এখন প্রায় প্রতিটা পরিবারেই কখনও সাংসারিক কারণে, কখনও ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হলে আবার কখনও পারিপার্শ্বিক বা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকে। শহরে এখন বেশিরভাগ বাড়িতেই স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কর্মরত। এর ফলে সংসার-ধর্ম পালন করাটা প্রায়শই মুশকিল হয়ে ওঠে। আর্থিক পরিস্থিতি শোধরালেও পারিবারিক সমস্যা লেগেই থাকে। আর যেখানে আর্থিক সমস্যা থাকে সেখানে সংসার খরচ চালানো নিয়েই তৈরি হয় বড়ো সমস্যা।
কখনও সখনও কলহ এতটাই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে যে, স্বামী-স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের পথে পা বাড়ায়। একে অপরকে সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শুধু ডিভোর্সই নয়, অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী কেউ একজন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে যদি জড়িয়ে পড়েন, তাহলে বাড়িতে থাকা বাচ্চার উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কিন্তু সমস্যা হল এই পরিস্থিতি হলে বাচ্চাটি কোথায় যাবে? সে কী করবে আর না করবে বুঝে উঠতে পারে না।
মা বাবার সঙ্গে বাচ্চার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মা বাবা নিজেদের মধ্যে কীধরনের আচরণ করছেন সেটা শিশুর বেড়ে ওঠার ওপর খুব গভীর প্রভাব ফেলে। এতে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য কেমন হবে, পড়াশোনায় সে কেমন করবে, এমনকি ভবিষ্যতে এই শিশু যেসব সম্পর্কে জড়াবে সেগুলো কেমন হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই ঝগড়াবিবাদ নানা রকমের হয়ে থাকে। কোনও কোনও বিতর্কের হয়তো প্রভাব শিশুর ওপর পড়েই না, এমনকি শিশুর ভবিষ্যতের জন্যে সেটা হয়তো ভালোও হতে পারে। কিন্তু মা বাবা যখন একে অপরের প্রতি ক্রুদ্ধ আচরণ করেন, চিৎকার চেঁচামেচি করেন, বা তারা একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন, তখনই হয়তো কিছু একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে যেটার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে বাচ্চার ওপর।
বাচ্চার পরম নির্ভরতার স্থান তার বাবা মা। সেখানে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে সে অসহায় বোধ করে এবং বাচ্চা মাত্রই অনুকরণ প্রিয় । আপনার আচরণ আপনার কথাবার্তা তার মনে একটা স্থায়ী প্রভাব ফেলতে সক্ষম । বাচ্চাদের সামনে বাবা মা ঝগড়া করলে বাচ্চা মানসিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবিষ্যতে সেই বাচ্চা ধরে নেবে, মেয়েদের বিয়ের পর তার স্বামীর কাছে তিরস্কারের স্বীকার হওয়া একটা স্বাভাবিক বিষয়। সেই সঙ্গে শিশুর বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হ্রাস পায় এবং এই সহজেই অমনোযোগী হয়ে ওঠে। সুতরাং বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন, বাচ্চাকে সময় দিন এবং তার মানসিক বিকাশে সাহায্য করুন। আপনার উপরেই আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।