দেশের প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি নারী ও শিশু রক্তাল্পতায় ভুগছে। আমাদের শিশুরা যাতে মুক্ত ভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের উচ্চতা বৃদ্ধি কখনও বাধাপ্রাপ্ত না হয়, সে জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আমাদের এই রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কলকাতা-র আইএলএস হাসপাতালের ডিরেক্টর অ্যান্ড কনসালট্যান্ট সার্জন (স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ) ডা. অরুণা তাঁতিয়া।
অ্যানিমিয়া এবং এর চিকিৎসা প্রসঙ্গে কী পরামর্শ দেবেন মহিলাদের?
সুষম খাদ্য এবং কিছু মাল্টি-ভিটামিন এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন শাকসবজি, বিটরুট, কলা, মোচা এবং গুড় আয়রন বা লোহার ভালো উৎস। এই রোগ বা জটিলতা চিকিৎসাযোগ্য। এগুলি ওষুধ দিয়ে নিরাময় করে তোলা যায়।
ফাইব্রয়েড বড়ো হলে কিছু সময় অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। আজকের উন্নত চিকিৎসায় এগুলি কি-হোল সার্জারি বা ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির দ্বারা করা যেতে পারে। এই ধরনের অপারেশনে পেটে ব্যথা হয় না এবং শরীরে সার্জারিরও প্রয়োজন হয় না।
অনেক সময় এই ফাইব্রয়েডগুলি জরায়ু বা গর্ভের ভেতরের দিকে বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে যোনিপথে টিউব সদৃশ একটি যন্ত্রের (Hysteroscopy) সাহায্যে হিস্টেরোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে ফাইব্রয়েডগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়।
চকোলেট বা এন্ডোমেট্রিওটিক সিস্ট-এর সঠিক নির্ণয় এবং অপসারণের জন্য প্রয়োজন হয় ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির। এটি কিন্তু কোনওভাবেই নারীর উর্বরতা এবং গর্ভধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে না। বরং একবার এই চিকিৎসা হলে মেয়েদের ব্যথাহীন নিয়মিত ঋতুচক্র ফিরে আসে। ফলে রক্তহীনতার সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলবে।
আমাদের দেশে এন্ডোমেট্রিওসিসের প্রচুর কেস দেখতে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে এমন একটি অবস্থা হয়, যেখানে ঋতুস্রাবের সময় নালি দিয়ে আসা রক্ত জমা হয় পেলভিসের ভেতরে। এই রক্ত কিন্তু বাড়তে থাকে পরবর্তী ঋতুচক্রের সময় এবং এমনকী ডিম্বাশয়, নালি ও অস্ত্রে আটকে গিয়ে একটি বেদনাদায়ক কষ্টকর ঋতুস্রাবের পরিস্থিতি তৈরি করে।
এই অবস্থায় খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করতে হবে, নইলে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের মতো আচরণ করবে। এই অবস্থা কিন্তু মেয়েদের গর্ভধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
অনেকসময় এটা দেখা গেছে যে, মহিলারা চিকিৎসা নেবার ১০ বছর আগেই তাদের এই ধরনের সমস্যা শুরু হয়েছে। অতএব বিয়ের জন্য অপেক্ষা না করে এই ধরনের বেদনাদায়ক ঋতুস্রাবের সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করে ফেলা উচিত।
মেনোপজ পরবর্তী সময়ে মহিলাদের ক্ষেত্রে পাইলস, যোনিপথ বা প্রস্রাবের মধ্যে দিয়ে রক্তক্ষরণের কারণে, শরীরে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে। অতএব, শরীরের জন্য সুষম পুষ্টি একান্ত প্রয়োজন।
অনেকদিন আগে বন্ধ হয়ে ঋতুস্রাবের পরেও যদি রক্তপাত হতে থাকে, তবে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার বা সারভাইকাল ক্যান্সার-এর সম্ভাবনা মনে রেখে সচেতন হতে হবে। মেনোপজের সময় যে ফাইব্রয়েড উপস্থিত ছিল, তা অনেক সময় জরায়ুর ভেতরে এসে রক্তপাত ঘটায়। অতএব, বয়সকালে কোনও মহিলার যোনিপথে রক্তপাত হলে এই বিষয়গুলি মনে রাখা দরকার।
অতএব রক্তাল্পতা মুক্ত হয়ে জীবনযাপন করুন এবং জীবনকে সম্পূর্ণ ভাবে উপভোগ করুন। সবুজ শাকসবজি এবং ফল নিয়মিত খান, ব্যায়াম করুন। এবং নিজের জীবনকে সঠিক ভাবে উপভোগ করতে নিয়মিত বার্ষিক চেক-আপ করান।
(সমাপ্ত)