নমিতা ভবিষ্যতে কী করতে চায় এটা না জিজ্ঞেস করেই ওর রেণুদিদি তার নিজের অজান্তেই নমিতাকে জীবনের এমন একটা কঠিন সত্যির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল যেটাকে অস্বীকার করা কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না নমিতার। আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পরেই নমিতার বাবার এক বন্ধু তাঁর এক আত্মীয়ে সম্বন্ধ নিয়ে নমিতাদের বাড়ি এলেন।

—সঞ্জয়ের নিজের গ্লাস ফ্যাক্টরি রয়েছে, ছেলেটা ভালো ব্যাবসা করছে। এখন বিয়ে করতে চায় কিন্তু একটাই ইচ্ছে যে ভালো পদে ভালো কোম্পানিতে চাকুরিরতা পাত্রী হওয়া চাই।

নমিতার ছোটো ভাই ওনাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন কাকু?

—দূরদর্শিতা বলতে পারো। সঞ্জয় জানে ব্যাবসা যে-কোনও সময় খারাপ অবস্থায় পেঁছোতে পারে। সুতরাং পরিস্থিতি সামলে দেওয়ার জন্য সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্স অর্থাৎ স্থায়ী একটা রোজগারের ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে ও মনে করে। সেক্ষেত্রে প্রফেশনালি কোয়ালিফায়ে পাত্রীর সঙ্গে বিয়ে করাটাই হল সঠিক সামাধন ওর কাছে। তোমাদেরও সমস্যা হবে না এখানে বিয়ে হলে কারণ নমিতা মা-ও তো চাকরি ছাড়তে হবে বলে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সঞ্জয়ও ওকে চাকরি ছাড়ার কথা কোনওদিন বলবেও না। একটু থামলেন ভদ্রলোক। গেলাসে রাখা জলটা এক নিঃশ্বাসে পান করে বন্ধুর স্ত্রীর দিকে তাকালেন, বউদি আমার মনে হয় একবার যদি, আপনারা পাত্রর সঙ্গে দেখা করেন।

—দাদা আমি আর কী বলব, নমিতা যা বলবে তাই হবে, নমিতার মা উত্তর দিলেন।

নমিতা চুপচাপ বসে সব শুনছিল। শ্যামলকাকুই নমিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী রে মা, তোর কী মত?

—আপনি যেটা ভালো বুঝবেন, মাথা ঝুঁকিয়ে উত্তর দিল নমিতা।

—ঠিক আছে, আমি ওদের সঙ্গে দেখা করে একটা সময় ঠিক করে জগদীশ তোকে জানিয়ে দেব। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে উঠতে উঠতে কথাগুলো বলে শ্যামল, নমিতাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন।

—দিদি, তুই কী করে শ্যামলকাকুকে হ্যাঁ বলে দিলি রে, নমিতার ছোটো ভাই নিখিল অবাক হয়ে দিদিকে জিজ্ঞেস করল।

—পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে ছেলেটার মধ্যে নয় আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে আর নয়তো ও বউয়ে রোজগারের টাকায় ভাগ বসাতে চায়। তুই এরকম একজন লোকের জন্য নিজের সময় কেন নষ্ট করবি?

—শ্যামলকাকুর সামনে যখন কথা হচ্ছিল তখন মা-বাবা-তুই যখন কিছু বললি না তখন আমি কী করে প্রতিবাদ করব। ভাইকে কোনওরকমে এড়িয়ে নমিতা ওখান থেকে উঠে পড়ল।

সাইকোলজিতে ডক্টরেট করা ভাইকে কী করে নমিতা বলবে যে, এখন ওর জীবনবোধ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বিয়ে না করে জীবন ব্যর্থ করতে চায় না এখন ও, বরং সঞ্জয়ের দূরদর্শীতার মনে মনে তারিফ না করে পারেনি নমিতা।

নিখিলের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হল যখন সঞ্জয় নিজের মুখে জানাল, আমার ব্যাবসা খুবই ভালো চলছে বরং আমি এখন এটা বাড়াবার কথা ভাবছি। তবে আমাকে এর জন্য আরও অনেক বেশি সময় দিতে হবে।

অবশ্য বিয়ে না করে ব্রহ্মচারী থাকব এমন বাসনাও আমার নেই কিন্তু আমি এমন মেয়ে বিয়ে করতে চাই যে নিজেও স্বাধীন থাকতে পারবে এবং নিজের কেরিয়ার নিয়ে সে ব্যস্ত থাকলে বাড়িতে আমার সময় কম দেওয়া নিয়ে ঝগড়া, অশান্তিও লেগে থাকবে না। বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তার কতটা দরকার হতে পারে তাহলে সে সেটা বুঝতেও পারবে আর আমাকেও এই নিয়ে বিরক্ত করবে না। বিয়ে পর সংসারের কথা ভেবে অনেকেই রিস্ক নিতে ভয় পায় কিন্তু স্ত্রী যদি চাকুরিরতা হয় তাহলে কিছুটা রিস্ক নেওয়াই যেতে পারে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...