কলেজ অধ্যাপিকা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক তন্বী চৌধুরি তাঁর তৈরি ৫২ মিনিটের ডকু-ফিকশন ‘লাইটস ক্যামেরা মেগা’-র পোষ্টার লঞ্চ করলেন দক্ষিণ কলকাতা-র একটি ক্যাফেতে। তন্বী ছাড়াও এই আনুষ্ঠানিক পোষ্টার লঞ্চ-এ অতিথি হিসাবে অংশ নিয়েছিলেন অভিনেত্রী অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, ফিলম-মেকার পারমিতা মুন্সি, লেখিকা অমৃতা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
তন্বীর এই ডকু-ফিকশনের বিষয় মেগা সিরিয়ালস এবং মেগা সিরিয়ালের অভিনেত্রীদের অভিনয়-জীবন। তাই পোষ্টার লঞ্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে, টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত মেগা সিরিয়ালস এবং মেগা সিরিয়ালের অভিনেত্রীদের অভিনয়-জীবন বিষয়ক এক আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিচালক তন্বি এবং অতিথিরা প্রত্যেকে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
কলকাতার টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে অসংখ্য মেগা সিরিয়াল বছরের পর বছর দর্শকদের মন মাতিয়ে রেখেছে। সেই টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে মেগা সিরিয়ালের জন্য বহু অভিনেত্রী প্রতিদিন আসেন নানারকম চরিত্রে অভিনয়ের উদ্দেশ্যে। তাদের মধ্যে কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন কেউ বা কিছু কাজ করে হারিয়ে যান। এই মহিলাদের অভিনয় জীবন, অভিনয়ের পথের নিরলস লড়াইয়ের কথা উঠে আসে অনন্যা, অমৃতা, পারমিতা এবং তন্বীর আলোচনায়। আসলে এই আলোচনা খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল কারণ তন্বীর ডকু-ফিকশন-এ উঠে এসেছে এইসব বিষয়-ই।
বিদেশে বসে টিভি সিরিয়াল দেখতে-দেখতে এই ইন্ডাস্ট্রির সুখ-দুঃখ নিয়ে ছবি তৈরি করার তাগিদ অনুভব করেন তন্বী। রোড আইল্যান্ড কলেজের অধ্যাপিকা এবং পরিচালক ড. তন্বী চৌধুরি প্রসঙ্গত জানিয়েছেন, ‘লাইটস ক্যামেরা মেগা’ শীর্ষক এই ডকু-ফিকশনটি তাঁর ফিফথ প্রজেক্ট। যেহেতু মেগা ধারাবাহিকের অভিনেত্রীদের জীবন-জীবিকার বিষয় নির্ভর এই ডকু-ফিকশন, তাই নির্বাচিত কয়েকজনের সাক্ষাৎকারে সমৃদ্ধ এই ডকু-ফিকশন।
অবশ্য শুধু মেগা ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে রূপদানকারীরাই নয়, পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতাদের ক্ষমতায়ন ও লড়াইও নথিবদ্ধ করা হয়েছে এই ডকু-ফিকশনটিতে। এই প্রসঙ্গে তন্বী চৌধুরি আরও জানিয়েছেন, এই ডকু-ফিকশন-এর চল্লিশ শতাংশ ফিকশন।
বর্তমানে বাংলা ধারাবাহিকে ১৮ থেকে ৮৫ বছর বয়সি অভিনেত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ এলজিবিটিকিউ কমিউনিটি থেকে উঠে এসেও নিজেদের প্রতিভাকে তুলে ধরছেন। শুধু তাই নয়, প্রান্তিক মহিলাদের অভিনয়-সফরের তথ্যও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি যাঁরা এদের কাস্ট করেন, সেইসব নির্মাতা ও প্রযোজকদের কথাও তুলে ধরা হয়েছে ‘লাইটস ক্যামেরা মেগা’ ডকু-ফিচারটিতে।
একজন মেয়ের অভিনয়ে আসার ইচ্ছে থেকে সাফল্যের শিখর স্পর্শ করা পর্যন্ত তার ব্যক্তিগত জীবন যে নাট্যশাস্ত্রের ‘নব রস’ অর্থাৎ নয়টি রসের মধ্যে দিয়ে যায়, সেটিও এই ডকু-ফিকশনটিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক।
এই তথ্যচিত্রটি একটি নন প্রফিটেবল রিসার্চ ওয়ার্ক। মেগা সিরিয়ালের অভিনেত্রীদের উপার্জন, তাদের অধিকারবোধ, পরিবারের সদস্যদের সমর্থন অথবা বিরোধিতা এবং যাবতীয় প্রতিকূলতার কথা মূলত স্থান পেয়েছে এই ডকু-ফিকশনটিতে। কলকাতা-র নন্দন প্রেক্ষাগৃহ এবং এসআরএফটিআই-এর প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের পর, বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে এই ডকু-ফিকশনটি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তন্বী চৌধুরি।