সম্পর্ক ভাঙার অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে বিশেষ করে মেয়ের বাপের বাড়ির হস্তক্ষেপ মেয়ের সংসারের প্রতিটি ব্যাপারে। আজ এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় এসে গেছে। মেয়ে জামাইয়ের সংসারে মেয়ের বাড়ির অতিরিক্ত নাক গলানো ভেঙে দিচ্ছে মেয়ের বৈবাহিক সম্পর্ক।

বুঝতে কেউ যদি অপারক হয়  

দুর্গাপুরের মেয়ে শ্রমণার ৬ মাস আগে খুব ধুমধাম করে কলকাতার ছেলে পলাশের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু এই ক’মাসেই তাদের ঝগড়া কোর্টরুম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কারণ বিশেষ কিছু নয়। কাউন্সিলিং-এর সময় জানা গেল শ্রমণার কাকার ছেলের বিয়ে ছিল। বিয়ের জন্য শ্রমণার বউদি এক জোড়া সোনার বালা কিনেছিল পরবে বলে। সেই দেখে শ্রমণা জেদ ধরে, ওর নতুন একটা গয়না চাই। যা পলাশ শুনতেই নাকচ করে দেয়। বলে, শ্রমণার নিজেরই তো বিয়ের এত গয়না রয়েছে, চাইলে তার মধ্যে থেকেই কিছু পরতে পারে। এই থেকেই দ্বন্দ্ব শুরু। শেষপর্যন্ত শ্রমণা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায় এবং উকিলের পরামর্শমতো পলাশের উপর একটার পর একটা মিথ্যা দোষ আরোপ করা শুরু করে।

নিজের দোষ ঢাকতে আইনের ব্যবহার

সোমা আর রঞ্জন দু’জনেই উচ্চশিক্ষিত, ওদের লভ ম্যারেজ। ১ বছর সুখে সংসার করার পর হঠাৎ-ই অন্যের হস্তক্ষেপে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। সামান্য একদিন কথা কাটাকাটি হওয়ার সময় স্ত্রীকে থামাতে রঞ্জন সোমার হাতটা একটু জোরের সঙ্গে ধরে ফেলে। ব্যস, এতেই সোমার বাপের বাড়ি থেকে গার্হস্থ্য হিংসার কেস চাপিয়ে দেওয়া হয় রঞ্জনের উপর। অথচ সোমা কাউন্সিলর-কে বলে রঞ্জন ওকে খুবই ভালোবাসে এবং কোনওদিন তার গায়ে হাত তোলেনি রঞ্জন। বরং সারাদিন সোমাকে বাড়িতে কাজ করতে হয় দেখে, রঞ্জন জোর করেই সবসময়ের পরিচারিকা রেখে দেয়, যাতে সোমা আরামে থাকতে পারে।

ফলে ধীরে ধীরে সব কাজ করাই সোমা বন্ধ করে দেয়। যার থেকে বাড়িতে অব্যবস্থা, ঝগড়া, অবসাদ শুরু হয়। অথচ রঞ্জনকে কেউ একজন বলেছিল— বাড়িতে সবসময়ের কাজের লোক থাকলে সোমা অনেক ভালো থাকবে এবং দুজনের ভালোবাসা আরও সুদৃঢ় হবে। উলটে রঞ্জনের সংসার ভাঙার উপক্রম হল!

রাহুলের ব্যপারটা একটু অন্যরকম। সকালে অফিস যাওয়ার সময় শার্টের বোতাম না থাকায় স্ত্রী রূপার খোঁজ করতে গিয়ে দেখে, স্ত্রী ফোনে ব্যস্ত রয়েছে। কিছু না ভেবেই রাহুল বলে ওঠে, ‘সকাল সকাল ফোনে এত কী কথা? আমার শার্টের বোতামটাও লাগাওনি। আমি এখন কী পরে অফিস যাব?’

রূপা নিজের অফিসের এক কলিগের সঙ্গে কথা বলছিল। রাগে ফোন ছেড়ে দিয়ে রূপাও চেঁচিয়ে ওঠে, “কতবার তোমাকে বলেছি, ফোনে যখন থাকব চেঁচিয়ে কথা বলবে না। নিজের শার্টের ব্যবস্থা নিজেই করো।”

এদিকে রাহুল যখন অফিস বেরোল তখনও খুব রেগে ছিল ওদিকে রূপাও সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করার জন্য অফিসের কাজে মন বসাতে পারল না। দু’জনের কেউ একজন দোষ স্বীকার করে নিলেই ঝামেলা মিটে যেত কিন্তু এর পর থেকে রাহুল কিছু করতে বললেই রূপা ওকে নিজেকে করে নিতে বলা শুরু করল। ধীরে ধীরে সম্পর্কে তিক্ততা বাড়তে লাগল। রাহুলেরও বোঝা উচিত ছিল স্ত্রী ফোনে ব্যস্ত মানে নিশ্চই জরুরি কোনও ফোন হবে।

মেয়ের কষ্টে অপরের দুঃখ পাওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু শ্বশুরবাড়ির ছোটো ছোটো জিনিসে নিজের মেয়ের পক্ষ টেনে সবসময় আগ বাড়িয়ে কথা বললে সম্পর্ক তিক্ত হতে বেশি সময় লাগবে না।

নতুন সমস্যা

মেয়ে মানেই বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে তাই মেয়ের মায়েরা চান, মেয়েকে যেখানে অপরের বাড়ি গিয়ে সারা জীবন কাজ করতেই হবে, সেখানে যতদিন না বিয়ে হচ্ছে বাপের বাড়িতে একটু আরাম করুক।

আজকালকার মেয়েরা কিন্তু এর থেকে দায়িত্ববোধের শিক্ষা নিচ্ছে না বরং বিয়েকে নিজের নিজের স্বপ্নপূরণ করার একটা পথ মনে করছে। কিন্তু বাস্তবে যখন স্বপ্ন, সংসারের দায়িত্বের নীচে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে তখনই দাম্পত্যে ফাটল ধরছে এবং শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেক সদস্যই চক্ষুশূল হয়ে উঠছে। তিক্ত মানসিকতার প্রধান শিকার হতে হচ্ছে শাশুড়িকে আর নয়তো স্বামীকে। কারণ এই দুজনের সঙ্গে মেয়ের সময় বেশি কাটে।

মেয়েরা বিয়ে হয়ে এসেই স্বামী এবং সংসারের উপর নিজের অধিকার ফলাতে চায়। যদি সংসারে স্বামী নিজের মা-বোন বা ভাই কাউকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করে বা আর্থিক সাহায্য করে, তাহলে মেয়েদের সমস্যা আরও বাড়ে। ছোটো ছোটো জিনিস নিয়ে অশান্তি করা শুরু করে। বিয়ে মানেই দায়িত্ব সকলের সঙ্গে মানিয়ে চলা। সুতরাং স্বামী যদি তার নিজের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলে সমস্ত দায়িত্ব পালন করতে পারে তাহলে সেটাতে নতুন বউ-এর খুশিই হওয়া উচিত, সেটাকে সমস্যা ভেবে নেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...