রীতা খুব বিনম্র গলায় বলল, আমি কাল থেকেই শুরু করব। আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দেব, জানি না, স্যার।

—না আমাকে ‘স্যার’ বলতে হবে না। তুমি কুহেলির মতো আমাকে সুব্রতদা বলতে পারো। আর ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমার একজন রিসেপশনিস্ট দরকার ছিল, আর তোমার একটা চাকরি। ব্যস, হয়ে গেল ‘দুই আর দুইয়ে চার’। তবে তুমি তোমার বন্ধু কুহেলিকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারো। কথাটা শুনে দু’জনেই হাসল।

বাড়ি ফেরার আগে রীতা কুহেলিকে জিজ্ঞেস করল, “ওদের হোস্টেলে রীতার থাকার ব্যবস্থা করতে পারবে কি না।’ কুহেলি খোঁজ নেবে কথা দিল।

বাড়ি ফিরে রীতা ওর মাকে চাকরির খবরটা দিল। মুহূর্তে মায়ের চেহারাটা বদলে যেতে দেখল রীতা।

–বাহ তাই নাকি, আমি জানতাম আমার মেয়ে একদিন ভালো চাকরি পাবেই। ও আমাদের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেবে একদিন। আমার ছেলে নেই তো কী হয়েছে, আমার মেয়ে একজন ছেলের থেকে কোনও অংশে কম নয়। তারপর কিছু একটা ভেবে নিয়ে আবার বললেন, আজ আর তোকে রান্না করতে হবে না, আমিই না হয় আজকের রান্নাটা করে নিচ্ছি।

রীতা মনে মনে একটু হেসে বলল, “না মা তুমি বিশ্রাম করো, আমি রান্না করছি।

রীতা চাকরিতে জয়েন করেছে এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। কুহেলি তার জন্য ওদের হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। রবিবার অফিস ছুটির দিন রীতা হোস্টেলে চলে আসবে ঠিক করেছে। শনিবার রাতে বাড়ি ফিরে রান্না শেষ করে, বাবা মা-কে খেতে দিয়ে রীতা বলল, “মা আমি কাল কলকাতা চলে যাচ্ছি, ওখানে একটা হোস্টেলে থাকব ঠিক করেছি।”

মা ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘কেন, এখানে তোমার কী অসুবিধা হচ্ছে? নাকি এখন চাকরি পেয়েছ বলে আর আমাদের প্রয়োজন নেই? আমার এখন বয়স হচ্ছে, এখানে কাজ কর্মগুলো কে করবে তাহলে?”

রীতা খুব শান্ত গলায় বলল, ‘মা আমি গত তিন বছর তোমাকে আমার থাকা-খাওয়ার টাকা দিয়েছি। তাছাড়া, বাড়ির সব কাজ আমিই করেছি। তুমি বিছানায় বসে বসে সারাদিন চা আর পান খেয়েছ। এবার থেকে তোমার সংসারের ভার আবার তোমাকেই নিতে হবে।

রীতার মা আরও রেগে গিয়ে বলল, ‘আমি জানি তো, মেয়েরা এরকমই স্বার্থপর হয়। আজকে একটা ছেলে থাকলে আমার এরকম হতো না।’

রীতা একটু হেসে বলল, “ঠিকই বলেছ মা, মেয়েরা জন্মগত স্বার্থপর।’

পরদিন সকালে উঠে রীতা বাবা-মার জন্য অনেক পদ রান্না করে, নিজের ব্যাগ গুছিয়ে হোস্টেল যাবার জন্য তৈরি হল। প্রায় এগারোটা বেজে গেল, বাবা-মা কেউ দরজা খুলে বের হল না। শেষমেশ রীতা ওদের দরজার বাইরে থেকেই প্রণাম জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল।

মনে মনে ভাবল, ‘মেয়েরা মা হয়ে গেলেও স্বার্থপর-ই থেকে যায়।’

(সমাপ্ত)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...