পুনের এক সংস্থায় চাকরি পেয়ে রিয়া খুব খুশি ছিল। প্রথম কিছুদিন এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে থেকে অফিস করে সে। তারপর সেই আত্মীয়ের সহায়তায় অন্যত্র শিফট করে রিয়া।

রিয়া যে-ফ্ল্যাট-এ শিফট করেছিল, সেই ফ্ল্যাট-এ ছিল দুটি বেড রুম। যার একটি রুম-এ থাকত অনিন্দিতা। কিছুদিনের মধ্যে রিয়া এবং অনিন্দিতার মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। হঠাৎ যখন রিয়ার অফিসে কাজের চাপ বেড়ে যায় এবং খুব সকালে অফিস যেতে হতো, তখন অনিন্দিতা রিয়ার টিফিন বানিয়ে দিত। এসব দেখে রিয়া খুব নিশ্চিত ছিল। তখন সে ভেবেছিল, এমন রুম পার্টনার পাওয়া খুব ভাগ্যের ব্যাপার! কিন্তু মাস শেষ হতেই বড়ো চমক এল অনিন্দিতার কাছ থেকে। টিফিন তৈরি করে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা রিয়ার কাছে দাবি করল অনিন্দিতা। এই আবদারে রিয়া তো অবাক! সে যাকে এত বন্ধু ভেবেছিল, সে যে আসলে এত পেশাদার, তা রিয়া বুঝতেই পারেনি।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, এমন নির্লজ্জ ব্যবহারের পর অনিন্দিতার আরও এক নির্লজ্জ রূপ দেখল রিয়া। অনিন্দিতা যখনই ওর বয়ফ্রেন্ড-এর সঙ্গে দেখা করতে যেত, তখন আবদার করে রিয়ার থেকে ভালো পোশাক নিয়ে পরে যেত। এই পর্যন্ত তো তাও মেনে নিয়েছিল রিয়া। নিজের ভালোমানুষির জন্য কিন্তু আরও এক বড়ো চমক এল অনিন্দিতা-র কাছ থেকে। এক রাতে অনিন্দিতা ওর বয়ফ্রেন্ড-কে নিয়ে এসে ওর সঙ্গে রাত কাটাল। যথারীতি পরের দিন রিয়া আর ঠিক থাকতে পারল না, প্রতিবাদ করল। তখন অনিন্দিতা রিয়া-কে ‘ওল্ড-ফ্যাশনড’ স্বভাবের বলে অপমান করতে শুরু করল। প্রতিবাদে ফল হবে না বুঝে, রিয়া চুপ করে থাকতে বাধ্য হল।

তবে চুপ করে থেকেও রিয়া ভালো ভাবে থাকতে পারল না অনিন্দিতা-র সঙ্গে। কারণ, ড্রাগ সাপ্লাই করার জন্য অনিন্দিতা যখন পুলিশের জালে ধরা পড়ল, তখন রুমমেট হওয়ার কারণে রিয়াকেও পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল। অর্থাৎ অনিন্দিতা-র সঙ্গে রুম শেয়ারিং-এর স্মৃতি যে সুমধুর ছিল না রিয়ার, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অবশ্য বিষয়টা এমন নয় যে, অনিন্দিতা-র মতো সবাই মন্দ স্বভাবের মেয়ে হবে কিংবা রুম শেয়ার করে রিয়া-র মতো সবাইকে তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হয়।

রুম শেয়ার করার কিছু সুবিধা

আর্থিক সাশ্রয়: ফ্ল্যাট কিংবা রুম শেয়ার করার সবচেয়ে বড়ো সুবিধে হল এই যে, মূল খরচের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ টাকা বাঁচানো যায়। কারণ খরচ তখন রুম পার্টনার-এর সঙ্গে ভাগাভাগি হয়ে যায়। যে-কোনও শহরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে গেলে কম করে পনেরো হাজার টাকা ভাড়া লাগবে। মুম্বই হলে টু-রুম ফ্ল্যাট-এর জন্য প্রতি মাসে অন্তত পঁচিশ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। শুধু তাই নয়, ইলেকট্রিক বিল এবং অন্যান্য মেন্টেনেন্স বিল-ও মেটাতে লাগে কয়েকহাজার টাকা। একার পক্ষে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করার ক্ষমতা থাকে না অনেকের। তাই, ফ্ল্যাট কিংবা রুম শেয়ার করা এক্ষেত্রে লাভজনক।

একাকিত্ব থেকে মুক্তি: নতুন শহরে সবকিছু অচেনা থাকে প্রথম দিকে। শুধু তাই নয়, কারও সঙ্গে কথা বলতে না পারলে খুব অসহায় লাগে। আর একাকিত্ব মানসিক অবসাদের কারণ হয় অনেক সময়। তাছাড়া অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে ভরসা করে বন্ধুত্ব করাও অনেকটা ঝুঁকির। সেক্ষেত্রে একজন রুম পার্টনার থাকা ভালো। অন্তত সেই রুম পার্টনার-এর পরিচয়পত্র জমা থাকে ফ্ল্যাট-এর মালিকের কাছে এবং প্রয়োজনে সেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়। তাই, রুম পার্টনার-এর সঙ্গে অন্তত ভরসা করে কথা বলা যায় কিংবা দু’জনে মিলে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

সুরক্ষার বিষয়: কথায় আছে, একা মানেই বোকা। যতই বুদ্ধি থাকুক না কেন, বিপদের সময় কিংবা দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ভুলভ্রান্তি হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া দু’জন একসঙ্গে থাকে জানলে কুমতলবিরাও সহজে কোনও সুযোগ নিতে পারবে না। সমস্যায় পড়লে অন্তত রুম পার্টনার-এর সাজেশনস নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, বিপদ শুধু বাইরের থেকে আসতে পারে এমন নয়, ফ্ল্যাট ওনার-ও অনেক সময় আপনার একা থাকার ফায়দা নিতে পারে। অবশ্য এই বিষয়টিই শুধু নয়, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সময়মতো চিকিৎসারও প্রয়োজন। যদি শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়, চলার শক্তি না থাকে, তাহলে অন্যের সাহায্য নেওয়া তখন জরুরি। রুম পার্টনার থাকলে মানবিকতার খাতিরে কিংবা নিজেরও এমন অবস্থা হতে পারে ভেবেও, আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। তাই বলা যায়, এও এক ধরনের সুরক্ষাবলয়।

দায়িত্ব ভাগাভাগি: কোথাও থাকতে গেলে অনেকরকম কাজের দায়িত্ব এসে যায়। যেমন ঘরদোর পরিষ্কার রাখা, ওয়াটার পাম্প চালানো, টিভি, ফ্রিজ, এসি, লাইট, ফ্যান খারাপ হলে মেকানিক ডেকে সারানোর ব্যবস্থা, গ্যাস সিলিন্ডার রিসিভ করা প্রভৃতি নানারকম দায়িত্ব এসে পড়ে কাঁধে। কিন্তু যদি রুম পার্টনার থাকে, তাহলে এই সমস্ত দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া একসঙ্গে রান্না-খাওয়া করলে দু’জনে মিলে কাজ করে নেওয়া যায়। এই ধরনের যৌথ উদ্যোগ সবচেয়ে কাজে আসে অসুস্থ হলে। তখন একজন সাহায্য কিংবা সেবা করলে অন্যজন আর অসহায় বোধ করে না।

রুম শেয়ার করার অসুবিধা সমূহ

সবকিছুরই সুবিধে অসুবিধে দুই-ই আছে। রুম শেয়ারিং-এর বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই এক্ষেত্রেও আছে কিছু অসুবিধা। জেন নিন কী কী অসুবিধা হতে পারে।

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত হতে পারে: আপনি কোথায় কী গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রাখছেন, কোথায় যাচ্ছেন কিংবা কার সঙ্গে কী কথা বলছেন, তা অনেকাংশে আর গোপন থাকে না রুম পার্টনার-এর উপস্থিতিতে। বিশেষ করে বেশি রাতে ফোনে কথা বলার সময় যেহেতু বাইরে যাওয়া সম্ভব হয় না, তাই রুম পার্টনার-এর সামনেই কথা বলতে হয় এবং যা অনেকটাই অস্বস্তিকর এবং গোপনীয়তা বিঘ্নিত হওয়া। তাছাড়া, চাইলে বাড়ির লোকজনকে এনে দু-একদিন রাখারও সুযোগ থাকে না এবং থাকলেও তা খুবই সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয়, আপনি চাইলে ভালো কিছু খাবার আনিয়ে রুম পার্টনার-এর সামনে খেতে পারবেন না কিংবা আপনার পছন্দের কোনও খাবার রান্না করে একা খেতেও পারবেন না। এছাড়া আরও এমন কিছু ব্যক্তিগত বিষয় আছে যা অন্যের উপস্থিতিতে আর গোপন রাখা যায় না।

(ক্রমশ…)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...