নেটফ্লিক্সের ‘জানে জান’ Kareena Kapoor Khan-এর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম-এ অভিষেক। ‘তালাশ’ ছবিটির মতই এখানেও করিনার চরিত্রটিতে বিভিন্ন শেড দেখতে পাওয়ার সুযোগ ঘটে। ছবির পরিচালক সুজয় ঘোষ যে-কোনও গল্প বা ছবির অ্যাডাপটেশন এতটাই সুন্দর ভাবে করেন যে সম্পূর্ণ ভাবে তাঁর পরিচালিত ছবিটি নতুন ভাবে দর্শকদের মনে দাগ কেটে যায়, যার ব্যতিক্রম ঘটেনি নেটফ্লিক্স-এ মুক্তি পাওয়া ‘জানে জান’ ছবিটিতেও। ছবিটি আবারও প্রমাণ করেছে পরিচালকের রহস্য কাহিনিতে পরিবেশিত শক্তিশালী মহিলা চরিত্রগুলির প্রতি একান্ত অনুরাগী মানসিকতা।
সুজয় ঘোষের নতুন এই ছবিতে মায়া ডি’সুজা নামে আরেকটি বহুমুখী চরিত্রে অভিনয় করেছেন করিনা কপুর। যেহেতু ‘জানে জান’ তাঁর ওটিটি অভিষেক, তাই চলচ্চিত্র প্রেমীরা অবশ্যই তাঁর অভিনয় প্রত্যক্ষ করতে একটু বেশিই উৎসুক। কিন্তু জয়দীপ আহলাওয়াত এবং বিজয় ভার্মার মতো ব্যতিক্রমী প্রতিভাবান সহকর্মীদের প্রতিও দর্শক যাতে সমান ঔৎসুক্য দেখায় তার পুরো প্রস্তুতি নিয়েই সুজয় ঘোষ ছবির ময়দান তৈরি করেছেন এবং এই তিনজনের মধ্যে কে যে সর্বাপেক্ষা দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন সেটা নিয়ে দর্শকরা নিজেরাই দ্বিধান্বিত।
‘জানে জান’ ছবিটি হচ্ছে, কেইগো হিগাশিনোর সর্বাধিক বিক্রিত জাপানি উপন্যাস ‘দ্য ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স’-এর রূপান্তর। Kareena সহ অভিনয়ের জন্য খ্যাত দুই প্রতিভাবান অভিনেতা, বিজয় ভার্মা এবং জয়দীপ আহলাওয়াতকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা ২ ঘন্টা ১৫ মিনিটের ছবিটির মধ্যে বিভিন্ন উপাদান উপস্থাপন করেছেন।
ছবিতে জয়দীপ আহলাওয়াত অভিনীত চরিত্র নরেন ব্যাস একজন গণিত প্রতিভা, যিনি কালিম্পংয়ে একটি স্কুলের গণিতের শিক্ষক, মাথায় টাক, দেখতে অত্যন্ত সাধারণ। তিনি গোপনে ডোজো অনুশীলন করে নিজের ক্রোধকে শান্ত করেন। তাঁর চরিত্রে একটি জটিল অভ্যন্তরীণ মনস্তত্ব কাজ করে। মায়ার প্রতি তাঁর দুর্বলতা বাড়তেই থাকে সারা ছবি জুড়ে অথচ তা প্রকাশ্যে আনতে তিনি নারাজ।
করিনা ওরফে মায়া কালিম্পংয়ে টিফিন নামে একটি ক্যাফে চালান। নরেনের তাঁর ‘হট’ প্রতিবেশী মায়া ডি’সুজা এবং নাইশা খান্না অভিনীত মায়ার মেয়ে তারার প্রতি দুর্বলতা এবং স্নেহ মায়ার কাছে আজানাই থাকে। মায়া একজন সিংগল মাদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যিনি স্বামীর ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে মেয়েকে একা মানুষ করেছেন কারণ মায়ার স্বামী একজন অর্থপিশাচ। মায়া তার ক্যাফেতে নরেনকে ‘শহরের শিক্ষক’ হিসেবেই রোজ শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানায় এবং প্রতিদিনই যত্ন সহকারে নরেনের খাবার প্যাক করে। এর মধ্যে মায়ার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া স্বামী অজিত মাহত্রে, অপ্রত্যাশিত অতিথি হয়ে মায়ার ক্যাফেতে এসে পৌঁছোয়। অজিতের হত্যা, বিজয় ভার্মা অভিনীত করণ নামে এক চতুর পুলিশ অজিতকে খুঁজতে কালিম্পংয়ে আসা ইত্যাদি ঘটনা গল্পে টানটান রোমাঞ্চের অনুভূতি এনে দেয় এবং কাহিনি এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। অজিতের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পরে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা করণ, মায়াকেই একমাত্র সন্দেহভাজন হিসেবে সনাক্ত করে।
করিনা কপুর খান-এর মেক-আপ বিহীন চেহারা এবং তাঁর অভিনয় মনে দাগ কাটে কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়েছে এর থেকেও ভালো অভিনয় তিনি করতে পারতেন। এদিকে বিজয় ভার্মা, একজন ভালো তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন পুলিশ কর্মচারী যিনি এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। উল্লেখ্য, জিও সিনেমার ‘কালকূট’ ছবিতেও বিজয় একজন পুলিশেরই অভিনয় করেছিলেন এবং তাঁর সেই চরিত্রটির রূপরেখা অনেকটাই বিজয় ভার্মার সাম্প্রতিক চরিত্রটির সঙ্গে মিল খায়। ‘জানে জান’ গল্পের রহস্য নিজস্ব গতিতে উন্মোচিত হলেও প্লটটি অনেকটাই আগে থেকে অনুমান করা যায়।