শান্ত-স্নিগ্ধ, বর্ণময় সাগরবেলা। দেখুন সূর্যোদয়। মুগ্ধ হবেন। সাগরপাড়ে সিল্ক শাড়ির মেলা দেখে, ফরাসি খাবারের স্বাদও নিতে পারেন। কাজু, কলা, নারকেল, কাঁঠাল প্রভৃতি গাছের ডালপালা আপনাকে স্বাগত জানাবে। সমুদ্রসৈকতের অনতিদূরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সুন্দর বাড়িঘর, বাগান, মন্দির আর টাইলস ও সিরামিক ফ্যাক্টরি দেখার অভিজ্ঞতাও অমলিন হয়ে থাকবে। অতএব, ঘুরে আসুন এই পাঁচ সাগরবেলায়।
চুনামবার বিচ
ফ্রান্সিস মার্টিন-এর হাতে গড়ে ওঠা শহর পুদুচেরি বা পণ্ডিচেরির চুনামবার বিচ একটি নব অন্বেষণ। তাই দল বেঁধে বেরিয়ে পড়েছিলাম চুনামবার সাগরবেলার উদ্দেশে। কলকাতা থেকে ট্রেনে চেন্নাই এবং ওখান থেকে ১৯৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌঁছেছিলাম পণ্ডিচেরি পর্যটন দফতরের গেস্টহাউসে। সুন্দর, সাজানো গোছানো চুনামবার গেস্টহাউসে পা রাখতেই মন আনন্দে নেচে উঠেছিল। তবে গেস্টহাউসে পৌঁছোতে রাত হওয়ায় সেদিন আর বেড়াবার সুযোগ পাইনি। পরের দিন খুব ভোরবেলা উঠেই পায়ে হেঁটে এগোলাম সমুদ্রের দিকে। পথে দেখে নিলাম ঋষি অরবিন্দের মহিমামণ্ডিত ছাই রঙের বাড়ি আর বাগানে ঘেরা অরবিন্দ আশ্রম। দারুণ। বাগানে বোগেনভিলিয়ার মাধুর্য চোখকে আরাম দিয়েছিল।
এরপর পৌঁছালাম সমুদ্রসৈকতে। শান্ত-স্নিগ্ধ, বর্ণময় সাগরবেলা। দেখলাম সূর্যোদয়। মুগ্ধ হলাম। দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ বিচ। সাগরবেলায় গান্ধি স্কোয়্যার-এ চোদ্দো ফিট উঁচু গান্ধি মূর্তি আর আটটি মনোলিথ পিলার দর্শনও করলাম চলার পথে। আকাশ ছুঁই-ছুই ২৯ মিটার উঁচু লাইটহাউস দেখার স্মৃতি আজও অমলিন। ২৮৪ মিটার লম্বা কংক্রিটের জেটিতে অনেককে সানবাথ এবং সি-বাথ নিতেও দেখলাম আমরা। সাগরপাড়ে সিল্ক শাড়ির মেলা দেখে, ফরাসি খাবারের স্বাদ নিয়ে ফিরলাম গেস্টহাউস-এ।
কীভাবে যাবেন : বায়ুপথে কিংবা রেলপথে প্রথমে চেন্নাই পৌঁছোন। ওখান থেকে ট্রেনে ১৯৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছোন পণ্ডিচেরির চুনামবার গেস্টহাউস-এ।
কোথায় থাকবেন : চুনামবারে অনেক বেসরকারি হোটেল রয়েছে, তবে সাগরপাড়ের সরকারি গেস্টহাউস-এ থাকার মজাই আলাদা।
যোগাযোগ : পণ্ডিচেরি টুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।
কোল্লাম
হাওড়া থেকে তিরুভনন্তপুরম এক্সপ্রেস ধরে পৌঁছোলাম কোল্লাম রেলস্টেশনে। ছিমছাম রেলস্টেশন। কেরলের বন্দরনগরী হিসাবে খ্যাত এই কোল্লাম-এ প্ল্যাটফর্ম-এর বাইরে আসতেই চোখে পড়ল ব্যস্ত জনজীবন। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও, ভ্রমণার্থীদের কোলাহলে মুখরিত চারিদিক। সেসব উপভোগ করতে করতেই গাড়ি ভাড়া করে আমরা চললাম কেরল টুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন-এর গেস্টহাউস-এর দিকে। কোল্লাম, রেলস্টেশন থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার পথ। গাড়ি চলল ব্যাক ওয়াটারকে পাশে রেখে। চোখকে আরাম দিল সবুজ গাছগাছালি। কাজু, কলা, নারকেল, কাঠাল প্রভৃতি গাছের ডালপালা যেন আমাদের স্বাগত জানাতে ব্যস্ত। চোখে পড়ল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সুন্দর বাড়িঘর, বাগান, মন্দির আর টাইলস ও সিরামিক ফ্যাক্টরি। স্নিগ্ধ লেকের পাড়ে গড়ে ওঠা পিকনিক ভিলেজটিও মন কাড়ল।
অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা পৌঁছোলাম কোল্লাম-এর বিচ গেস্টহাউস-এ। সমুদ্রতট ছুঁয়ে পাহাড়ের ঢালে গড়ে তোলা হয়েছে এই অতিথিশালা। স্নান-খাওয়া সেরে খানিক বিশ্রাম নিয়েই আমরা পৌঁছে গেলাম কোল্লাম সাগরবেলায়। দেখলাম মাছ ধরার চিনা জাল আর বিশালাকার কেব্রুভাল্লম নৌকো। এই নৌকো অতীতে পণ্যবাহী ছিল। এখন এই নৌকো ব্যবহার করা হয় প্রমোদ ভ্রমণের জন্য। সূর্যাস্তের পরে সেদিনের মতো সাগরবেলা থেকে গেস্টহাউস-এ ফিরতে হয়েছিল কারণ, সমুদ্রে তখন জোয়ার শুরু হয়। তবে পরেরদিন সূর্যোদয়ের পরে সমুদ্রে শরীর ডুবিয়ে কোল্লাম ভ্রমণের পূর্ণ আনন্দ নিয়েছিলাম।
কীভাবে যাবেন : হাওড়া থেকে তিরুভনন্তপুরম এক্সপ্রেস ধরে সোজা কোল্লাম স্টেশনে নামবেন। রেলস্টেশন থেকে অটো, ট্যাক্সি, বাস সবই যায় কোল্লাম বিচ গেস্টহাউস-এ। স্টেশন থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে।
কোথায় থাকবেন : কোল্লাম স্টেশন চত্বরে প্রচুর হোটেল আছে। থাকতে পারেন সেইসব হোটেলে। আর যদি সাগর পাড়ে থাকতে চান তাহলে কেরল টুরিজমের গেস্টহাউস-এ থাকার বন্দোবস্ত করুন।
যোগাযোগ : কেরল টিডিসি।
( ক্রমশঃ……)