মুম্বইতে অর্পিতা এবং সুমনা পাঁচ বছর রুম শেয়ার করে বেশ ভালোই আছে। আসলে অর্পিতা এবং সুমনা-র ভালো থাকার বিশেষ কারণ ছিল। ওরা প্রথম থেকেই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কিছু কাজ যেমন ভাগাভাগি করে নিয়েছিল, ঠিক তেমনই কয়েকটি বিষয়ে কে কী ব্যবহার করবে, তা আগে থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেমন রাতে কেউ বয়ফ্রেন্ড-কে আনতে পারবে না কিংবা রুম-এ রাখতে পারবে না, যে-যার খাবার বানিয়ে নেবে প্রভৃতি। অর্থাৎ, রুম শেয়ার করলেও উভয়ে সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে থাকে।

বর্তমান সময়ে নিজের শহরের থেকে অন্য শহরে গিয়ে লেখাপড়া করা কিংবা চাকরি করার প্রয়োজনীয়তা এবং ইচ্ছে বাড়ছে। আর তাই অন্য শহরে গিয়ে থাকতে হচ্ছে লেখাপড়া কিংবা চাকরির সূত্রে। বাস্তব এটাই যে, অন্য শহরে গিয়ে ফ্ল্যাট কিনে থাকা কিংবা একা একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকা সম্ভব হয় না অনেকের। কারণ, পকেট পারমিট করে না। তাই অন্যের সঙ্গে রুম শেয়ারিং- এর বিষয়টি এসে যায়। কিন্তু সাশ্রয়ের জন্য রুম শেয়ার করতে গিয়ে অনেকে রুম পার্টনার-এর জন্য অনেকরকম সমস্যায় পড়েন। অতএব, রুম শেয়ার করার আগে কিছু বিষয়ে সাবধান থাকা ভালো এবং বুদ্ধি ও বিচক্ষণতাকে মাধ্যম করা ভালো।

অন্যান্য অস্বস্তি: এমন অনেকে আছেন, যাদের স্বভাব-ই হল নিজের কাজ অন্যের ঘাড়ে পুরোটা ফেলে দিয়ে আরাম করা। বন্ধুত্বের সুবাদে প্রথম দিকে কিংবা মাঝেমধ্যে এসব মেনে নিলেও, সবসময় অন্যায় আবদার মেনে নেওয়া যায় না। অবশ্য শুধু কাজের বিষয়টিই নয়, নির্লজ্জের মতো অন্যের জামাকাপড়, ব্যাগ, জুতো, মেক-আপ মেটিরিয়াল প্রভৃতি ব্যবহার করে অন্যকে অস্বস্তিতে ফেলার স্বভাবও আছে অনেকের মধ্যে।

আবার ঘরদোর নোংরা করে রাখা, জোরে জোরে কথা বলা, অনেক রাত পর্যন্ত লাইট জ্বালিয়ে রাখা, বহুক্ষণ বাথরুম আর্টকে রাখা প্রভৃতি বিষয়ও অসুবিধায় ফেলতে পারে আপনাকে। অকারণে লাইট জ্বালিয়ে রাখা, ফ্যান কিংবা এসি চালিয়ে রেখে বিদ্যুতের খরচ বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। সেইসঙ্গে, সময়মতো ফ্ল্যাট-এর অর্ধেক ভাড়া কিংবা মেন্টেনেন্স-এর টাকা না দেওয়ার স্বভাবও থাকে অনেকের।

এত কিছু স্বত্ত্বেও, ফ্ল্যাট শেয়ারিং-এর সুবিধে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে সজাগ, সতর্ক এবং বিচক্ষণ থাকতে হবে। এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জেনে নিন বিশদে।

সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখুন: বন্ধুর মতো কথা বলুন রুমমেট-এর সঙ্গে, গল্প করুন মজার কোনও বিষয় নিয়ে কিন্তু এর বেশি নয়। অর্থাৎ মেলামেশা করুন সহজ ভাবে কিন্তু সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রেখে। নিজের পরিবারের বিষয়ে কিংবা নিজের কোনও উইক পয়েন্ট কখনও জানাবেন না রুমমেট-কে। কারণ, রুমমেট যদি বিশ্বস্ত না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়া ঘনিষ্ঠতা বাড়লে রুমমেট-এর অনেক অন্যায় আবদার মেনে নিতে হতে পারে।

রুমমেট-কে অন্ধবিশ্বাস নয়: একসঙ্গে থাকতে গেলে ন্যূনতম বিশ্বাস রাখতেই হবে এটাই বাস্তব কিন্তু তাই বলে অন্ধ বিশ্বাস নয়। কারণ আপনি তাকে খুব বেশি চেনেন না। অতএব চোখকান খোলা রাখুন। আপনার গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রাখুন আপনার রুমমেট- এর চোখের আড়ালে এবং নিরাপদ জায়গায় লক করে। টাকা, এটিএম কার্ড প্রভৃতি এমন জায়গায় রাখুন, যাতে আপনার রুমমেট তা হাতিয়ে নিতে না পারে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে আপনার মোবাইল ফোনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই মোবাইল ফোনের স্ক্রিন লক করে রাখুন নিরাপদ দূরত্বে। কারণ, শুধু কন্ট্যাক্ট নাম্বার, মেল, হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক-ই নয়, ব্যাংকিং অ্যাপ-ও খোলা থাকতে পারে মোবাইল ফোন-এ। তাই সাবধানতা জরুরি।

সোজাসাপটা কথা এবং আগেভাগে মৌখিক চুক্তি: রুমমেট যদি আপনার কোনও জিনিস ব্যবহার করতে চায়, তাহলে প্রথমেই “না” করে দিন মিষ্টি কথায়। কারণ, প্রথমে একটু তিক্ততা হলেও, পরে লজ্জায় পড়ে আর কোনও কিছু চাইবে না। তবে শুধু এই বিষয়টি-ই নয়, প্রথমেই আপনার পছন্দ অপছন্দের বিষয়টি জানিয়ে দিন আপনার রুমমেট-কে। তাহলে ভবিষ্যতে আপনাকে আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।

ফ্ল্যাট-এর যৌথ খরচের বিষয়েও খোলামেলা আলোচনা করে রাখুন আগে থেকেই। যেমন ফ্ল্যাট ভাড়ার টাকা, ঘরদোর পরিষ্কার করার টাকা, বিদ্যুতের খরচের টাকা ইত্যাদি মাসের কতদিনের মধ্যে দিতে হবে, তা বাধ্যতামূলক করে রাখুন। আর যদি একসঙ্গে রান্না করে খান তাহলে জ্বালানির খরচ কিংবা চাল, ডাল, তেল, মশলাপাতি কিংবা মাছ-মাংস ও কাঁচা সবজির খরচের টাকা সমান ভাবে ভাগাভাগি করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদায় করে নিন। সেইসঙ্গে মনে রাখবেন, রুমমেট খুব বিপদে না পড়লে টাকা ধার দেবেন না। কারণ, অনেকের স্বভাব আছে ধার নিয়ে টাকা শোধ না দেওয়া। অতএব, রুম শেয়ার করলেও, সতর্কতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।

(সমাপ্ত)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...