যা কিছু প্রচলিত তাকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে এগিয়ে চলেছেন আজকের নারীরা। তারা আজ খুলে দিচ্ছেন সব বন্ধ দরজা। নারীশক্তি এখন শুধু একটা শব্দ নয়, এক দৃষ্টান্ত। আর আমরা যদি একটু পিছিয়ে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, সেই ১৮ শতকে তৎকালীন বাংলা মঞ্চের তারকা নটী বিনোদিনীও পরিচিত বিধিনিষেধ ভেঙে বেরোতে চেয়েছিলেন।

কীভাবে সমাজের তথাকথিত ‘দূরতম’ কোণ থেকে এসে নিজের অধ্যাবসায় ও ধৈর্য দিয়ে মানুষের মন জিতে নিয়েছিলেন নটী বিনোদিনী? তারপর কেন চলে গিয়েছিলেন আঁধারে?  আজ যেমন মেয়েরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কলাশিল্পের নানা অঙ্গনে সমান পারদর্শী, তেমনই সেই অতদিন আগে বিনোদিনীও সকলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসেছিলেন একেবারে প্রথম সারিতে। কিন্তু তারপর? নিজেদের লোকেদের থেকে আঘাত পেয়ে, জীবনের সব কিছু বাজি ধরার পরও তিনি সরে গেলেন একা। আসলে, নটি বিনোদিনী হয়ে উঠেছেন চিরন্তন পৌরুষ-এর বিরুদ্ধে এক দীপ্ত প্রতিবাদ।

আজ অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর জি ডি বিড়লা সভাঘরে সন্ধে ৬-টা থেকে অভিনীত হবে ‘বিনোদিনী অপেরা’। এই নাটকের লেখক অবন্তী চক্রবর্তী ও শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। নাট্য-রূপান্তর করেছেন রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায়। নির্দেশনায় অবন্তী চক্রবর্তী। আবহ করেছেন শুভদীপ গুহ। নাটকের আয়োজন করছেন লেডি মঙ্ক ও প্রযোজনা করেছেন আঙ্গীক। বিনোদিনীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। অন্যান্য ভূমিকায় সুজন মুখোপাধ্যায়, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, তথাগত চৌধুরী, ইন্দুদীপা সিনহা, বিশ্বজিত দাস, প্রকাশ ভট্টাচার্য, সর্বাণী ভট্টাচার্য প্রমুখ।

‘বিনোদিনী অপেরা’ একটি সঙ্গীত-ভিত্তিক নাটক। নটী বিনোদিনী দাসীর জীবন ও ঘটনাক্রমকে ঘিরে এই নাটক আবর্তিত হবে বলে জানানো হয়েছে।  বিনোদিনী-র জীবনী আজও প্রাসঙ্গিক। কারণ, তিনি নারী-সমাজের কাছে এক বিশেষ অনুপ্রেরণা। তাঁর অনুশীলন, অধ্যবসায় এবং সাহস কীভাবে সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে থিয়েটারের তারকা করে তুলেছিল তাঁকে, তা যেমন প্রেরণামূলক, ঠিক তেমনই মর্মস্পর্শী। বলা বাহুল্য, বিনোদিনী-র মতো সাহসী নারীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আজকের বিশ্বে নারীরাও আধিপত্যের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করছেন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে। এই নাটকের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে চলেছে এমন একটি বিষয়, যেখানে লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে। এই থিয়েটার তাই সমসাময়িক সময়ের পিতৃতান্ত্রিক শ্রেণীবিন্যাসকে প্রশ্ন করার চেষ্টা করে গানের আখ্যান এবং ব্যাখ্যামূলক পরিবেশনার মাধ্যমে।এই নাটকের নির্দেশকও চান, নারীশক্তি এবং সম্ভাবনাকে স্বীকৃত, সম্মানিত এবং উদযাপন করা নিশ্চিত করে একসঙ্গে দাঁড়াতে। তিনিও চান এমন একটি বিশ্ব, যেখানে নারীশক্তি প্রকৃত অর্থে আলোকিত হবে এবং তা শুধু আজ নয়, প্রতিদিন।

‘বিনোদিনী অপেরা’ নাটকের নির্দেশক অবন্তী চক্রবর্তী প্রসঙ্গত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘এটি বিখ্যাত আইকনিক অভিনেতা বিনোদিনী দাসীর জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। নাটকটিতে গিরিশ ঘোষ, অমৃতলাল বসু, গুরমুক রায়, কুমার বাহাদুর এবং রাঙাবাবুর চরিত্রগুলিকে প্রত্যক্ষ করবেন দর্শকরা। নাটকটি ব্যাখ্যামূলক প্রকৃতির এবং এটি পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং আকর্ষণীয় ভাবে সর্বজনীন প্রেক্ষাপটে একজন মহিলা শিল্পীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে নটি বিনোদিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং এখনও তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন অভিনেতা এবং ব্যক্তি হিসাবে তাঁর গৌরব এবং ট্র্যাজেডি অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।চরম পুরুষতন্ত্রের সময়ে যখন একজন নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অবস্থানকে চাপা দেওয়া হয়, তখন একজন ব্যতিক্রমী শিল্পী হিসেবে বিনোদিনীর গল্প এবং যাত্রা যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ।কারণ, বর্তমানে আমরা এমন একটি সংস্কৃতিতে বাস করি, যেখানে আমরা আমাদের ইতিহাসকে উপেক্ষা করি। কিন্তু একটি থিয়েটার তৈরিতে ইতিহাস এবং স্মৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি অনুভব করেছি যে, বিনোদিনী-র কাহিনি আমাদের ইতিহাস এবং একজন মহিলা শিল্পী বা অভিনেত্রীর ঐতিহাসিক অবস্থান তুলে ধরবে।’

এই নাটকের লাইভ মিউজিক ডিজাইন ও পরিচালনা করেছেন শুভদীপ গুহ এবং গানের সুর করেছেন রাজ্যশ্রী ঘোষ। সেট ডিজাইন-এ আছেন সঞ্চয়ন ঘোষ। সহকারী বরুন পোদ্দার। লাইটিং ডিজাইন-এ আছেন সুদীপ সান্যাল। কস্টিউম ডিজাইন-এ সুচিস্মিতা দাশগুপ্ত। কোরিওগ্রাফি-তে  রক্তিম গোস্বামী। মেক-আপে সঞ্জয় পল। কেশ-বিন্যাসে হেমা মুন্সী। সহকারী নির্দেশক পিয়ালী দত্ত। প্রপস ম্যানেজার আকাশ অধিকারী। প্রোডাকশন এক্সিকিউটিভ প্রকাশ ভট্টাচার্য। বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়-কে, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-কে এবং অনুশ্রী মালহোত্রা-কে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...