অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে অমিতাভ সদ্য এমবিবিএস পাশ করেছে। ডাক্তারি পাশ করার পর তার ইন্টার্নশিপের ডিউটি পড়ে আর জি কর মেডিকেল হাসপাতালে। তার আরও দুই বন্ধু— সুদীপ্ত ও অনুপের ইন্টার্নশিপ পড়ে একই হাসপাতালে। তিন বন্ধু খুবই উচ্ছ্বসিত তাদের ডাক্তারি পাশ করা নিয়ে।
আর জি কর হাসপাতালে জয়েন করার পর কাজের চাপ বেড়ে যায়। এ যেন অমিতাভর কাছে ডাক্তারি পাশের চেয়েও কঠিন। সিনিয়র ডাক্তারদের আন্ডারে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ডিউটি পড়ে। বিশেষত সার্জিক্যাল, মেডিসিন এবং গাইনো বিভাগে দিনের অর্ধেকটা সময় কেটে যায় তার। এমন হয় এক একদিন দম ফেলার অবকাশ থাকে না। তার কাজের জন্য সিনিয়ার ডাক্তার থেকে নার্সিং স্টাফ প্রায় সকলেই তাকে সমীহ করে। মাসখানেক কাটতেই সিনিয়র নার্সিং স্টাফদের সঙ্গেও তার খুবই সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
একদিন হাসপাতালে ডিউটি আওয়ারে অমিতাভর সার্জিক্যাল ডিপার্টমেন্টে ডিউটি ছিল। সে নিজের কাজে মগ্ন ছিল। হঠাৎ একটি মেয়ে দরজা ঠেলে ওই ডিপার্টমেন্টে প্রবেশ করে। মেয়েটির জুতোর শব্দে কাজ থেকে চোখ সরিয়ে, সে মেয়েটির দিকে একঝলক তাকাল। মেয়েটির উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। গায়ের রং ফরসা। মাথায় ঈষৎ ঢেউখেলানো চুল পিছনের দিকে পনিটেল করে বাঁধা। মুখের তুলনায় চোখ দুটো ছোটো। স্বল্প চ্যাপটা নাক। পায়ের নখ থেকে হাঁটু পর্যন্ত সাদা মোজায় ঢাকা। গায়ে স্কুলের বাচ্চাদের মতো টিউনিক টাইপের সাদা ড্রেস, বেল্টের লুপ-এ কাপড়ের তৈরি নীল রঙের বেল্ট। সব মিলিয়ে মেয়েটির বাহ্যিক কাঠামো দেখে অনুমান করাই যায় মেয়েটি নার্সিং স্টাফ। সে সিনিয়র নার্সিং স্টাফ পৃথাদির সঙ্গে কথা বলে হন্তদন্ত হয়ে সার্জিক্যাল ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
অমিতাভর কাজ শেষ। সে-ও সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করে বেরিয়ে গেল। সুদীপ্ত ও অনুপ, অমিতাভর জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিল। অমিতাভ আসতেই হাসপাতালের পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল ওরা। এমন সময় অমিতাভ লক্ষ্য করল যে, সার্জিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসা মেয়েটি, তাকে দেখে স্মিত হাসছে। বন্ধুদের সঙ্গে থাকায় অমিতাভও মৃদু হাসল মেয়েটির দিকে তাকিয়ে। যাইহোক দু'জনে দু'জনকে অতিক্রম করে যে-যার গন্তব্যস্থলে চলে গেল।