বয়স যত বাড়ে, ততই আমাদের ত্বকের পরত পাতলা হতে থাকে। ফলে শীত কিংবা অতিরিক্ত গরমে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে যারা দীর্ঘসময় ধরে চড়া রোদে এক্সপোজড হন, তাদের ক্ষতির পরিমাণ তো আরওই বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীর থেকে তেল নির্গত হয় কম মাত্রায়। সুতরাং শীতের রুক্ষতা এড়াতে এই স্টেপসগুলো মেনে চলুন।

() ক্লিনজার ব্যবহার করুন

প্রতিদিন ত্বকে সাবান দেওয়া জরুরি নয় কিন্তু ত্বক পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভুললে চলবে না ত্বকের আর্দ্রভাবও যেন বজায় থাকে। ফলে আন্ডার আর্মস, শরীরের নানা ভাঁজ এবং মুখ পরিষ্কার করতে হলে সাবানের বিকল্প খোঁজা প্রয়োজন। সাবানে ত্বক শুষ্ক করে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাড়িতে কাঁচা দুধে তুলো ভিজিয়ে ঘরোয়া ভাবে ত্বক পরিষ্কার করার রীতি বহু প্রাচীন। এখন বাজারে বহু নামি ক্লিনজার পাওয়া যায়।

শীতে এমন ক্লিনজার ব্যবহার করুন যাতে বেবি অয়েল মজুত রয়েছে। এটি ব্যবহারের ফলে আপনি ত্বক পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি, ত্বকের ময়েশ্চারও ধরে রাখতে পারবেন।

() স্নান করুন সাধারণ তাপমাত্রার জলে

শীতকালে আমরা গরম জলে স্নান করতেই বেশি পছন্দ করি। কিন্তু মনে রাখবেন বেশি গরম জল কিন্তু শরীরে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। এটি ত্বকের উপরের অংশে থাকা ন্যাচারাল ব্যারিয়ার হিসাবে যে কোশগুলি থাকে, তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই কোশগুলিই কিন্তু ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সহায়ক।

টেম্পারেচর কমফর্ট-এর বিষয়টি মাথায় রাখুন। একদম ছোটো শিশুদের স্নান করানোর আগে মায়েরা যেমন দেখে নেন, জলে তাপমাত্রা সহনশীল কিনা— তেমনই প্রাপ্ত বয়স্কদের বেলাতেও করা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয়, জলের স্বাভাবিক তাপমাত্রা রাখা এবং সেই জলই স্নানের সময়ে ব্যবহার করা।

প্রতিদিন স্নান করবেন শীতকালে। এটা ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করবে। ১০-১৫ মিনিট অবশ্যই স্নানের জন্য বরাদ্দ রাখুন। এতেই আপনার ত্বক নরম ও কোমল থাকবে।

() স্নানের আগে যা করণীয়

স্নানের আগে বডি অয়েল বা লোশন ব্যবহার করুন। ত্বকে এটা ভালো ভাবে প্রবেশ করার পর, তবে স্নান করুন। ফলাফলটা নিজেই টের পাবেন, স্নান সেরে বেরোনোর পর দেখবেন— আপনার ত্বক খুবই নরম ও হাইড্রেটেড লাগছে। কিন্তু শুধু লোশন বা তেল লাগানো যথেষ্ট নয়। স্নান করতেই হবে।

ত্বক নরম করতে দুধের সর খুব ভালো উপকরণ, স্নানের আগে দুধের সর ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। স্নানের পর ত্বকে নরম অনুভূতি হবে।

যারা চড়া গন্ধের লোশন পছন্দ করেন না, শীতে তারা স্মেললেস ফর্মুলায় তৈরি লোশন বা তেল ব্যবহার করুন। বেবি প্রোডাক্ট এক্ষেত্রে সঠিক হবে।

() তেল মাখা জরুরি

বডি অয়েল কিন্তু শীতে বিশেষ উপকারী। যদি আপনার ধারণা হয় যে, তৈলাক্ত ত্বক যাদের, তাদের তেল মাখার প্রয়োজন নেই— তাহলে বলতে হবে আপনি ভুল জানেন। শীতে সমস্ত ধরনের ত্বকের পরিচর্যা করতে হলে বডি অয়েল ব্যবহার করুন।

স্নানের পর ময়েশ্চারাইজার লাগানোও সমান জরুরি। যারা ব্রণর সমস্যায় ভোগেন, তারা তেলমুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে ডার্মাটোলজিস্ট- -এর পরামর্শ নিয়ে এই ময়েশ্চার বেসড প্রোডাক্ট-এর নির্বাচন করুন।

() সানস্ক্রিনই বাঁচাবে ত্বককে

বড়োসড়ো ক্ষতির হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতে পারে সানস্ক্রিন লোশন। শীতে তো বিশেষ করে ইউ ভি রশ্মির দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই কিরণ ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে এবং ড্যামেজ করে আপনার ত্বকের জৌলুশ। যদি ঘরের ভেতরেই থাকেন সারাদিন, তাহলে ময়েশ্চারাইজার এবং এসপিএফ ৩০-যুক্ত সানস্ক্রিনই যথেষ্ট। কিন্তু যদি বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন হয়, তাহলে অবশ্যই আপনার সানস্ক্রিন হওয়া উচিত অন্ততপক্ষে এসপিএফ ৪0।

কাজ থেকে বাড়ি ফিরে মুখ ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে, বেবি ক্রিম লাগান। এই ক্রিমে রাসায়নিকের মাত্রা কম থাকে। ফলে স্কিন ড্যামেজ কম হয়।

() লাইফস্টাইল বদলান

শীতে কম জল খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। এটা কখনওই করবেন না। শীতেও প্রচুর জল পান করার প্রয়োজন। এটাই ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। অবশ্যই সিট্রাস ফ্রুট— যেমন কমলালেবু, মুসম্বি প্রভৃতি ফলের রস খান। প্রচুর পরিমাণে স্যালাড ও শীতের সবজি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। সুপ বা স্টু অবশ্যই রাখুন ডিনারে।

() স্কিন অ্যালার্জি ও র‍্যাশ

শীতে অ্যালার্জি বা র‍্যাশের প্রবণতা থাকে অনেকের ত্বকে। একজিমার সমস্যা হয় অনেকের পায়ের মোজা থেকে। সিন্থেটিক মোজা অ্যাভয়েড করুন। শীতের মোজা পরুন কিন্তু পায়ের আঙুলের ফাঁকে জল যেন না থাকে। রাতে গরম জলে একটু নুন ফেলে প্রতিদিন ফুট ওয়াশ করুন। শীত পড়ার আগে থেকেই যে-খাবারে অ্যালার্জি হয়, সেগুলো অ্যাভয়েড করবেন। মাথায় খুশকির সমস্যা হয় শীতকালে। ডার্মাটোলজিস্ট-এর পরামর্শ মতো খুশকি সারানোর ব্যবস্থা করুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...