ময়দানের সবাই তোমাকে চেনে। তোমার কত টপ টপ লেভেলে যোগাযোগ। কত রিপোর্টার বন্ধু।
পারবে না তুমি আমাকে চান্স করে দিতে? বলো সুকান্তদা বলো, পারবে না? তোমাকে পারতেই
হবে। আমার জন্য তোমাকে পারতেই হবে সুকান্তদা।”

অর্ক আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, সহসা চুপ করে যায়। অসহায় ভাবে ভাবলেশহীন ফ্যাল ফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকে সুকান্তদার চোখের দিকে। সুকান্ত লক্ষ্য করল, অর্কর দু’চোখের কোণে দু’ মুক্তদানা। দেখে জেদ চেপে গেল তার।

বলল, “কাঁদিস না রাসকেল। চোখের জল ফেলে চ্যালেঞ্জ জেতা যায় না। বুক চিতিয়ে উঠে
দাঁড়া। কাল থেকে তোর অন্যরূপ দেখতে চাই আমি। তোকে এ ডিভিশনে খেলাবই আমি।
বাকিটা তোর। ডবল সেঞ্চুরি তোকে করতেই হবে। কিন্তু তার আগে বল, তুই বেঁটে বলে তোর
নিজের কোনও কমপ্লেক্স নেই তো?”

‘একটুও না। অর্কর কণ্ঠস্বরে যেন আর্মিতে ট্রেনিংয়ে আসা যুবকের মতো দৃপ্ত দ্যোতনা লক্ষ্য
করল ওর সুকান্তদা।

সে বলল, “সাবাশ! বেঁটে, কালো, মোটা এসব নিয়ে কমপ্লেক্সে ভোগে কাপুরুষেরা। কাপুরুষ
কখনও যুদ্ধে জয়ী হতে পারে না। যুদ্ধ জয়ের জন্য তাই বীরপুরুষকে জন্ম নিতে হয়। জন্মেই তো কেউ বীরপুরুষ হয় না। তিল তিল করে নিজেকে বীরপুরুষ তৈরি করে নিতে হয়। তোর
ভেতরে আগুন আছে। আলো আছে। হীরকদ্যুতি আছে। ভাবিস না। নিজের ভিতরে যে-শক্তি
আছে সেই শক্তিকে চিনে নিতে শেখ। যে-সুচন্দ্রা তোকে প্রেমে শর্ত দিয়েছে, নো ডাউট, সে
মেয়ের ম্যাচুরিটি স্কুল লেভেলের। দেখবি, তোর ভিতরের আগুন যখন বাইরে আলো হয়ে ঠিকরে
বেরোবে— ওই মেয়েই পতঙ্গের মতো এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

সুকান্ত অর্কর চেয়ে প্রায় দশ বছরের বড়ো হবে। বছর বত্রিশ তেত্রিশ হবে। খুব ভালো ক্লাব
সংগঠক। পদকজয়ী সাঁতারু। সেই সুবাদে একটা বড়ো কর্পোরেট হাউসের পিআরও। চৌকশ। কম বয়সিদের সঙ্গে মেশে। একটু গার্জেন গার্জেন ভাব আছে। ভালোবাসাও আছে। মানে অর্কর
সুকান্তদা ভালোবাসতে জানে। দরদি মন আছে। চেনা-অচেনা সব মানুষের বিপদে ধূমকেতুর
মতো উদয় হয় সুকান্ত। খুব বেপরোয়া। একরোখা মানুষ। অন্যায় একেবারেই বরদাস্ত করে না।
তাই সবাই ওর সুকান্তদাকে সমঝে চলে। তা বলে সুকান্ত মস্তানি করে না। ধীর গম্ভীর গলায়
এমন যুক্তি দিয়ে বলবে, তাতেই বাজিমাত হয়ে যায়।

সুকান্ত অর্কর পিঠে হাত রাখে। বলে, 'সোজা বাড়ি যাবি। আর ঠেকবাজি নয়। আড্ডা ঠেকবাজি সব বন্ধ। কাল ভোর সাড়ে চারটে। ট্র্যাক স্যুট পরে রেডি থাকিস। মনে করবি তোকে সীমান্তে
যুদ্ধে যেতে হবে। তেমনই মিলিটারি কমান্ডোর মতো ট্রেনিং নে। নেভার কল ইট প্র্যাকটিস।
ইটস আ কমান্ডো ট্রেনিং। আ মোস্ট ডিসিপ্লিনড ডেইলি লাইফ।

অর্ক নানা পাটেকরের প্রহার সিনেমাটা দেখেছে। দেখেছে, কমান্ডো ট্রেনিং কী জিনিস। আর
দেখেছে ট্রেইনার নানা পাটেকরকে। অর্ক ওর সুকান্তদার মধ্যে নানা পাটেকরকেই যেন দেখছে
এখন। নিজেকেও মনে মনে সে ট্রেনি কমান্ডো ভেবে নেয়। নিজেকে চাবুক কষাতে শুরু করে।
দু’বেলা মাঠে যায়। ঘরে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ চলে শ্যাডো প্র্যাকটিস।

সুকান্তদার কথামতো নেট থেকে শচীনের রিমার্কেবল খেলাগুলো ডাউনলোড করে ওর ঘরের স্মার্ট টিভিতে ফেলে দেখছে। বারবার দেখছে। দেখছে বিশ্ব কাঁপানো লিটল মাস্টারের কবজি ঘোরানো, স্কোয়ার কাট করার কায়দা। সবই দেখা। তবু দেখার যেন শেষ নেই। ওকে যে শচীন হতেই হবে। সুচন্দ্রাকে পেতে হবে। হ্যাঁ, সুচন্দ্রাই অর্ককে পরোক্ষে গড়ে পিঠে নিচ্ছে। আসল প্রেরণা সুচন্দ্রা। চিবুক চোয়াল শক্ত করে একা ঘরে নিজে নিজেই কথা বলে ওঠে অর্ক। বলে, “ইউ আর মাই অ্যাকচুয়াল ইন্সপিরেশন। আই লভ ইউ সুচন্দ্রা। আই ওয়ান্ট ইউ বাই হুক অর বাই ক্রুক।

আই ওয়ান্ট ইউ অ্যাট এনি কস্ট। ইউ আর মোস্ট ওয়ান্টেড। তোমাকে চাই, তোমাকে চাই,
তোমাকে চাই।”

ক্রমশ…

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...