মাঝে মাঝে এক একটি সিনেমা আমাদের খুব ভালো লাগে এবং মন ছুঁয়ে যায়। ‘3 Of Us’, এমনই একটি বিশেষ ছবি। ছবিটি তৈরি করেছেন অবিনাশ অরুণ। ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শেফালি শাহ, জয়দীপ আহলাওয়াত এবং স্বানন্দ কিরকিরে।

স্মৃতিভ্রংশের (ডিমেনশিয়া) প্রাথমিক পর্যায়ে মুম্বাইয়ের একজন মধ্যবয়সি মহিলা শৈলজা পাটনকর(শেফালি শাহ), এক সপ্তাহের বিরতি নেওয়া ঠিক করেন এবং নিজের স্মৃতি ম্লান হওয়ার আগে কোঙ্কনের ভেঙ্গুরলায় তাঁর শৈশবের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে তিনি তাঁর শৈশবের দিনগুলির স্মৃতি পুনরায় জীবিত করতে পারেন। স্মৃতি থাকতে থাকতে নিজের মতো তাঁর এই শেষ যাত্রা তিনি সেরে ফেলতে চান। সময় তাঁর স্মৃতি কেড়ে নেওয়ার আগে, শৈলজা তাঁর শৈশবের প্রেমিক প্রদীপের(জয়দীপ আহলাওয়াত) কাছে একবার ফিরে যেতে চেয়েছেন। প্রদীপ কখনওই নিজের শহর ছেড়ে কোথাও যাননি, এবং তাঁদের অসম্পূর্ণ প্রেমের গল্প শৈলজাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে কীভাবে তিনি ২৮ বছর আগে একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির কারণে হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। শৈলজা উপলব্ধি করেন যে প্রদীপের কাছে তাঁর হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়াটা উচিত এবং নিজের জন্য এটাতেই তাঁর মানসিক যন্ত্রণার সমাপ্তি।

ছবির গল্পটিতে শৈলজাকে অনুসরণ করে দেখা যায় তিনি তাঁর অতীতকে ধরে রাখার চেষ্টা শুরু করেছেন যাকে কিনা তিনি দীর্ঘদিন ধরে পিছনে ফেলে রেখেছিলেন। তিনি সবসময় তাঁর জীবনের পুরনো দিনগুলি, বর্তমান সময় এবং আগামীকাল সম্পর্কে চিন্তা করেন। শৈলজার স্বামী একজন বীমা এজেন্ট, নাম দীপঙ্কর (স্বানন্দ কিরকিরে) এবং প্রদীপের স্ত্রী সারিকা খুবই বুদ্ধিমতী মহিলা (কাদম্বরী কদম)।

ভবিষ্যৎ কে অনুমান করা বা অতীতকে বিশ্লেষন করার পরিবর্তে ছবিতে বর্তমানের স্থিরতায় সান্ত্বনা খোঁজার প্রচেষ্টাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। যাইহোক, শেফালি এবং জয়দীপের আকর্ষণীয় অভিনয, কিছু মুহুর্ত আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, দৃশ্যগুলি স্থবির এবং একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়। শেফালি তাঁর চোখ দিয়ে কথা বলেন। সারা ছবিতে তাঁর ট্রমা এবং তাঁর পরিচয় এবং স্মৃতি হারানোর ভয়, কোনও শব্দ না করেই তিনি নীরবে ফুটিয়ে তুলেছেন শুধুমাত্র চোখের ব্যাঞ্জনায়।

জয়দীপও দক্ষতার সঙ্গে নিজের চরিত্রটিতে উত্তেজনা এবং অদ্ভুততা উভয়ই প্রদান করেছেন যা তাঁর পরিস্থিতিকেও ন্যায়সঙ্গত করেছে। জয়দীপ একজন চমৎকার অভিনেতা, তবে মহারাষ্ট্রের সিন্ধদুর্গ জেলার স্থানীয় হিসেবে তাঁর অভিনয় কিছু কিছু জায়গায় মানানসই হয়নি বলে মনে হয়েছে। তাঁর উত্তর ভারতীয় পটভূমি ও হিন্দিতে আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও মাল্ভানি বা মহারাষ্ট্রিয়ান টান তাঁর হিন্দি বলাতে খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বানন্দ কিরকিরে এবং কাদম্বরী কদম প্রাসঙ্গিক চরিত্রগুলি উপস্থাপন করেছেন। তাঁদের সাধারণ চরিত্র বলে মনে হলেও তাঁরা খুব একটা সাধারণ নন। বিলুপ্ত হয়ে আসা স্মৃতির মতোই ছবিটিতে মাঝে মাঝেই মনে হয় কাহিনির খেই হারিয়ে গেছে আর কাহিনি স্পষ্ট ঠিক কী বলতে চাইছে সে সম্পর্কে অনিশ্চয়তা বোধ হয়।

ছবির ফটোগ্রাফি খুবই ভালো। কোঙ্কনের দৃশ্যগুলি সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। সংযুক্তা কাজা ছবিটি সম্পাদনা করেছেন এবং তাঁর কাজ প্রশংসনীয়। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও খুব ভালো এবং ছবির মেজাজ অনুযায়ী তা সুন্দর ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...