কর্মরতা মহিলারা সারাদিন অমানবিক পরিশ্রম করার পর কিছু মুহূর্তের জন্য আরামের আকাঙ্ক্ষা রাখতেই পারেন। কিন্তু দায়বদ্ধতা তাদের শান্তিপূর্ণভাবে দিনযাপন করতে দেয় না। যদিও সংবিধান নারীদের পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে।

স্ত্রীর টাকায় আয়েশ

চঞ্চল, মধ্যপ্রদেশের একটি ছোট্ট গ্রামের স্কুল শিক্ষক। স্বামী কোনও রকম কাজ করতে পছন্দ করেন না। বিয়ের আগে তিনি পরিবারের থেকে টাকা নিয়ে খরচ করতেন। মাঝেমধ্যে ডাক্তার ভাইয়ের ক্লিনিকে ভাইকে সাহায্য করতেন। পড়াশোনা বিশেষ কিছু করেননি। এখন তিনি পরিবার থেকে আলাদা হয়ে স্ত্রীর উপার্জিত অর্থে আয়েশ করেন। সারাদিন ঘুরে বেড়ানো ছাড়া তার আর কোনও কাজ নেই। পাড়াপড়শি যদি তাকে বোঝাবার চেষ্টা করে যে, সে তার উপার্জনকারী স্ত্রীকে সাহায্য করার চেষ্টা করে না কেন, তৎক্ষণাৎ উত্তর আসে যে, ‘আমি কোনও কাজ করতে পারব না। বিয়ে কীসের জন্য করেছি?

চঞ্চল, স্বামীর পরিবারের দেখাশোনা করেন, সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন, একাই আর্থিক দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন, কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা কোনওদিন পাননি। এমনকী বাড়ির কাজেও স্বামীর সাহায্য পাননি তিনি। চঞ্চলকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, আপনি কেন আপনার স্বামীকে বাড়ির কাজে সাহায্য করতে বলেন না? তার উত্তর একটাই, ‘আমার স্বামী কিছু করতে পারেন না। কোনও কাজ যদি তিনি করেনও সবকিছু আরও গণ্ডগোল পাকিয়ে রেখে দেন তাতে আমার পরিশ্রম বাড়ে বৈ কমে না’, এর থেকে নিজে দ্রুত সব কিছু করে নেওয়া আমার পক্ষে অনেক সোজা।’

নারীরা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে

আজ সব দেশেই Working Women-রা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপার্জন করছেন। কিন্তু যখন বাড়ির কাজের দায়িত্ব আসে, তখন নারীর প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও প্রচণ্ড রূপ নেয়। সর্বোপরি, এই কাজগুলির বিভাজন রেখা কীভাবে সমাজের গভীরে গিয়ে শিকড় ছড়িয়েছে? এই সমস্যার মূল কতটা যে সমাজের গভীরে থাবা বসিয়েছে তা পরিষ্কার হয় যখন সময়ের সাথে সাথে সেই সমস্যা উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেও নারীরা আজও হার স্বীকার করছে।

নিধি এবং মায়াঙ্ক দুজনেই কর্পোরেট জগতে একসাথে কাজ করেন। একসাথে অফিসে যান। দুজনের দাম্পত্যে নিধিই সবসময় মায়াঙ্ককে আনন্দে রাখার চেষ্টা করে স্বামীর চাহিদামতো হাতের কাছে সব কিছু এগিয়ে দিয়ে। অফিস থেকে বাড়ি আসার পর রোজই মায়াঙ্ক ব্যাগটা একপাশে ফেলে টিভি চালিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে, ‘স্ত্রীকে বলে, আমি খুব ক্লান্ত, একটু চা আর জলখাবারের ব্যবস্থা করো প্লিজ।’ নিধিও আনন্দের সঙ্গে গরম চা আর জলখাবারের জোগাড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ভালোবাসায় মানুষ কী না করে? কিন্তু কেউ কি কখনও ভেবে দেখেছে যে নিধিও অফিসে গিয়ে স্বামীর মতোই উপার্জন করেন? কিন্তু যখন বাড়ির কাজের কথা ওঠে, তখন বেশিরভাগ স্বামীই বলে থাকেন যে, তার স্ত্রী নিজের ইচ্ছেতেই চাকরি করছে। তিনি স্ত্রীকে চাকরি করতে পাঠাননি। চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুধু বাড়ির দেখাশোনা করার স্বাধীনতা তাদের স্বামীরা নাকি সব সময়েই তাদের দিয়ে রেখেছেন। স্বামীদের এই ব্রহ্মাস্ত্র কমবেশি প্রতিটি মহিলার প্রতি নিক্ষেপ করা হয়। স্বপ্নকে যাতে বিসর্জন না দিতে হয় তাই কর্মরতারা স্বইচ্ছায় পিঠের ওপর বাড়ির কাজের দায়িত্ব বহন করেন, এবং এই বোঝা হালকা করার মতো পাশে কাউকে পান না।

ভারসাম্যহীনতা এবং মানসিক চাপ

নারীরা দায়িত্ব পালনে এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েন যে তারা তাদের নিজের স্বাস্থ্য এবং খাওয়াদাওয়া সম্পর্কে অমনোযোগী হয়ে পড়েন। এর ফলে বিবাহিত জীবনের মাধুর্যও হারিয়ে যায়। সেক্সের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন এবং নিজের শরীরচর্চা করতেও আলস্য অনুভব করেন। নারী যতই উদ্যোক্তা হোন না কেন, একজন পুরুষ ঠিক কিছু না কিছু তার দুর্বলতা খুঁজে বের করেন, গালি গালাজ করেন, কারণ এটা তিনি নিজের জন্মগত অধিকার বলে মনে করেন। Working Women-এর অবস্থা দুটি নৌকায় একসাথে পা রেখে চলার মতো, কারণ একদিকে অফিসে একজন নারী হওয়ার কারণে কর্মকর্তারা তাকে দমন করার চেষ্টা করেন আবার অন্যদিকে, পরিবার ও স্বামীর দ্বারা বাড়িতে শোষিত হন।

ভারসাম্যহীনতার ফলে বেশিরভাগ নারী মানসিক চাপে ভোগেন, যার কারণে তাকে ক্লান্তি, ঘুমের অভাব, বিরক্তি, অনিদ্রা, রক্তচাপ, সুগারের মতো রোগে ভুগতে হয়। সঙ্গে আরও নানা রোগকেও আমন্ত্রণ জানায় মেয়েদের অত্যধিক মানসিক স্ট্রেস। দিনের পর দিন এই দিনচর্যায় নিজেকে অ্যাডজাস্ট করতে করতে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তারা, তখন তার মন এবং শরীর দুটোই জবাব দিয়ে দেয়।

সর্বোপরি আর কতদিন নারী লিঙ্গ, স্ত্রী এবং ধর্মের নামে প্রতারিত হবে? যখন সব কাজ নারীদেরই করতে হয়, তখন তারা সম্পূর্ণ পুণ্য লাভের অধিকারী নয় কেন?

আজ আমাদের চিন্তায়, সমাজ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনা দরকার। শুধু মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বড়ো বড়ো কথা বলে কিছু হবে না। এটিকে কাজে লাগানোর খুবই প্রয়োজন আছে। এই পরিবর্তনই আগামী দিনে একটি সুখী ভবিষ্যৎ তৈরি করবে বলে আশা করা যায়।

জীবনসঙ্গীর উচিত একে অপরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। পুরুষদের উচিত তাদের স্ত্রীকে গৃহকর্মে সহযোগিতা করা। সাহায্য করলে কেউ ছোটো হয়ে যায় না। পরিবারে নারীবান্ধব পরিবেশ থাকতে হবে। সহযোগিতা এবং ভালোবাসা মনের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি প্রদান করে। ছুটির দিনে পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটান। লিঙ্গ বৈষম্যের বাইরে চিন্তা করুন। Working Woman-দের উচিত নিজের সমস্যাগুলো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে শেয়ার করা। চিন্তাভাবনার পরিবর্তন হলে সমাজের পাশাপাশি নারীর অবস্থারও পরিবর্তন হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...