আমাদের দেহের সবচেয়ে প্রসারিত অংশ আমাদের ত্বক এবং এই ত্বকই দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে সুরক্ষিত রাখে। অথচ এই ত্বকেরই আমরা ঠিকমতো যত্ন নিই না। এই প্রচণ্ড গরমে প্রখর সূর্যরশ্মি ত্বকের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে ত্বককে প্রায় ঝলসে দেয়। এই সময় ত্বকে নানান সমস্যা দেখা দেয় যেমন, ট্যানিং, অ্যালার্জি, ব্রণ, ফুসকুড়ি, কালো ছোপ ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলি থেকে রেহাই পেতে, দিনে অন্তত দু’বার স্নান একান্ত দরকার। গরমে ঘাম হয়। ঘামের মাধ্যমে শরীরের মধ্যেকার দূষিত পদার্থ বেরিয়ে আসে। ঘামের মূল উপাদান জল, যার সঙ্গে মিশে থাকে বিভিন্ন লবণজাতীয় পদার্থ। এগুলি ত্বকে ইনফেকশন ছড়ায়, সেইসঙ্গে দুর্গন্ধ ৷ যখনই রোদ থেকে ফিরবেন কিছুক্ষণ ঠান্ডায় থাকার পর ভালো কোনও মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
সান প্রোটেকশন
রোদে বেরোনোর অন্তত ১৫ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান। সান প্রোটেকশন লোশনের মধ্যে ক্যালামাইন, টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইড বা জিংক অক্সাইড ব্যবহার করতে পারেন। গ্রীষ্মকালে ত্বকের সমস্যাগুলির মধ্যে যেগুলি সবচেয়ে বেশি হয়, সেগুলি হল—–
ডার্ক সার্কেল
রোদে বেরোনোর ফলে চোখের চারপাশে কালো ছোপ পড়ে। তবে এই ছোপ স্থায়ী কোনও সমস্যা নয়। শশা ও আলুর রস সমপরিমাণ নিয়ে ফ্রিজে ঠান্ডা করে, চোখের চারপাশে লাগাতে পারেন। ঠান্ডা টি-ব্যাগও লাগাতে পারেন।
ব্রণ ও অ্যাকনে
এই গরমে যাদের শুষ্ক ত্বক, তারাও ব্রণ ও অ্যাকনে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েন। ত্বকে গোটা বের হয়। এতে শুধু বিশ্রী দেখতেই লাগে না, ত্বকে স্থায়ী দাগ বা গর্ত হয়ে যেতে পারে। তাই খুব ভালো ভাবে যত্ন নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। পুদিনাপাতার রস অ্যাকনে ও ব্রণতে খুব ভালো কাজ দেয়। এই রস লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ শুকিয়ে গিয়ে কালো দাগ হয়ে গেলে ওই জায়গায় রসুনবাটা লাগিয়ে আঙুলের ডগায় একটু চাপ দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন, উপকার পাবেন। রসুন এবং পুদিনাপাতা দুটিই ত্বকের যে-কোনও ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপে চটকে মুখে ও হাত-পায়ের যে সমস্ত জায়গা রোদে পুড়ে কালো দাগ হয়েছে, সেখানে লাগাতে পারেন।
ত্বকের রিংকল
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই ত্বকে বলিরেখা দেখা যায়। এছাড়া রোদে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলেও ত্বকে বলিরেখা পড়ে যায়। এই অকাল বলিরেখা রোধ করার জন্য ত্বকের বিশেষ যত্ন নিন। সপ্তাহে অন্তত একদিন সরষেবাটার সঙ্গে কাঁচা দুধ মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে সারা গায়ে মেখে ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করে নিন। কারণ শুষ্ক ত্বকে বলিরেখা পড়ে তাড়াতাড়ি। আর গ্রীষ্মে ত্বককে সার্বিকভাবে সুস্থ রাখতে রোদ কম লাগান। আর রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে, ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিন।
সামার স্পেশাল টিপস
প্রখর গ্রীষ্মে ত্বকের যত্ন নেওয়ার আগে আপনাকে জানতে হবে আপনার ত্বকের প্রকৃতি। এটি জানার পর খুব সহজেই আপনার কিচেন গার্ডেন থেকেই ত্বকচর্চার উপকরণ জোগাড় করে, হয়ে উঠতে পারেন সুন্দর ত্বকের অধিকারিণী। হাতের কাছেই রাখুন শশার রস, অ্যালোভেরা, পাতিলেবু, মিল্ক পাউডার, দই, কাঁচা হলুদ, চন্দন, ওটমিল, গাজর, মধু, পুদিনা, তুলসীপাতা ইত্যাদি। এগুলির সঠিক প্রয়োগ আপনার ত্বককে কোমল, উজ্জ্বল ও নমনীয় করে তুলবে।
সামার ব্লিচ
কাঁচাদুধ, মধু সমপরিমাণ ও তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মুখে, হাতে, পায়ে মেখে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক ব্লিচ। যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তারা এই ব্লিচ ব্যবহার করে উপকার পাবেন ।
সামার স্কিন স্ক্রাব
ডেড সেল, সিবাম বা তৈলাক্ত পদার্থ, ধুলোবালি প্রভৃতি ত্বকের উপরের রোমছিদ্রগুলি বন্ধ করে দেয়। ফলে ত্বকের ভিতরের দূষিত পদার্থ ঘামের আকারে বেরোতে পারে না। আর পারে না বলেই, ত্বকের নানা সমস্যা দেখ দেয়। সামান্য ওটমিল পাউডার, কয়েকটা পুদিনাপাতা, কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস, সামান্য টক দই ও কোরানো গাজর একসঙ্গে মিশিয়ে সামার স্কিন স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
সামার স্পেশাল প্যাক
কাঁচা হলুদবাটা কিছুটা নিয়ে এতে চন্দনের গুঁড়ো, শশার রস ও কয়েকফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্রণ সারাতে ভালো কাজ দেয়। এই প্যাকের মধ্যে তুলসী অথবা সামান্য পুদিনাপাতাবাটা মিশিয়ে নিলে ঠান্ডাবোধ হবে ও ত্বকের ডেড সেল বা মরা কোশ উঠে গিয়ে ত্বক হয়ে উঠবে আরও মসৃণ ও উজ্জ্বল।
টোনিং
বাজারে বহু কোম্পানির রেডিমেড টোনার পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলিতে বেশিরভাগই অ্যালকোহল মিশ্রিত অ্যাস্ট্রিনজেন্ট থাকে। তাই ঘরোয়া টোনার তৈরি করতে, অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে সামান্য গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি শুধু টোনিং-এর কাজই করবে না, অ্যালার্জি, র্যাশও সারাবে।