কথায় বলে, শিলনোড়া একসঙ্গে থাকলে ঠোকাঠুকি লাগবেই। অর্থাৎ, বৈবাহিক জীবনে ঝগড়া, মনোমালিন্য এসব চলতেই থাকে। এতে সম্পর্ক ভেঙে যায় না। কিন্তু ঝগড়া-অশান্তি মাত্রাছাড়া হলেই বিপত্তি। একই ছাদের তলায়, একই বিছানায় রাত কাটালেও শারীরিক কিংবা মানসিক ভাবে স্বামী-স্ত্রী দুই মেরুতে অবস্থান করেন। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় বরফ-শীতল সম্পর্ক।

এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। দুই বন্ধুর মধ্যে এক বন্ধুকে বলতে শোনা গেল, ‘রেস্তোরাঁয় ফিরে চল, বাড়ি যেতে ভালো লাগছে না।'

– ‘কেন?'

'বিকজ, নোবডি ইজ ওয়েটিং ফর মি দেয়ার।'

অর্থাৎ, কোনও দাম্পত্য সমস্যা থেকেই জনৈক বন্ধুর ওই আক্ষেপ-পূর্ণ সংলাপ। অবশ্য শুধু ওই ব্যক্তি একা নন, খোঁজখবর নিলে এমন আরও অনেকের কাছ থেকেই দাম্পত্য-অসুখের কথা শোনা যাবে। হয়তো এই অসুখী দম্পতির সংখ্যাটা পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তবে, অসুখী দাম্পত্যের পরিণতি যে সবার ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়, এমন নয়। কিন্তু অশান্তি চরম পর্যায়ে যাওয়া মানেই স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ক্ষতি।

আসলে, পরিপূর্ণ সুখ না পেলেও, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে শান্তিতে বেঁচে থাকাটাই কাম্য। কারণ, জীবন বহমান। মানসিক চাপ নিতে- নিতে কখন যে যৌবন উবে গিয়ে বার্ধক্য স্বাগত জানাবে, তা টেরও পাওয়া যাবে না। অথচ, জন্ম থেকে স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের মধ্যে, বিবাহিত জীবনের মেয়াদ-ই বেশি। তাই এই বিবাহিত জীবনে অসুখী হওয়া মানে, জীবনটাই বৃথা হয়ে যায়। অতএব, দাম্পত্য জীবনে সমস্যামুক্ত থাকতে হবে।

দাম্পত্যে অসুখী থাকার পিছনে নানারকম সমস্যা থাকে। কারও আর্থিক, কারও মানসিক, কারও শারীরিক, কারও-বা আবার থাকে সাংসারিক ঝামেলা। অনেকের দাম্পত্যে আবার সমস্যা তৈরি হয় নিজেদের ভুলের জন্য। কীভাবে দাম্পত্য-জীবনকে সুখী করতে হয়, সেই আদবকৌশল জানেন না অনেকে কিংবা অনেকে বেশি আত্মকেন্দ্রিক কিংবা কেরিয়ারিস্ট হওয়ার কারণে, জীবনসঙ্গীকে অবহেলা করেন এবং এর মাশুল গোনেন, বঞ্চিত হন সঠিক দাম্পত্যসুখ থেকে।

উষ্ণতা ফেরানোর পরামর্শ

  • শুধু সোশ্যাল স্টেটাস বজায় রাখার জন্য বিয়ে করবেন না। সঙ্গীকে আন্তরিক ভাবে ভালোবাসতে না পারলে কিংবা পছন্দ না করলে বিয়ে করা উচিত নয়। আর যদি তাই ঘটে থাকে, তাহলে সঙ্গীর ভালো গুণগুলির কথা ভেবে নতুন ভাবে ভালোবাসতে শুরু করুন এবং দাম্পত্যে উষ্ণতা উদ্ধার করুন।
  • সম্পর্কের অবনতি ঘটলে, এর কারণ অনুসন্ধান করুন। কারণ খুঁজে পেলে, হয় নিজে সমস্যার সমাধান করুন অথবা মনস্তাত্ত্বিকের পরামর্শ নিন।
  • আর্থিক কারণে যদি দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি ঘটে, তাহলে হয় দুজনে আলোচনার মাধ্যমে আয় এবং খরচের মধ্যে ভারসাম্য রেখে সমস্যা দূর করুন, নয়তো আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজুন।
  • শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ কিংবা পরিবারের অন্য কারওর সঙ্গে যদি মানিয়ে না নিতে পারার কারণে মানসিক সমস্যা হয়, তাহলে জীবনসঙ্গীর উপর অভিমানে মুখ ভার না করে, বরং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যামুক্ত হোন।
  • একে-অপরকে স্পেস দিন, সম্মান দিন এবং দোষ-ত্রুটি শুধরে নিয়ে ভালোবাসার চেষ্টা করুন।
  • রাগ, জেদ কমান। ধৈর্য রেখে সমস্যার সমাধান করুন। সমস্যা যতই গভীর হোক, ভেঙে না পড়ে ঠান্ডা মাথায় সমস্যা কাটাবার চেষ্টা করুন।
  • অহেতুক সন্দেহ করবেন না, পরস্পরের উপর বিশ্বাস রাখুন।
  • কোনও অনুষ্ঠান-উপলক্ষ্য ছাড়াই সঙ্গীকে উপহার দিন তার পছন্দের সামগ্রী।
  • দৈনন্দিন একঘেয়েমি কাটানোর জন্য মাঝেমধ্যে দুজনে রেস্তোরাঁয় খান এবং দূরে কোথাও বেড়াতে যান।
  • সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখার জন্য সেক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, শারীরিক তৃপ্তিলাভের চেষ্টা করুন। এরজন্য শারীরিক-মানসিক সুস্থতা জরুরি। যদি দুজনের কারও স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে, তাহলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগমুক্ত হোন। আর যৌনসঙ্গমের আগে সঠিক তৃপ্তিলাভের জন্য ফোরপ্লে জরুরি। তবে সঙ্গীর পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে জেনে-বুঝে নিয়ে তারপর শারীরিক মিলনে লিপ্ত হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, কোনওরকম হঠকারী পদক্ষেপ শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে কাম্য নয়। সঙ্গীর অপছন্দের কোনও কিছু থাকলে, সেই বিষয়ে জোর খাটাবেন না। এতে, সঙ্গী মানসিক আঘাত পেতে পারেন এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।

সম্পর্কে উষ্ণতা বজায় রাখার জন্য সবদিক বিচার-বিবেচনা করে চলা উচিত। বিশেষ করে, দৈনন্দিন একঘেয়েমি কাটানোর জন্য বয়সের কথা ভুলে শরীরে-মনে তারুণ্য বজায় রাখতে হবে। ইমেজ চেঞ্জ করতে হবে এবং প্রতিদিনই পরস্পরকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিয়ে এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটাও একটা শিল্প (আর্ট)। কারণ, বিয়ের প্রথম দিকে ভালোবাসা যতই নিবিড় থাকুক না কেন, সম্পর্কের বাঁধন একটি সরু সুতোর উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অতএব, বোধ-বুদ্ধিকে পুঁজি করে, আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সচল থেকে উষ্ণতা ফিরিয়ে আনতে হবে কিংবা উষ্ণতা ধরে রাখতে হবে দাম্পত্য সম্পর্কে।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...