মা হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দেয় দিশা। কিন্তু বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি কিংবা কর্মক্ষেত্রের সম্মানপ্রাপ্তির কথা দিশা এখনও ভুলতে পারেনি। পুষ্পিতার বিষয়টা আবার অন্যরকম। ও বেকার। কিন্তু চায়, সমাজে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকতে। তাই বন্ধুদের নিয়ে সবসময় আনন্দে মেতে থাকে সে। রিয়া আবার খুব ভালো রাঁধুনি। স্বামী-সন্তানকে ভালো খাবার খাওয়াতে পারলেই তার মানসিক শান্তি এবং রান্নার প্রশংসা পেলেই সে ভীষণ খুশি।
আসলে যে-যার মতো আনন্দে থাকতে চায়। তাই, ভালোলাগার বিষয় যাই হোক, উপলক্ষ্য কিন্তু একটাই— আনন্দলাভ। কারণ আমরা মনে-মনেই বাঁচি বেশি। অতএব, জীবনের সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে, মানসিক শান্তি এবং আনন্দলাভের চেষ্টা করতে হবে। কারণ, জীবনকে আরও আনন্দময়, আরও সুন্দর করতে হলে, সংকল্প নিতেই হবে এবং সেই সংকল্পের সূচনা হোক আজই।
কর্মপ্রাধান্য
ভাগ্য নয়, কর্ম পাক প্রাধান্য। মনে রাখবেন, সফল ব্যক্তি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না, কর্মময় জীবনযাপন করেন। তাই সুযোগ পাওয়ার জন্য বসে থাকবেন না, সুযোগ করে নেবেন। ‘কাল করব’ বলে কাজ ফেলে রাখলে, মহাকাল পার হয়ে গেলেও সে কাজ আর হবে না। অতএব, কাজ শুরু করুন এখনই এবং কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করুন। সাময়িক বাধা এলেও নিরাশ হবেন না, অপেক্ষা করুন, বাধা কাটবেই। কারণ, ঝড় ওঠে, আবার থেমেও যায়। তাই, সাময়িক বাধা অতিক্রম করতে পারলেই জয় সুনিশ্চিত। নতুন বছরের শুরুতে তাই নিজের কাজকে প্রাধান্য দিন।
পরিকল্পনা জরুরি
প্রথমে আপনার পরিকল্পনাগুলি নথিভুক্ত করুন। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে। আর পরিকল্পনামাফিক উপকরণ এবং সময় বরাদ্দ করুন। কর্মসাফল্য পেতে অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, তাই আগে থেকেই মজুত করুন অর্থ। কোনও কাজ নিশ্চিন্তে সম্পূর্ণ করতে হলে, পরিকল্পনামাফিক যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত।
আত্ম–বিশ্লেষণ
আয়নার সামনে দাঁড়ান। দেখুন নিজেকে। কী কী দোষগুণ আছে তা বিশ্লেষণ করুন। দোষগুলিকে কাটানোর চেষ্টা করুন এবং গুণগুলির কথা ভেবে আত্মবিশ্বাস বাড়ান। প্রয়োজনে অন্যদের (শুভাকাঙ্ক্ষী) থেকে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন আপনার কী কী দোষগুণ আছে। কারণ, নেগেটিভ পয়েন্টস না কাটালে, পজিটিভ কাজ আটকে যেতে পারে। অতএব, নিজেই নিজের সমালোচনা করুন এবং অন্যের থেকে সমালোচনা শুনে নিজেকে শুধরে নিন।
সামাজিকতা
টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের সামনে অহেতুক দীর্ঘ সময় ব্যয় না করে, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন। যত মানুষের সঙ্গে মিশবেন, ততই আপনি জ্ঞানবুদ্ধিতে সমৃদ্ধ হবেন, উপকার পাবেন। শুধু তাই নয়, অন্যের গুণগুলি নিতে পারলে আপনি আরও গুণী এবং স্মার্ট হয়ে উঠবেন। মনে রাখবেন, কুপমণ্ডুকরা কল্পনার জগতে বাস করে, কিন্তু সামাজিকতা বাস্তবের মুখোমুখি করে।
গুরুত্বের বিচার
গুরুত্ব অনুযায়ী কাজের তালিকা তৈরি করুন। কারণ, সঠিক গুরুত্ব মানেই সঠিক সাফল্য। এতে বাজে কাজে সময় নষ্ট হবে না। আপনার জীবনের উপযোগী এবং লাভজনক কাজগুলিকে তালিকার শীর্ষে রাখুন। ঠান্ডা মাথায় নিজের কাজের গুরুত্ব নিজেই বিচার করুন।
স্বাস্থ্য সচেতনতা
স্বাস্থ্যই সম্পদ। শরীর-স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে, একসময় সব ধনসম্পদ হারাতে হতে পারে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করুন। খাদ্যতালিকায় রাখুন শাক-সবজি এবং ফল। পান করুন পর্যাপ্ত জল। আর ফার্স্ট ফুড থেকে সরিয়ে রাখুন নিজেকে।
পারিবারিক আনন্দ
নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দে থাকুন সর্বদা। সময় পেলেই আড্ডা-গল্পে মেতে থাকুন। বছরে অন্তত দু’বার বেড়াতে যান পরিবারের সবাইকে নিয়ে। তাই বছরের শুরু থেকেই টাকা জমাতে থাকুন।
আয়–ব্যয়ের হিসাব
একটা খাতা কিংবা ডায়ারি হাতে নিন। প্রথমে আপনার বাৎসরিক আনুমানিক আয়ের পরিমাণ লিখুন। এবার প্রতি মাসের খরচ লিখুন। যেমন সংসার খরচ, সন্তানের শিক্ষাখাতে খরচ, জামাকাপড় কেনার খরচ, ঋণ শোধের ব্যাপার থাকলে তার খরচ (ইএমআই), যাতায়াতের খরচ, অতিথি আপ্যায়নের খরচ, বিমার খরচ, উৎসব-অনুষ্ঠান প্রভৃতির খরচ হিসাব করুন। এরপর সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব কষে দেখুন আর কত টাকা আপনার হাতে থাকছে। এবার সেই মতো ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য টাকা জমান এবং কিছু টাকা রাখুন শখ-আহ্লাদ পূরণের জন্য। নতুন বছরে এটুকু করতে পারলে আপনি থাকবেন মানসিক চাপমুক্ত এবং জীবনযাপন করতে পারবেন নিশ্চিন্তে।