ছুটি পেলে মনে হয় যেন একটু শান্ত নিরিবিলিতে সময় কাটাই। কলকাতা থেকে খুব দূরে নয়, সে রকম জায়গায় যেতে হলে একটা উইকএন্ড-ই যথেষ্ট। ২ রাত তিন-দিনে, টুক করে বেড়িয়ে আসতে পারেন। রইল তেমনই কয়েকটি জায়াগার হদিশ। আজ দ্বিতীয় পর্ব৷
পুরুলিয়া–বাঘমুণ্ডি–মুরগুমা
ইকো টুরিজমের আদর্শ ডেস্টিনেশন পুরুলিয়া। গভীর অরণ্য, পাহাড়ের সারি এবং একাধিক ড্যাম। শহরে জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর সমস্ত রসদ পাবেন এখানে।
প্রকৃতিপ্রেমীরা পুরুলিয়ার অন্যতম আকর্ষণ বাঘমুণ্ডিতে হাজির হন ন্যাচারাল বিউটির টানে। পাহাড়, জঙ্গলের সঙ্গে ড্যাম— মন ভরে যাবে। রাতের চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জারে উঠে পরদিন পুরুলিয়া পেরিয়ে, বরাভূম স্টেশনে নামলেই, অপূর্ব ছুটি কাটানোর লোকেশন আপনাকে স্বাগত জানাবে।
বাঘমুণ্ডি থেকে অযোধ্যা পাহাড় যেতে গাড়িতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। ট্রেকিংয়ের জন্য পারফেক্ট প্লেস। সিরকাবাদের সবুজ হিলটপও আকর্ষণীয়। বাঘমুণ্ডিকে কেন্দ্র করে দেখার অনেককিছু রয়েছে। আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম, খয়েরবেড়া ড্যাম, ময়ূর পাহাড়, পাখিপাহাড়, বামনি ফল্স, তুর্গা ফল্স সবমিলিয়ে অপূর্ব। পুরাণে কথিত আছে, বাঘমুণ্ডি হয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে গিয়েছিলেন রাম-সীতা। তৃষ্ণার্ত সীতার জন্য তীর নিক্ষেপ করে পাতাল থেকে জল এনেছিলেন রামচন্দ্র। সেই সীতাকুণ্ড স্থানীয় মানুষের কাছে পবিত্র স্থান।
পুরুলিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থান মুরগুমা। চারিদিকে পাহাড়, তার মাঝে ড্যাম। পুরুলিয়া স্টেশন থেকে ৪৭ কিলোমিটার পথ। লেকের কোল ঘেঁষে রয়েছে ইকো টুরিজম রিসর্ট। দুই রুমের টেণ্ট রয়েছে। প্যাকেজ সিস্টেম। বেড-টি থেকে ডিনার সব মিলবে রিসর্ট-এই। বেড়ানোর ফাঁকে আশপাশের সাঁওতাল গ্রামগুলিও ঘুরে নিন।
কীভাবে যাবেন : হাওড়া থেকে চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার, লালমাটি এক্সপ্রেস, হাওড়া রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, হাওড়া পুরুলিয়া এক্সপ্রেস। ৭-৮ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন পুরুলিয়া।
ঝিল্লি – হাতিবাড়ি
ডাকসাইটে সুবর্ণরেখা আর শালজঙ্গল ঘেরা বনবাংলো এই নিয়েই হাতিবাড়ি। দিন- দুয়েক ছুটি কাটাবার জন্য অপূর্ব জায়গা অদূরেই সবুজের মাঝে বিশাল জলাধার ঝিল্লি। বার্ড ওয়াচিংয়ের আদর্শ জায়গা। ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়ি, ট্রেকার রয়েছে। কিংবা খড়গপুর থেকে ভায়া গোপীবল্লভপুর হয়েও যেতে পারেন। ন্যাশনাল হলিডেগুলিতে ঝিল্লি বাঙালিদের জন্য দারুণ পিকনিক স্পট। শান্ত ও গভীর জলাধারে প্যাডেল বোটিং অনাবিল আনন্দ দেবে। শীতের সময় গেলে বাড়তি প্রাপ্তি অসংখ্য নাম-না-জানা পাখির ভিড়।
ঝিল্লিতে বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু টেন্ট রয়েছে। এছাড়া ঝাড়গ্রাম টুরিস্ট ডেভেলপমেন্টের কমিটির বাংলো আছে। ঝাড়গ্রাম থেকে হাতিবাড়ি যাওয়ার পথে পড়ে ঝিল্লি। তাই আগে ঝিল্লি যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ঝিল্লি থেকে হাতিবাড়ি মাত্র ৯ কিলোমিটার পথ। একটা গোটা দিন ঝিল্লিতে কাটিয়ে বিকেল বিকেল সবুজ পথ ধরে পৌঁছে যান হাতিবাড়িতে। সমস্ত টেনশন ভুলে রিল্যাক্স করুন। প্রাণভরা অক্সিজেন পেয়ে যাবেন। এখানকার ঘন সবুজ জঙ্গল, আর সুবর্ণরেখা নদীর মোহময়ী রূপ চাঁদের আলোয় দেখার মতো। শহুরে জীবনের টেনশন কাটাতে একেবারে আদর্শ ডেস্টিনেশন। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা সীমান্ত ঘেষা হাতিবাড়ি পর্যটকদের জন্য দারুন উপভোগের জায়গা। হাতিবাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিতে পারেন বেলপাহাড়ি। পাথুরে ল্যান্ডস্কেপের মাঝখানে ছবির মতো ঘাগড়া নদী বয়ে গেছে। পিকচার পোস্টকার্ডের মতো নিসর্গ। শালজঙ্গল আর নদীর কম্বিনেশনে জায়গাটি অতি মনোরম। হাতিবাড়ি থেকে ফেরার পথে গোপীবল্লভপুরে দেখে নিন গোপীবল্লভ মন্দির।
কীভাবে যাবেন : ঝাড়গ্রামগামী যে-কোনও ট্রেনে ঝাড়গ্রামে নেমে মাত্র ২৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই হাতিবাড়ি। তার ঠিক ২ কিলোমিটার আগেই ঝিল্লি। খড়গপুর থেকে ভায়া গোপীবল্লভপুর হয়েও যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন : ঝাড়গ্রাম টুরিস্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটি, বিডিও, ছাতিনাসোল, গোপীবল্লভপুর। পশ্চিম মেদিনীপুর। বনদফতরের ব্যবস্থাপনায় সুন্দর বাংলো আছে হাতিবাড়িতে। যোগাযোগ করতে হবে ডিএফও পশ্চিম মেদিনীপুর ডিভিশনের সঙ্গে।
যোগাযোগ : 03221-266240, ০৩৩-২৪৭৯৭৩৯৩, 00221-255010