অমিতাভর একটু রাগ হল মেয়েটির কথাবার্তা শুনে। তার সঙ্গে মেয়েটি হাসিমুখে কথা না বলে অহেতুক ঘ্যাম নিয়ে কথা বলল। তবে অমিতাভ মেয়েটির সঙ্গে যেচে কথা বলতে এসে দুটো জিনিস মেয়েটির বিষয়ে জানতে পারল। মেয়েটির নাম পান্না এবং সে আর জি কর হাসপাতালের জুনিয়র নার্সিং স্টাফ। অমিতাভ এমনিতেই অন্তর্মুখী। কাউকে অকারণে পাত্তা দেওয়া তার স্বভাববিরুদ্ধ। এই প্রথম কেউ তাকে পাত্তা দিল না বলে ‘পান্না” নামটা হৃদয়ের এক কোণে খানিকটা ইচ্ছাকৃতই রয়ে গেল।

দু’দিন পর আবার অমিতাভর ডিউটি পড়ল সার্জিক্যাল ডিপার্টমেন্টে। ডিপার্টমেন্টে ঢোকার পর সে দেখল পান্না আর পৃথাদি নিজেদের মধ্যে গভীর আলোচনায় মগ্ন। অমিতাভকে দেখে পৃথাদি জিজ্ঞাসা করল, ‘অমিতাভ, আজও তোমার ডিউটি এখানে?’ অমিতাভ সংক্ষেপে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”

পৃথাদির সঙ্গে অমিতাভর সম্পর্ক খুবই ভালো। কেরিয়ার ও ব্যক্তিগত বিষয়ে অনেক কথাই দু’জনের মধ্যে হয়। সিনিয়র নার্সিং স্টাফ হিসাবে পৃথাদিকে অমিতাভ শ্রদ্ধা করে। অমিতাভর ব্যাচের জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে একমাত্র তারই ফোন নম্বর পৃথাদির কাছে আছে। কিন্তু পৃথাদির সঙ্গে পান্না থাকায় তার কথা বলতে অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল। সে ফাইলে মুখ গুঁজে ডিউটিতে মন দিল। দশ মিনিট পর হলঘরের নীরবতা ভেঙে পান্না পৃথাদিকে বলল, “দিদি, আমি আসছি।”

পান্নার গলার স্বরে অমিতাভর মনসংযোগ নষ্ট হল। পান্না তার দৃষ্টির বাইরে না যাওয়া অবধি সে তাকিয়ে থাকল। অমিতাভর চোখের চাহনি দেখে পৃথাদি বলল, ‘কি রে পান্নাকে তোর পচ্ছন্দ? পছন্দ থাকলে বল আমাকে, ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

অমিতাভ একটু ইতস্তত হয়ে বলল, “ধ্যাত, তুমি যে কী বলো না দিদি! ধুর ওসব আমার ধাতে নেই।”

পৃথাদি বলল, “তোর বাড়ি তো শ্যামবাজার। পান্নার মামার বাড়ি বেলগাছিয়া। কাছাকাছি দূরত্বে প্রেম, ভালোবাসা জমে।”

অমিতাভ একটু বিরক্তির সুরে বলল, “তোমার কাজ নেই নাকি! আমি চললাম এখন।’ সে সেদিনের মতো ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

হাসপাতালে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ডিউটি করতে করতে দিন কেটে যায়। কাজের চাপে মাথা তোলার সময় তার নেই। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া তার কমে যায়। তবে হাসপাতালে অনেকদিন পান্নাকে দেখতে না পাওয়ায় স্মৃতিপটে ক্ষণিকের জন্য মেয়েটার মুখটা ভেসে উঠল। দেখতে দেখতে চোখের পলকে এক বছর কেটে গেল। ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অমিতাভ। আনন্দে উৎফুল্ল তার মন। আগস্ট মাসে সে ছুটি পেল।

নভেম্বর মাসের বিকেলে অমিতাভ পাড়ার চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎই তার মোবাইলে একটা অজানা নম্বর থেকে ফোন এল। অমিতাভ ফোন ধরে বলল, ‘হ্যালো, কে বলছেন?”

ফোনের ওপার থেকে একটি মেয়ের গলা ভেসে এল, ‘মৃণাল, আমি প্রিয়া বলছি।’

অমিতাভ বলল, ‘আমি মৃণাল নই। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।”

মেয়েটি বলল, “আমার ভুল হয়নি। মৃণাল এই নম্বরেই আমাকে ফোন করতে বলেছিল।”

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বিঘ্ন ঘটায় অমিতাভ কিছুটা বিরক্তিতে ফোন কেটে দিল। মিনিট পনেরো পর অমিতাভর ফোনে অজানা নম্বর থেকে একটি এসএমএস এল। এসএমএস-এ লেখা ছিল, ‘ডায়ালেসিস সম্বন্ধে কিছু জানা থাকলে বলো।” বন্ধুদের মাঝে থাকায় অমিতাভ এসএমএস দেখেই ফোন বন্ধ করে দিল।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...