অনেকক্ষণ ধরে স্কুলের বড়ো গেটটার বাইরে, ভাই ও ঝুপড়ির কতগুলো ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ের সাথে দাঁড়িয়েছিল চোদ্দ বছরের বুদি। বছর চোদ্দো হলেও বুদিকে যুবতি বলে ভুল হয়। অনেক ‘শিক্ষিত’, ‘সভ্য’ বাবুরাও মশকরা করে বলে— ‘ঝুপড়ি ঘরে এত সুন্দর একটা ‘মাল’ কীভাবে পয়দা হল মাইরি। মা-টা বোধহয় কোনও বাবুর ঘরে…’

এই সুবাদে স্কুলে মাঝেমধ্যেই কাজের সুযোগ পায় বুদি। মাস্টার, ক্লার্কদের চা-টা এনে দিয়ে দু’চার পয়সা বকশিস পায়। মাস্টারদের লোভাতুর চোখ বুদির উপর থাকলেও, পেশাগত অবস্থান চিন্তা করে তেমন কিছু একটা করে উঠতে পারে না তারা। তবে অশিক্ষক কর্মীরা মশকরা করতে ছাড়ে না। এইটুকু জীবনেই বুদি বুঝে গেছে, এইটুকু মশকরা মেনে না নিলে আয় বন্ধ, পিতৃহীন সংসার চলবে না। রুগ্ন মা ও ছোটো ভাইয়ের একমাত্র অবলম্বন সে।

আজ ২৬ জানুয়ারি। এই স্কুলের একটা আভিজাত্য আছে। স্কুলেরই প্রাক্তন মস্তান ছাত্র বর্তমানে এমএলএ হয়েছেন। তিনি নিজের স্কুলে পতাকা তুলে স্কুলকে গৌরবান্বিত করবেন। অন্যান্য বার পতাকা তোলার আগে একপ্রস্থ চা দিয়ে দু’একটা মিষ্টির প্যাকেট পায় বুদি। এবার এমএলএ আসবেন। ‘দেশপ্রাণ জননেতা’র সিকিউরিটির জন্য বুদিদের গেটের বাইরে আটকে দেওয়া হয়েছে। বুদি এতসব বোঝে না, প্যাকেটের লোভে দাঁড়িয়ে থাকে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েগুলোও চকোলেটের আশায় থাকে।

যথা সময়ের দু’ঘণ্টা পরে এমএলএ এসে পতাকা উত্তোলন করেন। শিশুদের মঙ্গল কামনায় দুর্দান্ত মানবতার ভাষণ দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় ৷

শিক্ষকরা চলে গেছেন। টুকিটাকি কাজের জন্য অশিক্ষক কর্মী, ডেকোরেটাররা মাঠে ঘোরাফেরা করে। অশিক্ষক কর্মীরা বুদিকে ডাকে। বলা হয় মাঠ থেকে চায়ের কাপ, মিষ্টির প্যাকেটগুলো তুলে বাইরে ফেলে দিতে।

বুদি ক’টা টাকার লোভে চায়ের কাপ, প্যাকেট জড়ো করতে থাকে। কোনও যুবতির দেওয়া ঢিলেঢালা, মাপে বড়ো নাইটির ভেতর থেকে উঁকি দেয় বুদির প্রাকযৌবনের বিকশিত স্তন। লোলুপ দৃষ্টিতে দেখতে থাকে স্কুলের কর্মীরা। ‘সস্নেহে’ আদর করার অছিলায় বুদিকে কাছে টানে।

শীতের রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশে উত্তুরে হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে জাতীয় পতাকা। হঠাৎই জাতীয় পতাকাটি উড়ে এসে পড়ে বুদির গায়ে। জড়িয়ে যায় ওড়নার মতো। কেউ বুঝতে পারে না কীভাবে খুলে গেল জাতীয় পতাকা, উড়ে রক্ষা করল সরল বুদির সম্ভ্রম। শিক্ষিত অশিক্ষক কর্মীরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, দাঁড়িয়েই থাকে….।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...