পালঘর তালুকের ছোট্ট এক সৈকত ঘেঁষা গ্রাম কেলভা। আরবসাগর যেন এক অনন্ত জলরাশির মহাকাব্য। স্থানীয়দের উচ্চারণে ‘কেলওয়া বিচ’। আবার অনেকে বলেন “কেলভা সৈকত’। মুম্বই মহানগরীর বাস্তব কাঠিন্য থেকে অনেকটা দূরে আমার যাত্রাকে দুই রাতের জন্য নোঙর করেছি এই বিজন সৈকত গ্রামে। যেখানে সাগরপাড়ে হাত বাড়ালেই ঝাউবন। পা বাড়ালেই অথৈ সমুদ্দুর। ঝাউগাছগুলো নুইয়ে থাকে কিছুটা উঁচুতে, বালিয়াড়ির ধার ঘেঁষে। সাগরের লোনা হাওয়ায় মেতে থাকে চরাচর। ঢেউ ভাঙার মৃদু কলতান, বালির বুকে সফেন উর্মিমালার আঁকিবুকি ও খেলার চাদর বিছিয়ে ফিরে যাওয়ার চিরন্তন প্রয়াস।

আশ্চর্য এক সাগরগান শুনিয়ে যাচ্ছে কেলভা সৈকত। অদ্ভুত শান্ত সত্তা আছে এই গ্রামে। নিস্তব্ধতাকে দোসর করে সাগরঘেঁষা পথটি চলে গেছে কিছু জলযোগের দোকানপাট, সি-শোর রিট্রিট, ফার্মহাউস, রেস্তোরাঁ, হোটেল সঙ্গী করে। প্রাথমিক ভাবে কেলভা ছিল যথেষ্ট অফবিট পর্যটনস্থল। তবে ইদানীং পর্যটকদের কাছে কিছুটা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে আনকোরা এই সৈকত। বিশেষ করে স্থানীয়দের কাছে সপ্তাহান্তিক বেড়াবার জায়গা হিসাবে ধীরে ধীরে সমাদৃত হচ্ছে কেলভা।

মুম্বইয়ের আস্তানা থেকে গত দীপাবলির দু’দিনের ছুটিকে সম্বল করে যাত্রা শুরু করলাম, ঘড়িতে তখন সকাল ছ’টা। মুম্বই মহানগরীর ঘুম ভাঙতে তখনও যথেষ্ট দেরি। মহারাষ্ট্রের পালঘর তালুকে কেলভা সৈকত মুম্বই থেকে ১০৩.৮ কিলোমিটার পথ মাত্র। সময় লাগে কমবেশি আড়াই ঘন্টার মতো। ওয়েস্টার্ন এক্সপ্রেস, জাতীয় সড়ক ৪৮ ধরে চলেছি। যাত্রাপথে কাথিয়াওয়াড়ি অঞ্চলে এক পথচলতি ধাবায় মশালা-পাও খাওয়া হল সঙ্গে কফিপানও।

বলিউড ফিল্ম সঞ্জয় লীলা বনসালীর ‘গাঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি” বেশ জনপ্রিয় ছবি। সেই কাথিয়াওয়াড়ি অঞ্চলে রয়েছি ভেবেই খানিক নড়েচড়ে বসি। এখন পথের ধারে নাতিদীর্ঘ ঢালু পাহাড়। সদ্য বর্ষা শেষ হয়েছে। গাছগাছালির পাতায় ঘন সবুজের সতেজ পরত। হাইওয়ে বরাবর মাঝখানে টানা ডিভাইডারের জমিতেও বাহারি মরশুমি ফুলের ছটা। তার দু’ধারে যাওয়া-আসার মসৃণ ঝকঝকে পিচ রাস্তা। ইতিমধ্যে পেরিয়ে এলাম ভাসাই খাঁড়ি। যার পূর্বনাম ছিল বেসিন ক্রিক। এই ভাসাই ক্রিকের উত্তর সীমানায় জলবেষ্টিত লবণাক্ত এক ভূখন্ড রয়েছে। যেটি ওপাশে কোঙ্কন উপকূল এলাকাকে বিভক্ত করেছে। উপকূলবর্তী পোতাশ্রয় হিসেবেই মূলত পরিচিত ভাসাই ক্রিক। ভাসাই-বিরার হল যমজ শহর।

ভিকালে নামে আরও একটি জনপদ পেরিয়ে, হাইওয়েকে ডানদিকে ফেলে আমরা মাকুনসর ভিলেজ মেইন রোড ধরলাম। কিছুটা চড়াই-উৎরাই সম্বলিত ‘ঘাট রোড’ তথা পাহাড়ি পথ উজিয়ে গাড়ি চলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটাই ওপরে উঠে এল পথ। MSTRC সরকারি বাস পরিষেবা রয়েছে এই পথে। সাফালে নামে আরও একটি জমজমাট জনপদও পার হয়ে যাই। তারপরই ঘাট রোড শেষ হয়ে আবার সমতল পথ শুরু হয়। এই পথে তভুলওয়াড়ি রোডও বেশ ব্যস্ত এলাকা। ভিড়ে ঠাসা প্রচুর দোকানপাট পথের ধারে। দেদার বিকোচ্ছে দেওয়ালির রঙ্গোলি তৈরির আবির, বাহারি মাটির প্রদীপ, ব্যাটারিচালিত নানান কিসমের শৌখিন আলো।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...