তিন মাস হতে চলল আরুশির বিয়ের। বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল ওর মনে। আরুশি আর সিদ্ধার্থর বিয়েটা সম্বন্ধ করেই। আরুশি বরাবরই বিয়েটা নিয়ে খুব ফ্যানটাসাইজ করত। কিন্তু বিয়ের পর কার্যক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গঠনের সময় একটা বড়োসড়ো ধাক্কা খেল সে। কল্পনায় সিদ্ধার্থকে যতটা রোমান্টিক ভেবেছিল সে বাস্তবে ততটা আদৌ নয়। এটা যখন বুঝল আরুশি, মানসিক ভাবে বড়ো ধাক্কা খেল সে। বিবাহিত সম্পর্কের ভিতটাই টলমল হয়ে উঠল। সুতরাং এটাই মনে রাখতে হবে যে, একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে সেক্স ফ্যান্টাসির সঙ্গে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সম্পর্কটির মূল্যায়ন করা দরকার।

একঘেয়েমি যখন যৌন প্রক্রিয়াতেও আসে, তখন একজন সঙ্গী সেখান থেকেও বেরিয়ে আসার বিকল্প রাস্তা খোঁজে। এই কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও দূরত্ব বাড়তে শুরু করে কিছুদিন পর থেকেই। দূরত্বের কারণ যাই হোক না কেন, এর মৌলিক ভিত্তি সম্ভবত সেই একঘেয়েমি। এই দূরত্ব বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পর্যন্ত পরিণতি বিবাহবিচ্ছেদে গিয়ে দাঁড়ায়। এটা সত্য যে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা দিন দিন অবিশ্বাস্য ভাবে বাড়ছে। কেন বেডরুমে এই একঘেয়েমি আসে এবং এই একঘেয়েমি এড়ানোর বিকল্প কী ?

একঘেয়েমি এড়ানোর উপায়

লুইস এ ওয়ার্ডসওয়ার্থের জনপ্রিয় বই ‘এ টেস্ট বুক অন সেক্সোলজি’তে বলা হয়েছে, ‘বেডরুমের একঘেয়েমি এড়ানোর জন্য দম্পতিদের ক্রমাগত নতুন ভাবে যৌন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত। নতুন নতুন পোজের পরীক্ষানিরীক্ষার মানসিকতা থাকা উচিত। কখনও কখনও জায়গা পরিবর্তন করে কিছুদিন হিল স্টেশনে কাটিয়ে আসাটাও একটি ভালো বিকল্প।’

লুইস আরও লিখেছেন, ‘কিছুদিন পর তাদের মধ্যেও পৌনঃপুনিকতা বা একঘেয়েমি দেখা দেয়। ফলত দম্পতি আবার যৌন প্রক্রিয়ার থেকে বেরিয়ে আসার একটি বিকল্প উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করে। বর্তমানে নতুন একটি নাম বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং তা হল সেক্স ফ্যান্টাসি, যা পশ্চিমি দেশগুলোর তরুণদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেকেই আছে যারা বিশ্বাস করে যে এটি সঠিক। তবে এমন লোকও রয়েছে যারা এটি ভুল প্রমাণ করতেই উদ্যত।’

মুম্বইয়ের বিখ্যাত সেক্স কাউন্সেলর ডা. রুস্তম-এর মত হল, ‘এই বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো খুব দরকার। তিনি বলেন যে, তাঁর কাছে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আজকের প্রজন্মের কাছে খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু পেয়ে যাওয়ার চাহিদা অনেক বেশি। ফাস্ট ফুডের মতো তাদেরও ফাস্ট আনন্দ দরকার। এর জন্য ধৈর্য ধরতে তারা প্রস্তুত নয়। যদিও মনে রাখতে হবে যে,যৌনতা আবেগের খেলা।’

তিনি আরও বলেন— যৌন প্রক্রিয়ায় শুধু শরীরেরই অংশ থাকে না, মনও সমান ভাবে যুক্ত থাকে। তাই সেক্স প্রসেসের আগে ফোরপ্লে অর্থাৎ শারীরিক স্পর্শ, আলিঙ্গন, চুম্বন, জড়িয়ে ধরা প্রভৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা আজকের তরুণ প্রজন্মকে উপেক্ষা করতে দেখা যায়। অবশ্য এটা হয়তো পুরোপুরি তাদের দোষ নয়। কাজের চাপ, অন্যান্য স্ট্রেস এতটাই বেশি যে, তাদের মানসিক অবসাদ খুব দ্রুত গ্রাস করে। এই কারণে, ফোরপ্লে-তে যতটা সময় দেওয়া উচিত তা হয় না। ফলস্বরূপ, আজকের প্রজন্ম, যৌন প্রক্রিয়ায় এক্সটেসি, চরম আনন্দ বা অর্গাজম (সেক্সুয়াল ক্লাইম্যাক্স) অর্জন করতে সক্ষম হন না। এখানেই যৌন প্রক্রিয়ার প্রতি তার বিরূপ মনোভাব তৈরি হওয়া শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে একঘেয়েমিতে পরিণত হয়। এই একঘেয়েমি, দূরত্ব তৈরি করতে শুরু করে এবং দূরত্ব ধীরে ধীরে বিবাহবিচ্ছেদের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

শরীর এবং মন উভয়ই কার্যকর

ডা. রুস্তমের কাছে যৌনসমস্যা নিয়ে আসেন গৌরব গ্রোভার এবং তার স্ত্রী নেহা গ্রোভার। তাদের কাছেই জানা গেল যে, তারাও নিজেদের যৌনজীবন নিয়ে একঘেয়েমিতে ভুগছেন। সেই জন্যই তারা ডা. রুস্তমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেক্সের প্রতি তারা আর কোনও রকম আকর্ষণ বোধ করেন না।

তারা জানান, ‘আমরা মাত্র দুই বছরের বিবাহিত। কিন্তু যৌন প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আগ্রহ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এটির প্রতি আর কোনও আকর্ষণ নেই। অন্যান্য সমস্ত জিনিসের মতো, যৌনতাও আমাদের কাছে প্রতিদিনের মতো বিরক্তিকর মনে হতে শুরু করেছে।’ গৌরব আরও বলেন, ‘আমাদের যৌন জীবনে রোমাঞ্চ আনতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। সেক্সের উপর বিভিন্ন ভিডিও দেখার পর কিছুটা উত্তেজনা বোধ করি। অনেক ওষুধও ব্যবহার করে দেখেছি। সাপ্তাহিক ছুটিতেও আমরা হোটেলে থাকতে শুরু করি। এটি অবশ্যই কয়েক দিনের জন্য আমাদের একঘেয়েমির অবসান ঘটিয়েছে। আমরা এই পরিবর্তনটি উপভোগ করতে শুরুও করেছিলাম। কিন্তু কয়েক দিন পরে, আমরা এটিতেও বোর হতে শুরু করি। অবশেষে আমরা ডা. রুস্তমের কাছে এসেছি। তিনি আমাদের খুব ভালো কিছু টিপ্স দিয়েছেন। এগুলো থেকে আমরা অনেক লাভবান হচ্ছি।’

সেক্স ফ্যান্টাসি

গৌরব জানালেন, ‘ফ্যান্টাসি মানেই কল্পনার জগৎ। চিকিৎসক আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, আমরা বেডরুমে যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের দুজনকেই কল্পনার জগতে যেতে হবে। মানে, বেডরুমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি আমার স্ত্রীকে রুপোলি পর্দার প্রিয় নায়িকা ভাবতে শুরু করি এবং স্ত্রীও আমাকে তার প্রিয় হিরো ভাবতে শুরু করে। এতে প্রথমে মনের মধ্যে হাসি পেলেও, দুজনেই একে অপরের প্রতি আকর্ষিত হই৷’

(ক্রমশ…)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...