প্রতিদিন নিয়ম করে অমিতাভকে দু’বেলা ফোন, ভিডিও কলিং-এ অর্ধেক রাত পর্যন্ত কথা বলা, দোলের সময় রং মাখা অবস্থায় অমিতাভকে দেখতে চাওয়া, তার প্রতি প্রিয়ার ভালোবাসা প্রকাশ করা, ভ্যালেন্টাইনস ডে-র দিন অমিতাভর তাকে দেওয়া কথা— এ সবকিছুই কি বিস্মৃত হল প্রিয়া! ভালোবাসার হাইওয়েতে অমিতাভকে একাকী দাঁড় করিয়ে কেন প্রিয়া তার হাত ছেড়ে দিল!

অমিতাভ তো জানে প্রিয়ার মায়ের ব্রেস্ট ক্যানসারের কথা, পারিবারিক সমস্যার কথা। প্রিয়া তো একবার ফোন করতে পারত তাকে। অমিতাভ প্রিয়ার এই আচরণের জন্য বেশ কষ্ট পেল। সে কোনওদিন যা করেনি তাই করেছে প্রিয়ার জন্য। ধর্মতলায় বাসস্ট্যান্ডে প্রিয়াকে আনতে যাওয়া, উদ্দেশ্যহীন ভাবে তার সঙ্গে কফি হাউসে, ভিক্টোরিয়ায়, নন্দনে, প্রিন্সেপ ঘাটে, পার্কে, রবীন্দ্র সরোবরে, ময়দানে সময় কাটানো, বাড়িতে ভুরিভুরি মিথ্যে কথা বলা— এসবের কি কোনও মূল্য নেই প্রিয়ার কাছে!

অমিতাভ তবু হাল ছাড়েনি। প্রিয়ার মোবাইলের দুটো নম্বরে নিয়ম করে প্রতিদিন অমিতাভ ফোন করতে থাকে। ফোনের রিং বেজে গেলেও ফোন কেউ রিসিভ করে না।

জুন মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে অমিতাভ খেয়েদেয়ে শুয়েছিল। মোবাইলের রিংটোন সশব্দে বেজে উঠল। অপ্রত্যাশিত ভাবে অমিতাভর কাছে প্রিয়ার ফোন এল। অমিতাভ ফোন ধরে খানিকটা অভিমানক্ষুব্ধ গলায় প্রিয়াকে বলল, ‘এতদিন পরে আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি খোঁজ নিচ্ছ! আমার ফোন ধরার তো প্রয়োজন মনে করোনি। আমি কতবার ফোন করেছি তোমাকে।”

প্রিয়া বলল, “তুমি তো জানো আমার মায়ের ব্রেস্ট ক্যানসার। মাকে নিয়ে খুব টেনশনে ছিলাম। মুম্বই গিয়েছিলাম৷ ওই ফোনটা বাড়িতে ছিল। অমিতাভ শান্ত গলায় বলল, ‘সেটা তো আমাকে একবার জানাতে পারতে। কত টেনশন করছিলাম তোমাকে নিয়ে। একবার আমার অবস্থাটা ভেবেছ!”

প্রিয়া শুধু সংক্ষেপে বলল, ‘সরি।’

অমিতাভর সঙ্গে প্রিয়ার ফোন আবার শুরু হল আগের মতোই নিয়মমাফিক। কিন্তু অমিতাভর যেন মনে হল ভালোবাসার সম্পর্কটা কোথাও যেন শিথিল হয়ে যাচ্ছে দিন যত গড়াচ্ছে। ফুরিয়ে যাচ্ছে তার প্রতি প্রিয়ার গভীর টান। অমিতাভর প্রতি প্রিয়া একটা চরম ঔদাসীন্য দেখায় মাঝেমধ্যে। প্রিয়া এখন দশ মিনিটের বেশি কথা বলতে চায় না তার সঙ্গে। তাকে দেখতে চাওয়ার ব্যাকুলতা প্রিয়ার মধ্যে আর নেই। প্রিয়া নিজে থেকে তাকে ভুলেও ফোন করে না। অমিতাভ বুঝতে পারে না প্রিয়ার এই আচরণের কারণ। সময়ের স্রোতে আট মাস ভেসে গেল।

পয়লা ফেব্রুয়ারি রাত্রে অমিতাভ প্রিয়াকে ফোনে জিজ্ঞাসা করে, ‘কী হয়েছে প্রিয়া? আমাকে সবটা খুলে বলো। আমি জানতে চাই। আমি ফোন করলে অল্প কথা বলে তুমি বিভিন্ন বাহানায় ফোন রেখে দিচ্ছ। অনেকগুলো মাস হয়ে গেল কলকাতায় দেখা করতে আসছ না। বহরমপুরে গেছ তো গেছই। আমি বহরমপুর তোমার সঙ্গে দেখা করব বলে যেতে চাইলে তুমি বাধা দিচ্ছ। কী হয়েছে তোমার?”

অমিতাভর কথা শুনে প্রিয়ার গলার স্বর জড়িয়ে আসে। সে গম্ভীর স্বরে বলল, ‘তোমার আমার সম্পর্কের কথা আমি বাড়িতে জানিয়েছি। বাড়িতে কিছুতেই মানতে চাইছে না। তোমার আমার ধর্ম আলাদা। তুমি হিন্দু আর আমি মুসলিম। আমার বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে সম্বন্ধ দেখছে। বাবা- মা হাতে পায়ে ধরছে বিয়েতে আমার মতামতের জন্য। আমি বাড়ির বড়ো মেয়ে। আমার একটা ছোটো বোন আছে। বুঝতেই পারছ আমার দায়িত্ব। তাই আমি বাবা-মাকে বিয়েতে মত দিয়েছি।’

(ক্রমশঃ)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...