সত্যিই অর্ককে আর চেনা যায় না। সকালে ময়দান থেকে ফিরে ইউনিভার্সিটি। সেখান থেকে ফিরে জিমে। ওর সুকান্তদা অফিস থেকে ফিরে জিমে না আসা পর্যন্ত ও ওয়ার্কআউট চালিয়ে যায়। ডায়েট চলে সুকান্তদার পরামর্শ মতোই। আগে একদিন সুচন্দ্রাকে না দেখলে সে ছটফট করেছে। সুচন্দ্রার কোচিংয়ে গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেছে। এখন সেই সুচন্দ্রার চাবুক খেয়েই অর্ক যেন অন্য মানুষ হয়ে গেছে।

সুকান্তদা বলেছে, “তোকে এ ডিভিশনে খেলাব আমি। ডবল সেঞ্চুরি করে দেখাবি তুই। ডোন্ট ফরগেট ইওর টার্গেট।’ না টার্গেট ভুলবে না অর্ক। এ তার ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা।

একদিন জিম থেকে ফেরার পথে রিংকির সঙ্গে দৈবাৎ দেখা হয়ে গেল অর্কর। রিংকি ছুটে এসে অর্কর হাত চেপে ধরে। বলে, ‘এই পাকড়াও করেছি। ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট। কোথায় থাকিস তুই? দেখতেই পাই না।’ রিংকির কাছে ওর ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা নিয়ে মুখ খোলে না। বলে, ‘আমি একটা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত আছি৷ এটা ট্রেনিং পিরিয়ড বলতে পারিস।’

‘ও তাই? কোনও জবে জয়েন করেছিস? তা তোর এগজাম?”

‘এগজাম হবে। প্রিপারেশন নিচ্ছি।’

‘তুই তো হঠাৎ-ই ডুমুরের ফুল হয়ে গেলি, এদিকে তোর সুচন্দ্রা সেদিন বলছিল, কী রে রিংকি, তোর সেই রোমিও দাদাকে তো আর দেখি না। সে কি মজনুর মতো দিওয়ানা হয়ে দেশত্যাগী হল নাকি?’ শুনে অর্কর ভেতরে খুশির ছোঁয়া লাগলেও কৌতূহলের টুটি টিপে ধরে সে। কথাটা যেন কানে তেমন ঢুকল না, সেই ভান করে বলল, ‘বলছিল বুঝি?’

অর্কর এমন নির্লিপ্তভাব আর দায়সারা উত্তরে রিংকি বেশ দমে যায়। বলে, ‘অর্ক, তুই অনেক বদলে গেছিস রে। সেই আগের অর্ককে আর চেনাই যায় না। অর্ক আলগা একটা হাসি ছড়িয়ে দেয় মুখে। কিছু বলে না। কিন্তু অর্কর অভ্যন্তর বেশ মুখর হয়ে ওঠে। সে মনে মনে বলে, “তুই কী বুঝবি রিংকি ? বদলে না গেলে বদলা নেওয়া যায় না। সুকান্তদা আমার দিবানিদ্রা ছুটিয়ে দিয়েছে। শুয়ে শুয়ে আকাশকুসুম কল্পনা করলে মানুষ কোনওদিনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।”

রিংকি ফের নাড়া দেয় অর্ককে। বলে, ‘কোন ভাবের জগতে আছিস বলতো? আজকাল কবিতা লিখছিস নাকি?” রিংকির একথারও কোনও উত্তর দেয় না অর্ক। স্মিত হাসে। রিংকি এবার পুরোপুরি দমে যায়। ‘ঠিক আছে ভালো থাকিস। চলি।” বলে চলে যায় রিংকি।

সুচন্দ্রা তার খোঁজ নিয়েছে জেনে খুশিতে দুলে ওঠে অর্কর ভেতরটা। রিংকি যেন অর্ককে খুঁচিয়ে দিয়ে গেল। কতদিন দেখেনি সে তার সুচন্দ্রাকে। ভাবে, একবার ওর কোচিংয়ের রাস্তা দিয়ে হেঁটে ঘুরে এলে কেমন হয়? তখনই সুকান্তদার পাথরে খোদাই করার মতো কঠিন মুখটা মনে পড়ে অর্কর। শপথভঙ্গ হয়েছে শুনলে সুকান্তদা আর কোনওদিনও অর্কর মুখদর্শন করবে না। সুতরাং অ্যাবাউট টার্ন। চল সন্ন্যাসী মন্দির মে….

একনিষ্ঠতা ও অধ্যবসায় অর্কর সামনে দিগন্ত খুলে দিল। সেইসঙ্গে ওর সুকান্তদার আপ্রাণ চেষ্টায় অর্ক বলতে গেলে ওর স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপে পৌঁছে গেল। দু’মাসের মাথায় কলকাতার আগুয়ান ক্লাবের এ ডিভিশনে চোদ্দোজনের মধ্যে ঢুকে পড়ল অর্ক। সবই হয়েছে ওর সুকান্তদার চেষ্টায়। হবে না? নামকরা স্পোর্টস জার্নালিস্ট সুনন্দ রায়ের জোরালো সুপারিশ। তিনি নাকি কোচ অভিরূপদাকে লিখেছেন, একখণ্ড হিরে পাঠালাম আপনার জন্য। অর্কর সারা শরীরজুড়ে ক্রিকেট। ওর শরীরী ভাষাই হল ক্রিকেট। ব্যাটসম্যান। জহুরি জহর চেনেন। তেমনই কোচ অভিরূপদা চিনে কাছে টেনে নিলেন অর্ককে। সামনের সিজনেই অর্ককে তিনি খেলাবেন সুকান্তদাকে জানিয়ে দিয়েছেন।

অর্ক উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে৷ সুকান্তদা বলল, ‘সত্যি অর্ক, তুই নিজেকে অনেক গড়েপিটে নিয়েছিস। আমি কিন্তু এতটা আশা করিনি। তুই যে এভাবে ক্রিকেটকে ধ্যানজ্ঞান করে নিতে পারবি, সত্যিই ভাবিনি আমি৷’ অর্ক ভেতরে ভেতরে হাসে। মনে মনে বলে, ‘সুকান্তদা, আমার ধ্যানজ্ঞান সুচন্দ্রা। বাইরে চাবুক কষিয়েছ তুমি। আর আমাকে ভেতরে ভেতরে চাবকেছে সুচন্দ্রা। তুমি জানো না সুকান্তদা, সুচন্দ্রার মতো মেয়ের প্রেমে যারা পড়ে, তারা এর চেয়েও বেশি কামাল করতে পারে৷’

ক্রমশ…

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...