে কতদিনের ছুটির অ্যাপ্লাই করবে অফিসে।

স্বাভাবিক ভাবেই সঞ্জয় উত্তর দিল, ঝামেলা না করে পাওনা যতটা ছুটি পাও নিয়ে নাও। ইচ্ছে তো আছে লম্বা মধুচন্দ্রিমাযাপনের কিন্তু তাই বলে তোমার কেরিয়ারের ক্ষতি করে নয়।

সঞ্জয়ের কথা শুনে নমিতা অভিভত হয়ে পড়ল, আমার অনেক ছুটি জমা হয়ে আছে। আমি পল্লবী ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলব, নমিতা বলল। উনি খুবই ভালো মানুষ, নিজে থেকেই দেখবে আমার লম্বা ছুটির ব্যবস্থা করে দেবেন।

 

পরের দিন অফিস পেঁছেই পল্লবী ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলার আগেই বোর্ডরুমে ম্যানেজমেন্ট মিটিং-এ যোগ দেওয়ার জন্য ডাক পড়ল নমিতার। মিটিং-এ পল্লবীর শ্বশুর কোম্পানির চেয়ারম্যান অভীক বাসু থেকে শুরু করে ভাশুর, স্বামী যাঁরা কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং পরিবারের আরও সদস্য যারা কোম্পানিতে উঁচু পদে রয়েছেন, সকলেই উপস্থিত ছিলেন।

—কনগ্রাচুলেশনস নমিতা, তুমি যে পল্লবীকে নিউইয়র্কে অফিস খোলার পরামর্শ দিয়ে, সেটা আমাদের প্রত্যেকেরই খুব ভালো লেগেছে। চেয়ারম্যান অভীক বাসু বললেন, যেহেতু এই আইডিয়াটা তোমার তাই ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা সম্পূর্ণ করার দাযিত্বও মানে নিউ ইয়র্কে অফিস খোলার জন্য তুমিই যাবে। ফার্স্ট জুন তোমার ওখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

নমিতা সব শুনে বড়ো ধাক্কা খেল। ২৮ মে ওর বিয়ে দিন স্থির হয়েছে।

—থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার। কিন্তু এই দাযিত্ব আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হবে না স্যার।

—কেন হবে না? পল্লবী মাঝখানেই বলে উঠল, আমি আর যশ-ও যাব তোমার সঙ্গে কয়েক সপ্তাহের জন্য। তোমার কোনও সমস্যা হবে না।

অভীক বাসু বললেন, সমস্যা হলেও কোম্পানি তোমার পুরো খেয়াল রাখবে তাছাড়া সাফল্য পেতে গেলে সমস্যা তো আসবেই। আমিও এভাবেই আজ এতদূর পেঁছেছি। যাও, যাওয়ার জন্য তৈরি হও। এখানে যাকে যা বোঝাবার বুঝিয়ে দাও। এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে।

নমিতার আর কিছুই করার ছিল না, উপরমহলের আদেশই সবকিছু। কিন্তু পল্লবী ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলাটা দরকার মনে হল নমিতার। পল্লবীর রুমে গিয়ে ওনার আসার অপেক্ষা করতে লাগল। পল্লবী ঘরে ঢুকে নমিতাকে দেখে অবাক হল— কী হল নমিতা, তোমার মুখ এক শুকনো লাগছে কেন?

সব শুনে সহানুভতির বদলে ব্যাঙ্গের সুরে পল্লবী বলল, ইন্টারভিউয়ে সময় তো তুমি বলেছিলে সাত-আট বছর তুমি এখন বিয়ে করবে না। সবে তো তিনবছর হয়েছে, এর মধ্যেই চাকরি থেকে মন উঠে গেল?

—চাকরি থেকে মন উঠে যায়নি ম্যাডাম। ভাগ্য করে এমন একজন জীবনসঙ্গীর সন্ধান পেয়েছি, যে কোনওদিন আমাকে চাকরি ছাড়ার জন্য জোর করবে না বা খোঁটাও দেবে না। বিয়ে সমস্ত ঠিক হয়ে গেছে, এই পরিস্থিতিতে বিয়ের দিন পিছোবার বা বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কোনও উপায় নেই। আমার আমেরিকা যাওয়া অনিবার্য জেনেও। নমিতা মৃদু স্বরে কথাগুলো পল্লবীকে বলল।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...