সব ধর্মই চায় নারীরা দুর্বল হোক এবং এই কারণেই ধর্মের প্রতারকরা বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। তারা বলে যে, ধর্মের উপাসনা বাড়িতে আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে আসে, বাচ্চারা সুস্থ থাকে, মেয়েরা ভালো বর পায়, অসুস্থদের নিরাময় করে। যে কোনও কাজ করতে নাকি পুরুষরা কম সময় ব্যয় করে, নারীরা বেশি সময় ব্যয় করে। এটা কি কর্মরত নারীদের বিরুদ্ধে সমাজের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র নয়? অথচ যাদের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র তারা কি আদৌ বুঝতে পারেন এটা একটা বৈষম্য তৈরির বিশেষ পন্থা। ধর্মের পাষণ্ডরা মনে করেন নারীদের জন্য বাইরের জগত নয়, তাদের উচিত সংসারধর্ম পালন করে পুজোপাঠ, ধর্মে সময় ব্যয় করা উচিত।
এদিকে আজকের যুগের নারীরা অনেক বেশি আধুনিক চিন্তাধারার, মহিলারা সংসার সামলিয়ে বাইরে চাকরি করাই পছন্দ করেন বেশি। সন্তান ছোট থাকতে তারা শিশুর জন্য বেবি সিটার বা বেবি কেয়ার নিয়োগ করেন এবং এর পরে মহিলারা অনায়াসেই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। মহিলাদের এই সত্যকে স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে তাদের প্রাপ্ত বেতন শিশুর যত্ন এবং গৃহপরিচারিকাদের জন্য ব্যয় হবে। সেই সময়ে তাদের যা করতে হবে তা হল, তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়া কারণ এটিই একমাত্র উপায় যা তাদের বাইরের বিশ্বের সাথে এবং সংযুক্ত রাখবে এবং পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার প্রেরণা জোগাবে, একসাথে চলার সুযোগ করে দেবে। সময় পরিবর্তিত হয়েছে দিল্লির প্যাটেল নগরের বাসিন্দা নীতি জানান, তিনি একটি নিউজ চ্যানেলে কাজ করছেন। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, তিনি সবসময় ভয় পেতেন যে সন্তান হওয়ার পরে তিনি কি তার কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেন? কিন্তু গৃহপরিচারিকা এবং বেবি সিটারদের সহায়তায়, তিনি বাড়ি এবং বাইরের কাজ উভয়ই ভালোভাবে পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, নারীদের সবসময় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। এজন্য বিয়ের পরও তাদের চাকরি করা জরুরি। নারীদের জন্য চাকরি পাওয়া এবং একসাথে বাড়ি ও সন্তানের যত্ন নেওয়া সহজ কাজ নয়, তবে নতুন যুগের মহিলারা এটি ভালোভাবেই করে দেখিয়েছেন। মহিলাদের উচিত তাদের সঙ্গীকে বলা যে সন্তান উভয়েরই, তাই দায়িত্বও উভয়ের, মহিলার একার নয়। সুগার কসমেটিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিনীতা আগরওয়াল এবং মামা আর্থের মালিক কাজল আলঘের নাম ভুলে যাওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির কথা যদি বলি, তাহলে অঞ্জনা ওম কাশ্যপের মতো উচ্চপদে কর্মরত মহিলারাও বিবাহিত, তবুও তাঁরা সকলেই বাড়ি এবং চাকরি উভয় ক্ষেত্রেই সমান দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। ভারতের অনেক রাজ্য ও শহরে এমন অনেক মহিলা রয়েছেন যারা খাবারের স্টল স্থাপন করে নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন। তারা কেবল তাদের নিজের ব্যয় বহন করেন না বরং তাদের পরিবারের প্রয়োজনের পুরো যত্ন নেন। দিল্লির লাজপত নগরে এমনই একটি স্টল চালান এক মহিলা, যিনি মোমোর জন্য বিখ্যাত। তিনি ‘দোলমা আন্টি’ নামে পরিচিত। আমরা আমাদের চারপাশে অনেক মহিলাকেই দেখি যারা লেবুরজল, জুস, লসসি এবং চা ইত্যাদির স্টল চালাচ্ছেন। এই নারীরাই আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এই মহিলারা সেই সমস্ত মহিলাদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যারা বিয়ের পরে চাকরি ছেড়ে ঘরে নিজেকে নিযুক্ত রেখেছেন এবং তাদের কেরিয়ারও আজ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিবাহিত মহিলারা পার্ট-টাইম হিসাবে অনেক কিছু করতে পারেন। এই কাজগুলি বাড়িতে বসেও করা যেতে পারে। সাধারণত এই কাজগুলো কয়েক ঘণ্টার হয় যেমন লেখালেখি, প্রুফ রিডিং, এডিটিং, টাইপিং ইত্যাদি। পার্ট-টাইম কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনার কাছে সেই কাজগুলি সম্পর্কিত সবরকম সামগ্রী রয়েছে যেমন প্রুফ রিডিং এবং লেখার জন্য টেবিল এবং চেয়ার প্রয়োজন। কর্মরতা নারীদের সুবিধা কর্মরত নারীরা যেমন আর্থিকভাবে সক্ষম, তেমনি চাকুরিজীবী হওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর ফলে মেয়েরা আরও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে কারণ তারা সমাজের অন্ধবিশ্বাস থেকে নিজেদের দূরে রাখে, তাই তাদের একটি ব্যক্তিত্ব রয়েছে। কর্মরত মহিলারা আনন্দে থাকেন এবং একই সাথে জীবনকে নতুন ভাবে দেখতে বিশ্বাস করেন। এ ছাড়া আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম: অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম কর্মজীবী নারীদের সমাজে আলাদা মর্যাদা রয়েছে। আর্থিকভাবে সক্ষম হওয়ার কারণে, তারা তাদের নিজস্ব আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা যা খুশি তাই কিনতে পারে। এজন্য তাদের স্বামীর ওপর নির্ভর করতে হয় না। বিয়ের পর নারীরা চাকরি না করলে ছোটখাটো প্রয়োজনে স্বামীর দিকে তাকাতে হয়, তার কাছে হাত পাততে হয়। মহিলাদের এটা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এই অস্বস্তি থেকে নিজেকে বের করে আনতে বিয়ের পরও তাদের কাজ করা উচিত। আর্থিকভাবে সক্ষম হওয়ার কারণে, তারা তাদের সন্তানদের ভালোভাবে লালন-পালন করতে পারে। এছাড়া আয়ের উৎস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসারে সঞ্চয় হতে শুরু করে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
|