স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য প্রত্যেকের জীবনে ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সপ্তাহে ১৫০ থেকে ৩০০ মিনিট মাঝারি শারীরিক ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর জন্য, সঠিক খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন যা প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে এবং শরীরকে ব্যায়াম-পরবর্তী ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে। দিনের বেলা বাদাম খাওয়া কীভাবে শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ওয়ার্ক-আউট সেশনের পরে ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে, সেই বিষয়টি গবেষণার মাধ্যমে যথাযথভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। গবেষণায় আরও দেখানো হয়েছে যে, বাদাম খেলে সিরাম ক্রিয়েটাইন কিনেসের (পেশীর ক্ষতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত) মাত্রা কম থাকে এবং ব্যায়ামের পরে মানসিক অবস্থা উন্নত হয়। গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, স্পোর্টস নিউট্রিশন স্ট্র্যাটেজি`র অংশ হিসাবে বাদাম খাওয়া উচিত।
ক্যালিফোর্নিয়ার আমন্ড বোর্ড -এর গবেষণা দেখিয়েছে যে, বাদাম একটি নিখুঁত স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এটি আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের একটি অংশ হওয়া উচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামে ফাইবার ৩.৫ গ্রাম এবং ১৫টি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে (প্রতি ১০০ গ্রাম / ৩০ গ্রাম পরিবেশন): ম্যাগনেসিয়াম (২৭০ / ৮১ মিলিগ্রাম), পটাসিয়াম (৭৩৩ / ২২০ মিলিগ্রাম) এবং ভিটামিন ই (২৫.৬ / ৭.৭ মিলিগ্রাম) এগুলিকে একটি নিখুঁত পুষ্টিসমৃদ্ধ স্ন্যাকস হিসেবে গড়ে তোলে। বাদামে (২৮ গ্রাম) ১৩ গ্রাম মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং মাত্র ১ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। বাদাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা টিকিয়ে রাখতে এবং লাইফস্টাইল রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, যা ভারতে প্রধান স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
হেলথ প্রফেশনালদের সঙ্গে যুক্ত হবার লক্ষ্যে, ইন্ডিয়ান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশন, বেঙ্গল চ্যাপ্টার এবং ক্যালিফোর্নিয়ার আমন্ড বোর্ড বাদাম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে একটি সেশনের আয়োজন করেছিল। আমন্ড বোর্ড অফ ক্যালিফোর্নিয়ার দ্বারা অর্থায়ন করা দুটি গবেষণা অনুসারে, রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে, দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণ করতে, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার কার্যকারিতা বাড়াতে, পেশি পুনর্গঠনে এবং ব্যায়াম থেকে ক্লান্তি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাদাম। এই সেশনে ম্যাক্স হেলথকেয়ার-এর রিজিওনাল হেড, ডায়েটিক্স রিতিকা সমাদ্দার গবেষণার ফলাফলের ওপর জোর দেন।সেশনটি পরিচালনা করেন বি.এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার-এর হেড ডায়েটিশিয়ান এবং আইডিএ বেঙ্গল চ্যাপ্টার-এর কনভেনর মালবিকা দত্ত।
কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক কেভিন হুইলানের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়, গবেষকরা অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা বৈচিত্র্য এবং অন্ত্রের ট্রানজিট সময়ের ওপর সম্পূর্ণ বাদাম এবং বাদামের প্রভাব নির্ধারণের জন্য গবেষণা করেছেন।গবেষণায় পরীক্ষা করা হয়েছে যে, কীভাবে অন্ত্রের জীবাণুগুলি বাদামকে ভেঙে বুটিরেট তৈরি করে। একটি নির্দিষ্ট মাইক্রোবায়োটা প্রোডাক্ট বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যগত সাহায্যের সঙ্গে যুক্ত।গবেষকরা বাদামের প্রিবায়োটিক প্রভাব এবং বাদাম প্রক্রিয়াকরণের কার্যকর সাতাশি জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্করা এতে অংশগ্রহণ করেন এবং নিয়ন্ত্রণ হিসেবে ৫৬ গ্রাম/ডি গোটা বাদাম, ৫৬ গ্রাম/ডি গ্রাউন্ড বাদাম বা একটি আইসোক্যালোরিক স্ন্যাক মাফিন গ্রহণ করেন। বেসলাইন এবং এন্ডপয়েন্ট পরিমাপের মধ্যে রয়েছে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা কম্পোজিশন ও তার বৈচিত্র্য, শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড, উদ্বায়ী জৈব যৌগ (ভিওসি), অন্ত্রের ট্রানজিট সময়, স্টুল আউটপুট এবং অন্ত্রের লক্ষণ (এন=৮৭)। একটি উপগোষ্ঠী (এন=৩১) পূর্বকল্পিত লিপিড রিলিজের সঙ্গে পার্টিকেল সাইজ ডিস্ট্রিবিউশন (পিএসডি)-এর ওপর বাদাম ফর্ম, গ্রাউন্ড বা হোল, এর প্রভাবের জন্য পরিমাপ করা হয়েছিল। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, যারা বাদাম খেয়েছিল তারা বুটিরেটের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি অনুভব করেছে, কোলনে পাওয়া একটি শর্ট চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে, সেইসঙ্গে স্টুল ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করে। বাদামে খাদ্যতালিকাগত ফাইবার থাকে যা সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের অন্ত্রে বুটিরেটের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলস্বরূপ, বাদাম ভালো ভাবে সহ্য করা যায় এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণগুলির দিকে পরিচালিত করে না, যা নির্দেশ করে যে, বাদামের ব্যবহার কোনওরকমের বিরূপ প্রভাবের কারণ ছাড়াই ফাইবার বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে।
এই গবেষণার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে, দিল্লি`র ম্যাক্স হেলথকেয়ার-এর রিজিওনাল হেড, ডায়েটিক্স রিতিকা সমাদ্দার জানিয়েছেন, ‘একটি সুস্থ অন্ত্র একটি ভালো রোগ প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিভিন্ন কারণে অন্ত্রে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে।যার ফলে অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার তুলনায় খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমান বৃদ্ধি পেতে পারে৷ এই ঘটনাটি একজনের স্বাস্থ্যের উপর বেশ কিছু ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে।ভালো অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য, আমরা যে খাবারগুলি খাই সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণাটি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় বাদামের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি উপায় হতে পারে।বাদাম ফাইবার যা মাইক্রোবায়োটার কার্যকারিতার ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্যকে ইতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা থাকছে।’
অ্যাপালাচিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর, হিউম্যান পারফরম্যান্স ল্যাবরেটরি, ডা. ডেভিড সি. নিম্যান দ্বারা তৈরি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, বাদাম খাওয়ার ফলে ক্লান্তির অনুভূতি কমে যায় এবং পায়ে এবং পিঠের নিচের দিকের অংশে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এই পরীক্ষায়, গবেষকরা ৪৬ বছর বয়সি ৬৪ জন অ-স্থূল প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এমন অংশগ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যারা প্রতি সপ্তাহে তিন (৩) সেশনের কম ব্যায়াম করেন। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা (এন = ৩৩) ৪ সপ্তাহের জন্য সকাল এবং বিকেল মিলিয়ে প্রতিদিন ৫৭ গ্রাম (২ আউন্স) বাদাম খেতেন।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, বাদাম ভোক্তারা ব্যায়াম-পরবর্তী ক্লান্তি এবং উত্তেজনা প্রশমনের পাশাপাশি পায়ের পিছনের শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। সিরাম ক্রিয়েটাইন কিনেস, যা পেশি`র ক্ষতির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়, ব্যায়ামের একদিন পরে, সেগুলি`র মাত্রা কমে যায়। অক্সিলিপিন ১২,১৩-ডাইহোম-এর উচ্চ মাত্রা এবং অক্সিলিপিন ৯,১০-ডাইহোম-এর নিম্ন মাত্রা তৈরি হয়। বড়ো অন্ত্রে প্রাপ্ত কিছু ফেনোলিক্স প্রস্রাবের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটায়।