দিন তিনেক হয়েছে লন্ডন থেকে স্কটল্যান্ডে এসেছি। মোহময়ী, লাস্যময়ী স্কটল্যান্ডের প্রকৃতি সুন্দরীকে মনপ্রাণ দিয়ে উপভোগ করার পরে, আজ মনস্থ করেছি স্কটল্যান্ডের রাজধানী শহর এডিনবরা ঘুরে দেখব।
হোটেল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এডিনবরার প্রাণকেন্দ্র ‘রয়াল মাইল’ সড়কের উপরে এসে পড়লাম। রাস্তাটা ব্যস্ততায় আমাদের দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট বা উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলকে হার মানিয়ে দেবে। রাস্তার দু’ধারে প্রতিটি বাড়ির নীচে থিক থিক করছে বড়ো বড়ো দোকান, রেস্তোরাঁ আর পাব। পরিচ্ছন্নতা ও আভিজাত্যের দিক থেকে বিচার করলে, কলকাতার কোনও অঞ্চলের সঙ্গেই এর তুলনা চলে না। এমনকী দিল্লি’র কনট প্লেসের সঙ্গেও না।
এডিনবরা শহরের প্রাণকেন্দ্র ‘রয়াল মাইল’ সড়কের অধিকাংশ বাড়িগুলোই ত্রয়োদশ, চতুর্দশ শতকে নির্মিত। প্রায় পাঁচ-ছ’শো বছর ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে রয়াল মাইলের উপরে। কোনও জায়গাতেই একটা বাড়ির সাথে পাশের বাড়ির মধ্যে কোনও ফাঁক পরিলক্ষিত হবে না।
কলকাতা শহরের উত্তরের বা দক্ষিণের যে-কোনও পথ ধরে চলতে থাকলে, মাঝে মাঝেই দুটো বাড়ির মাঝে সরু গলি দেখতে পাই। এইসব গলির ভিতরে প্রবেশ করলে, এঁকেবেঁকে যেমন বহু দূরের কোনও অঞ্চলে পৌঁছে যাওয়া যায়, তেমন কোনও গলি এই ‘রয়াল মাইল’ সড়কে চোখে পড়বে না কারও। এর একটা বিশেষ কারণ হচ্ছে, এখানকার বাড়িগুলো সর্বত্রই পাশের বাড়িগুলোর সাথে জোড়া অবস্থায় দণ্ডায়মান।
কিন্তু এক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ভাবে যা চোখে পড়ল, তা হল অধিকাংশ বাড়ির নীচে ঠিক মাঝখান দিয়ে একটা গুহাপথের মতো প্রবেশ-পথ রয়েছে। যে-পথ বাড়িগুলোর নীচ দিয়ে এগিয়ে ক্রমশ পিছন দিকে এগোতে এগোতে হয় ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী হয়ে গিয়ে মিশেছে দূর থেকে বহুদূরের অন্য কোনও অঞ্চলের অপর কোনও রাজপথের সঙ্গে। এই গুহাপথ-সম এডিনবরার এই গলিগুলোকে স্থানীয় গেলিক ভাষায় বলা হয় ‘ক্লোস্’ (Close)।
এডিনবরা ক্যাসল্-হিল থেকে ‘রয়াল মাইল’ সড়ক ধরে পূর্বমুখী পথে যত এগিয়েছি, ততই চোখে পড়েছে নানান রকমের “ক্লোস্’। মেরি কিংস ক্লোস্, অ্যাঙ্কর ক্লোস্, অ্যাডভোকেটস্ ক্লোস্, মেলরোজ ক্লোস্, ফিশার ‘সক্লো লোস্, বুকানন ক্লোস্-এর মতো বিভিন্ন ক্লোস্। এই রকম বহু ক্লোস পার করে ‘লন-মার্কেট অঞ্চল-এ এসে থামলাম, ‘ব্রডি’স ক্লোস’-এর (Brodie’s close) সামনে।
“ব্রডি’স ক্লোস্’ লেখা বড়ো গেটটার মাথায় লেখা ‘ডিকন’স হাউস’ (Deacon’s House ) । ক্লোস্-এর প্রধান ফটকের সামনে একরাশ কৌতূহল নিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। মনে মনে ভাবলাম, এটাই কী তাহলে ‘ডিকন ব্রডির’ আস্তানা ছিল! মনে শঙ্কা আর কৌতূহল নিয়ে ঢুকে পড়লাম ‘ব্রডি’স ক্লোস্’-এর অভ্যন্তরে। দিনেরবেলাতেও ঘুটঘুটে অন্ধকার! খানিকটা পথ এগোনোর পরে আলো না জ্বালিয়ে পাশের লোকটাকেও চেনা দুরূহ। দু’ ধারের পাঁচিলে সার সার দাঁড়িয়ে মাদকাসক্তের দল। ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় অন্ধকার এক দম বন্ধ করা জগৎ! শঙ্কাহত অবস্থায় আরও ভিতরে প্রবেশ করাটা দুঃসাহস-সম এবং অনুচিত মনে করে, বেরিয়ে এলাম ব্রডি স ক্লোসের বাইরে রয়াল মাইল সড়কের উপরে।
ব্রডি’স ক্লোস্-এর প্রবেশ ফটকের সামনে থেকেই ছাড়ছে ‘ঘোস্ট বাস ট্যুরের ( Ghost Bus Tour) কালো রঙের বাস। বাসের ভিতরে দরজার পাশে একটা সিটে বসে আলাপচারিতায় ব্যস্ত বাস ড্রাইভার এবং ভ্রমণ-সঞ্চালক। কৌতূহল নিরসনের জন্য তাদের সাথে আলাপ করে ডিকন ব্রডি (Deacon Brodie) সংক্রান্ত অনেক তথ্য অবগত হওয়া গেল।