ওই চিঠিটায় সোহমের মায়ের বয়ান-এ লেখা ছিল— আপনাদের মেয়ের ফটো দেখে খুব ভালো লেগেছে, চাইলে নীচের নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
সোহমদের ল্যান্ডলাইন নম্বর ছিল সেটি। তার মায়ের বয়ানের নীচে সোহম লিখে দিয়েছিল ‘না যোগাযোগ করলে আমি পনেরো দিন পরে বাইক নিয়ে গিয়ে সোহিনীকে হরণ করে নিয়ে আসব। একদম পৃথ্বীরাজ-সংযুক্তা কেস!’
দিন সাত-আট পরে ফোন এল, সোহমের বাবা ধরলেন। কথা শেষ হতেই তিনি রাগে ফেটে পড়লেন— এ কোন মেয়েকে পছন্দ করেছ তোমরা! সোহিনী খুব অসভ্য বাজে মেয়ে! সে তার পাড়ার ‘পম’ নামে একটা ছেলের সঙ্গে লেপটে রয়েছে, এদিকে তোমার ছেলে সেই মেয়ের জন্য পাগল। ওদিকে ‘পম’ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যদি আমাদের ছেলে সোহিনীকে হরণ করার জন্য যায়, তার আর লাশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা আমাদের একমাত্র ছেলেকে এমন বিপদের মুখে কি ঠেলে দিতে পারি!
সোহম এসব মানতে চায়নি তবু তাকে মানানো হল। সোহিনীরই সমবয়সি প্রথম বর্ষের কলেজ ছাত্রী ঊষসীর সঙ্গে গত সপ্তাহে সোহমের বিয়ে হয়ে গেল। আজ ওরা অষ্টমঙ্গলায় যাচ্ছে শুনেই চলে এলাম।
নয়নার কথা শেষ হতেই সোনালি বলে ওঠে— কে এই ‘পম’?
চোখে জল, কণ্ঠে গর্জন, সোহিনী বলে ওঠে— ‘চিনতে পারলি না ওটা তো ডাবলু শয়তান রে! ভালো নাম আবার অনুপম। সংক্ষেপে বলেছে পম। পিয়নের থেকে চিঠিটা বাগিয়ে এমন কাণ্ড বাধাল! আমাদের লক্ষ্য করে তো কত কথাই বলে যায়, আমরা পাত্তা দিই কী! আমাদের সর্বনাশ করেই ছাড়ল গাড়োলটা !’
সেদিন চৈত্রের দুপুর, সোহিনী কলেজ থেকে ফিরছিল। রোয়াকে আড্ডা দেওয়া ‘পম’ এগিয়ে এসে বলল, “আরে সংযুক্তা যে! শুনলাম তোমার পৃথ্বীরাজ নতুন বউ নিয়ে হনিমুনে গেছে। ফোনে জানলাম আর কী! এখন তো আমিই একমাত্র পুরুষ যে তোমায় বিয়ে করে বাইকে চাপিয়ে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারি। চাও তো রেডি হই, সামনের বৈশাখেই না হয়… ‘
আগুনের ভাঁটার মতো জ্বলছিল সোহিনীর দুই চোখ। কঠিন স্বরে বলে উঠল, ‘তোকে বিয়ে করার চেয়ে গলায় দড়ি দেওয়া ভালো। প্রয়োজনে তোকে গুলি করে মেরে ফাঁসিতে ঝুলব। বুঝলি পিশাচ!’
যাকে পাওয়ার আশা ছিল একশো ভাগ, তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাবা-মায়ের পছন্দ করা সৌরাশিসের সঙ্গেই সোহিনীকে ঘর বাঁধতে হয়েছে। দেখতে দেখতে কাটতে চলল বারোটা বছর। সত্যিই জীবনটা খোলামেলা একটা হাট-এর মতো। কারও কারও স্বপ্ন হয়তো সত্যি হয়, তবে বেশির ভাগ স্বপ্নেরই সমাধি তৈরি হয়ে যায় এই হাটের মাঝখানে।
(সমাপ্ত)