উপযুক্ত আহার এবং সঠিক ভাবে হজম না হলে, তার কুপ্রভাব পড়ে ত্বক এবং চুলে। তাই কী খাচ্ছেন এবং তা সঠিক ভাবে হজম হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিশেষ করে যাদের ফুড সেন্সিটিভিটি বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের এই বিষয়ে বিশেষ ভাবে যত্ন নেওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস-এর ফোটো প্রোটেক্টিভ ক্ষমতা ত্বককে সুরক্ষা দেয়। এবার জেনে নিন আর কী কী কারণে ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে।
ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষায় জিংক-এর কার্যকারিতা
জিংক পরোক্ষ ভাবে আমাদের ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলীর কারণে, জিংক ব্রণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
জিংক ত্বকের স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং ক্ষত নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এটি লিভার থেকে ভিটামিন এ পরিবহণ করে এবং ওমেগা থ্রি-এর বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এমনকী জিংক-এর হালকা ঘাটতি কোলাজেন উৎপাদন, ফ্যাটি অ্যাসিড বিপাক এবং ক্ষত নিরাময়কে ব্যাহত করতে পারে। ত্বকে তুলনামূলক ভাবে উচ্চ জিংক কন্টেন্ট (৫ শতাংশ), প্রাথমিক ভাবে এপিডার্মিসের মধ্যে পাওয়া যায়।
ত্বকের জন্য আয়রন-এর স্বাস্থ্য উপকারিতা
সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, আয়রন একাধিক উপায়ে ত্বকের উপকার করে। কালো দাগ এবং চোখের নীচের ভাঁজ দূর করতেও সাহায্য করে আয়রন। তাই, প্রতিদিন আয়রন-যুক্ত খাবার খান। কারও কারও ত্বকে যে উজ্জ্বল গোলাপি আভা থাকে, তা স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকা-র (RBCs) কারণে হয়। যদি আপনার ত্বকের টোন অস্বাভাবিক ফ্যাকাশে হয়, তাহলে সম্ভবত আপনার রক্তে আরবিসি-এর সংখ্যা কম। এই ক্ষেত্রে, আপনার খাদ্যতালিকায় ভালো পরিমাণে মাংস এবং সবুজ শাকসবজি যোগ করা উচিত। এটি আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করবে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আয়রন ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী একটি পুষ্টি উপাদান। যেহেতু আয়রন লোহিত রক্তকণিকা (RBCs) তৈরি করে, তাই এটি ক্ষত নিরাময়ের জন্য অতিরিক্ত উপকারী। তাছাড়া, আয়রন সাপ্লিমেন্টের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে।
চুলের স্বাস্থ্যরক্ষা করবেন কীভাবে?
ভিটামিন বি-১২ চুল মজবুত করে। ভিটামিন বি-১২ কোবালামিন নামেও পরিচিত। বি কমপ্লেক্স গ্রুপের অংশ, প্রাথমিক ভাবে দুগ্ধজাত পণ্য এবং ডিম ও মাংসে পাওয়া যায়। বি-১২ শিশুর বিকাশ, কোশ বিভাজনের সময় স্নায়ুতন্ত্র এবং ডিএনএ-র জন্য প্রয়োজন। ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতির ফলে রক্তাল্পতা হতে পারে।
চুলের স্বাস্থ্যে আয়রন এর ভূমিকা
আয়রন আপনার শরীরকে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি আপনার লোহিত রক্তকণিকার প্রোটিন। শরীরের কোশগুলিতে অক্সিজেনও বহন করে আয়রন। যদি আপনার যথেষ্ট আয়রন না থাকে, তাহলে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি হতে পারবে না। হিমোগ্লোবিন আপনার শরীরের কোশগুলির বৃদ্ধি এবং মেরামতের জন্য অক্সিজেন বহন করে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা নেয়।
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার চুল পড়া আয়রনের ঘাটতির সঙ্গে সম্পর্কিত, তাহলে আপনার আয়রনের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। আপনার চিকিৎসক সম্ভবত একটি ফেরিটিন স্তরের রক্ত পরীক্ষার আদেশ দেবেন, যা ফেরিটিন নামক প্রোটিনের মাত্রা পরিমাপ করবে এবং সমস্যা নির্ণয় করবে। যদি আপনার আয়রনের মাত্রা কম দেখায়, তাহলে আপনি আয়রন সাপ্লিমেন্ট দিয়ে এর চিকিৎসা করতে পারেন।
চুলের স্বাস্থ্যের জন্য জিংক
চুলের স্বাস্থ্যের জন্য জিংক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু গবেষণায় ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। জিংক চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে এবং ঘনত্ব বাড়ায়। জিংক-এর ঘাটতি যেমন চুল পড়ার কারণ হতে পারে, তেমনই জিংক-এর অতিরিক্ত মাত্রায়ও চুল পড়ে যেতে পারে। তাই জিংক থাকা চাই সঠিক মাত্রায়।
জিংক চুলের টিস্যু বৃদ্ধি, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, জিংক- এর ঘাটতির কারণে চুল ভঙ্গুর হতে পারে এবং চুল পাতলা হতে পারে। জিংক-এর ঘাটতির কারণে চুলের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটলে চুল ভেঙে যেতে পারে এবং চুলের বৃদ্ধি ও বিকাশ ধীর হয়ে যেতে পারে। আসলে, দুর্বল চুলের স্বাস্থ্য জিংক-এর অভাবের একটি সাধারণ লক্ষণ।
চুলের স্বাস্থ্যে ভিটামিন ‘সি’-র ভূমিকা
ভিটামিন সি, যা প্রোটিন তৈরি করে। ভিটামিন সি চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, চুল পড়া কমায় এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। ভিটামিন সি-র অভাবে চুল শুষ্ক ও ফেটে যেতে পারে। একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং প্রাকৃতিক কোলাজেন বুস্টার হল ভিটামিন সি। এটি চুল এবং মাথার ত্বকের পাশাপাশি মুখের জন্যও উপকারী।