আজকাল লোকজন যে-কোনও টুরিস্ট স্পটে গিয়ে কোনও ঐতিহাসিক প্রাসাদ, পাহাড়, সমুদ্র, নদী, ঝরনা, সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত আর সরাসরি নিজের চোখে দেখেন না— সবই এখন মোবাইল-ক্যমেরার চোখ দিয়ে দেখেন। শুধু তাই নয়, ভালোমন্দ যেখানে যাই ঘটতে থাকুক না কেন, মোবাইল-ক্যামেরায় তুলে রাখতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না।
আসলে এখন প্রায় প্রত্যেকের হাতেই অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং তা ক্যামেরা-সমৃদ্ধ। একান্ত আপনজন সামনে থাকলেও, তাদের সঙ্গলাভের থেকে যেন বেশি আনন্দ পান আপনজনের ছবি তুলে। এ এক বিষম বদভ্যাসে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এখন সবসময় মোবাইল-ক্যামেরার সামনে থাকার সুবিধে ভোগ করতে চাইছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন তাই নরেন্দ্র মোদীর মুখ-ই বেশি দেখা যাচ্ছে। আধুনিক সময়ে আত্মপ্রচারের সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার মোবাইল ফোন৷ ফোটো-জার্নালিস্ট-দের ক্যামেরায় নয়, তিনি আমজনতার মোবাইল-ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যেন এটাই প্রমাণ করতে চাইছেন যে, তিনি সবার নয়নের মণি। আসলে আমরা ক্রমশ মোবাইলের দাস হয়ে উঠছি। আমাদের ভালো মন্দ সবটাই নিয়ন্ত্রণ করছে মোবাইল৷ কোনও মুহূর্তটাই আর একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে থাকছে না মোবাইল ফোনের কল্যাণে৷
ছবি হয়তো অনেক বিরল মুহূর্তকে ধরে রাখে, অনেক স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয় কিন্তু প্রতি মুহূর্তে সবকিছু ক্যামেরাবন্দি করে রাখলে প্রকৃত ফোটোগ্রাফির মাধুর্যটাই নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, অসংখ্য ছবির মাঝে যেমন ভালো মুহূর্তগুলো হারিয়ে যায়, ঠিক তেমন-ই মোবাইল ফোনটাও ভারী হয়ে ওঠে। ভেবে দেখুন, সবাই যদি এত এত ছবি তোলে, তাহলে কে কার ছবি দেখবে! কার হাতে এত সময় আছে যে, সারাক্ষণ ফেসবুকে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ-এ শুধু অন্যের ছবি দেখে সময় কাটাবে! এমনও অনেকে আছেন যারা একান্ত ব্যক্তিগত ছবি যা প্রকাশ্যে আনা অনুচিত, সেইসব ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিচ্ছেন। একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত থেকে শুরু করে মৃত মানুষের সঙ্গে সেলফি ছবি, কোনও কিছুই যদি বাদ না যায়- – তাহলে আমরা আর সভ্য হলাম কীভাবে!
বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আশীর্বাদে সমাজের সর্ব শ্রেণির ও পেশার মানুষের হাতে মোবাইল ফোনের ছড়াছড়ি। আমরা জানি, প্রত্যেকটা জিনিসের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। তবে বর্তমানে শিশুরা যে হারে মোবাইল ব্যবহার করছে এতে দিন দিন তারা মানুষরূপী রোবট হয়ে উঠছে। সম্প্রতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উই আর সোশ্যাল ও হুট সু্যট নামক প্রতিষ্ঠানের করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারত ও তার আশপাশের রাষ্ট্রগুলোতেই মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।