ইন্টারনেটের এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ বিরল। ছোটো বড়ো সকলেই এখন সোশ্যাল মিডিয়ার অনুরাগী৷  বর্তমানের দৌড়াদৌড়ির জীবনে, যখন আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর অবকাশ নেই– তখন মানাজিক মাধ্যমই হয়ে উঠেছে কানেক্টেড থাকার আধার৷  আপনি অনেক দূরে বসেও, সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে প্রিয়জনের সঙ্গে সংযোগ করতে পারেন।কিন্তু বুঝতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে মানুষকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে, সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু অসুবিধাও রয়েছে যা সবসময় উপেক্ষা করা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতির কথা যদি বলা হয়, তাহলে সব বয়সের মানুষেরই ক্ষতি হয়, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বাড়ন্ত শিশুদের অর্থাৎ টিনএজারদের যাদের খারাপ ভালো বিচার করার বিচক্ষণতা তৈরি হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ার জগৎটাকে তারা বাস্তব জীবনের সঙ্গে এতটাই মিশিয়ে ফেলে যে,  তাদের ক্ষতির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়া প্রাপ্ত বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বেশ প্রভাব ফেলে। আসুন জেনে নিন সামাজিক মিডিয়া কী কী অসুবিধা সৃষ্টি করছে।

যদিও সোশ্যাল মিডিয়া  যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য একটি ভালো হাতিয়ার, তবে ডিজিটাল ভাবে যোগাযোগ রাখা এবং আপনার চারপাশের লোকেদের সঙ্গে মুখোমুখি যোগাযোগ বজায় রাখার মধ্যে একটি বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এই ধরনের মানুষেরা যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সাথে বেশি সংযুক্ত থাকে, তারা তাদের আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলতে বা যোগাযোগ বজায় রাখতে কম পছন্দ করে। যার কারণে বাস্তব জীবনের সম্পর্কে ফাটল দেখা যায়।তারা ক্রমশ একা হয়ে পড়ে৷ সুখ দুঃখগুলো বাস্তবিক ভাবে শেয়ার করার কোনও মানুষ পাশে থাকে না৷

সোশ্যাল মিডিয়ার এই ভার্চুয়াল লাইফ যেহেতু আত্মসুখ প্রদর্শন করার একটি পন্থা হয়ে গেছে, অন্যের সুখ দেখে এখন মানুষের মধ্যে ঈর্ষার অনুভূতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষ নিজের না পাওয়া গুলোর সঙ্গে অপরের পরিপূর্ণতা, তাদের সুখী জীবনের সঙ্গে নিজেদের অতৃপ্তির তুলনা করতে শুরু করে।এই তুলনার কারণেই  ঈর্ষার অনুভূতি শুরু হয়। তাদের আচরণের এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করা যেতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাব হল, সবসময় আপনার মনে হতে থাকে এমন কিছু করা উচিৎ যাতে সমাজ মাধ্যমে নজর কাড়া যায় এবং লোকেরা এটি দেখতে পায়। এই ভাবনা  আসামাত্র, আপনিও অন্যদের মতো, আপনার জীবনের সুখী দিকগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের কাছে দেখাতে শুরু করেন।এরপর প্রত্যাশিত সংখ্যায় লাইক আর কমেন্ট না এলেই  শুরু হয় মানসিক চাপ।

অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার ফলে অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে দুই সঙ্গী  একে অপরের সামাজিক মাধ্যমের উপর বিশেষ ভাবে দখলদারি দেখাতেও চেয়েছেন অনেক সময়। অনেক ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই জন্ম নেয় সন্দেহ। সেই সন্দেহের উপর ভর করেই একের পর এক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এমনকী বহু ক্ষেত্রে কেবল এই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের জন্য সম্পর্ক ভেঙে পর্যন্ত যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেন যে, সম্পর্কে থাকার সময় অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

আজকের ব্যস্ত সময়ে রোজ রোজ সামাজিকতা রক্ষা করা কঠিন৷ কারও বাড়ি গিয়ে বা বন্ধুরা নিয়মিত বসে আড্ডা দেওয়া কঠিন৷ সেক্ষেত্রে জনসংযোগের উপায় হিসেবে সামাজিক মাধ্যমের কোনও তুলনা নেই৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনের কিছুটা সময় কাটানো যেতেই পারে। তবে অনেকের অভ্যাস আছে সবসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকার। তারা নাওয়া খাওয়া ভুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটিয়ে দিতে পারেন। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম তাদের জীবনের সঙ্গে এমনই মিশে গেছে যে, একটা কাল্পনিক জীবশৈলীকেই তারা বাস্তব মনে করতে শুরু করেছেন। এই অভ্যাস আপনার সঙ্গীর বা পরিবারের মানুষদের ভালো না লাগাই স্বাভাবিক। কারণ আপনি তাদের সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও, তাদের উপস্থিতিকে গুরুত্ব না দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাচ্ছেন। আপনার সর্বক্ষণ অনলাইন থাকাটাও তাদের চোখে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকুন। এক্ষেত্রে যতটা দ্রুত সম্ভব এই অভ্যাস থেকে দূরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...