শেষ পর্ব
অমরেশ অবশ্য থাকে সব সময়ই ওর হাতের নাগালে। ওকে কাল থেকেই কাজে শামিল করে নিতে হবে। এমনিতেই অমরেশ তিওয়ারি পত্রিকার কার্যনির্বাহী সহ-সম্পাদক৷ কাজেই কোনও সমস্যা নেই। কালই স্ক্রিপ্টগুলো ডিটিপি-র জন্য অমরেশকে দিয়ে বাবুলের কাছে পাঠিয়ে দেবে। বাবুল-ই ওদের সমস্ত ডিটিপি করে থাকে। ও জানে কীভাবে কী করতে হয় এবং মোটামুটি ঠিকঠাকই করে। এখন দেখা যাক সকালে অমরেশ কখন হাজির হয়।
বেলা দশটা নাগাদ অমরেশ এল। করিতকর্মা ছেলে। ব্যাটার খরচের হাতটা একটু বেশি, তবে নিজের পকেট বাদ দিয়ে। মণি ওটা দেখেও দেখে না। কারণ জানে কিছু কিছু জিনিস মেনে নিতে হয়। কাল ও বাবুলকে ভালো করে বুঝিয়ে দেবে। বাবুলকে কাজে লাগিয়ে তবেই ফিরবে। প্রায় সারাদিন ওখানেই কাটাবে। চা টিফিন দুপুরের খাবার সব মণির পকেট থেকে যাবে। কিন্তু কাজ দিয়ে নিশ্চিন্ত। ফেরার সময় কাজের কতটা কী হল জানিয়ে যাবে। সারাদিনের রাহা ও খাই খরচটুকুও চেয়ে নেবে। ভালো ছেলে। কথা শোনে। মোটামুটি মাসখানেক লাগবে বলেছে ডিটিপি হাতে পেতে। অবশ্য যেমন যেমন শেষ হবে এক এক করে কবি লেখকদের কাছে পৌঁছে যাবে প্রুফ দেখার জন্য। ফাইনাল হলে প্রেসে যাবে।
বাঁকুড়া আর সিউড়ির দু'টো প্রুফ ক্যুরিয়ারে পাঠাবে, ওরাও আবার প্রুফ দেখে রিটার্ন ক্যুরিয়ারে মণির কাছে পাঠিয়ে দেবে। কাছেপিঠের পাঁচজনের কাছে তো মণি নিজেই যাবে আবার নিয়েও আসবে, বলাই বাহুল্য। মানে দশদিনের জন্য চা টিফিন দুপুরের খাওয়া দাওয়া ফ্রি — ভাবা যায়! মণির মনে এখন যেন কোটি টাকার লটারি পাওয়ার আনন্দ, ডগমগ করে ফুটছে। এবার তো পোয়াবারো কারণ সাত সাতখানা বইয়ের প্রত্যেক কবি লেখকরা তাদের মণিদাকেই উৎসর্গ করছে। মণির আলতো অনিচ্ছা — এই এটা আবার আমাকে কেন আমাকে কেন...! ধোপে টেকেনি। কিন্তু মনে মনে ভীষণ খুশি।
সময় তো নয় যেন ভরা বর্ষার জলস্রোতের দামোদর। হু হু করে বয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে অমরেশ তিওয়ারির তাগাদার পাল্লায় পড়ে পঁচিশে বৈশাখের দিন পনেরো আগেই সব বই এখন মণির জিম্মায়। মণি দেখে নিয়েছে প্রোডাকশন লা জবাব! প্রত্যেক লেখক কবিকে একটা করে কপি পাঠিয়ে দিয়েছে। মলাট উন্মোচনের পর বাকি কপিগুলো হ্যান্ডওভার করবে। কিন্তু মণির কড়া শর্ত অন্তত ওই সাতজন কবি লেখকদের প্রত্যেককেই যুগলে উপস্থিত থাকতে হবে। কেউ না করেনি, সবাই সম্মতি জানিয়েছে একবাক্যে। মণির উত্তেজনা প্রত্যেক দিন একটু একটু তুঙ্গে উঠছে পঁচিশে বৈশাখ যত এগিয়ে আসছে। অবশ্য অমরেশ সব সময়ই আছে ওর ছায়াসঙ্গী হয়ে। এটাই যা রক্ষে। পেমেন্ট থেকে টাকা পয়সার হিসাব রাখা ব্যস্থাপনার সিংহভাগ অমরেশের নিয়ন্ত্রণে। যদিও মণির ডেরা থেকেই ঘটছে সবটাই এবং অবশ্যই তার সম্মতিক্রমে।