প্রফুল্ল সেন কলোনি থেকে বেরিয়ে ক্যাবে বসে কেতকী ঘোষণা করে দিলেন, এই মেয়ে আমি ঘরে তুলব না। আমার মুখের দিকে যেভাবে ও সোজাসুজি তাকাল তাতে মনে হল ও আমাকে পারলে গিলে খায়।

অবিনাশবাবু হেসে বললেন, “কেন ও তো তোমাকে মাসিমা বলে ডাকল। তুমি ওকে আমাদের রান্নাবান্না শিখিয়ে দেবে বললে… আমার তো মনে হল খুব ইন্টেলিজেন্ট মেয়েটা আর সোজাসুজি কথা বলে।’

—অত স্পষ্ট বক্তা মেয়ের দরকার নেই বাপু আমার। চ্যাপটা মুখ, জোড়াভুরু, ছোটো ছোটো চোখ। দশ জনের সামনে দাঁড় করানো যাবে না ওকে। আমার শুভমিতাকেই পছন্দ, স্পষ্ট বলে দিলুম।

অবিনাশবাবু তাকালেন ছেলের দিকে। ‘কী রে খোকা, তুই কী ভাবছিস?”

অরিত্র যা ভাবছিল তা মা-বাবাকে কী করে বলবে ও? মেয়েটা যে ওকে চোখ টিপে দিয়েছে সেটা আর কেউ না দেখুক, ওতো দেখে নিয়েছে। বহুদিন আগে শোনা কুমার শানু আর কবিতা কৃষ্ণমূর্তির গাওয়া সেই হিন্দি ছবির গানের কলিটাই মনে মনে ভাঁজছিল অরিত্র – ‘আঁখ মারে, ও লেড়কি আঁখ মারে/ দিল ধড়কায়ে, বিচ সড়ক মে নখরে দিখায়ে উয়ো সারে/ হো করকে ইশারে ও লেড়কি আঁখ মারে’।

গাজিয়াবাদের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট-এ কর্পোরেট ফাইন্যান্সিং পড়ায় অরিত্র। আইআইটি, আইআইএম-এর প্রোডাক্ট অরিত্র দাশগুপ্ত লম্বা, সুদর্শন, মৃদুভাষী, কর্তব্যনিষ্ঠ, উনত্রিশ বছরের যুবক। বছরে আঠাশ লাখ টাকার প্যাকেজ, পাণিপ্রার্থী যুবক, তার বাড়ির সামনে তো মেয়েদের লাইন লেগে যাবারই কথা! কিন্তু অরিত্র আঠারো ঘণ্টা ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করে এমন মেয়ে ঘরে আনতে চায় না। ও চায় এমন একটি ঘরোয়া মেয়ে যে নিজের শিক্ষার মর্যাদা দিতে দিনে কয়েক ঘন্টার জন্য ছোটোখাটো কোনও কাজ করুক ক্ষতি নেই কিন্তু ঘরেই বেশির ভাগ সময় থাকবে।

বড়ো কোম্পানিতে উচ্চ শিক্ষিতা যেসব মেয়েরা কাজ করে, তারা নিজের কেরিয়ার খারাপ করে হাউজওয়াইফ হতে রাজি নয়। কাজেই দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই-এ কর্মরতা হাজার হাজার উচ্চশিক্ষিতা বিবাহযোগ্যা মেয়েদের প্রলোভন এড়িয়ে দক্ষিণ কলকাতার গলি খুঁজিতে মেয়ে খুঁজতে বেরিয়েছে অরিত্র।

গুড ফ্রাইডের ছুটির সঙ্গে শনি আর রবিবারের ছুটি মিলিয়ে তিনটে দিন হাতে পেয়ে, প্লেনে করে বাবা-মাকে নিয়ে কলকাতা ছুটে এসেছে অরিত্র। যে-তিনটি মেয়েকে ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট ঘেঁটে কেতকী আর অবিনাশ আগে থেকেই শর্ট লিস্ট করে রেখেছিলেন, তাদের মধ্যেই একটি মেয়েকে পছন্দ করে যাবেন ওঁরা। থাকার ব্যবস্থা সল্টলেক সেক্টর ফাইভে ওদের ইন্সটিটিউট-এর গেস্ট হাউসেই করে নিয়েছে অরিত্র।

শুক্রবার বিকেলে বেলেঘাটায় একটি মেয়ে দেখে শনিবার বাকি দুটো মেয়ে দেখার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন অবিনাশ। বেলেঘাটার মেয়েটি দেখতে সুশ্রী, কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে এমএসসি করেছে, একটা প্রাইভেট স্কুলে পড়ায় সে। কেতকীর মেয়েটিকে একরকম পছন্দ হয়ে গিয়েছে। দিল্লিতে এলে ওকে কোনও স্কুলে ঢুকিয়ে দিতে পারবে অরিত্র। ওর নামটাও পছন্দ হয়েছে কেতকীর— শুভমিতা।

পরের দিন সকালে বাগুইআটির বর্ণালিকে দেখতে গেল ওরা। মেয়েটি বড্ড রোগা, চোখে চশমা, দমদম পার্কের কোনও এক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ইংরেজি পড়ায়। কথাবার্তা খুব গুছিয়ে বলতে পারে মেয়েটি যেটা ভালো শিক্ষিকা হবার জন্য প্রয়োজন। ওর ব্যাকগ্রাউন্ডও খুব ভালো, বাবা কাকা দাদারা সবাই স্কুল কলেজে পড়ান অথবা সরকারি চাকরি করেন। রংটাও বেশ ফরসা ছিল বর্ণালির, কিন্তু স্বাস্থ্যের কারণে ওকে ঘরে তুলতে ইচ্ছুক নন কেতকী। ছেলেপুলে যদি মায়ের মতো রোগা পটকা হয় তবে বাবা-মার আজীবন ভোগান্তি।

                                                                                                                                      চলবে….

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...