অনিমেষ একটা ভালো চাকরি পেয়ে দিল্লি চলে এসেছে। এসে শ্রীনিবাসপুরীর ভারত সেবাশ্রম সংঘের গেস্ট হাউসে ছিল। একটা ঘর ভাড়ার জন্য অনেককে বলে রেখেছে, কারণ এখানে তো বেশিদিন থাকা যাবে না। অফিসেও অনেককে বলেছে যদি কোনও ঘর ভাড়া পাওয়া যায় জানাতে।
একদিন অফিসের এক কলিগ এসে খবর দিল লাজপত নগরের একজন প্রপার্টি ডিলার-কে সে চেনে। যদি অনিমেষ রাজি থাকে তবে তাকে ফোন নম্বর দিতে পারে। অনিমেষ যেন হাতে চাঁদ পেল। বলল—‘এখুনি দিন।’
অনিমেষ ওই প্রপার্টি ডিলারকে ফোন করে জানিয়ে দিল যে, সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে সে তার সঙ্গে দেখা করবে।
অফিসের ছুটির পর অনিমেষ সোজা গিয়ে পৌঁছোল সেই প্রপার্টি ডিলারের অফিসে। ইতিমধ্যেই অনিমেষ এতদিনে নিশ্চিত হয়েছে যে, দিল্লতে ঘর ভাড়া পেতে হলে এরাই একমাত্র ভরসা। বেশিরভাগ লোকই তাই করে। অনিমেষ লক্ষ্য করল— এখানে প্রায় সব মানুষই বাঙালিদের ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করে। এমনকী বড়োরাও দাদা বলেই সম্বোধন করেন বাঙালিদের।
প্রপার্টি ডিলারের অফিসে পৌঁছোতেই ভদ্রলোক অনিমেষকে খুব খাতির করে বসালেন। চা, জল অফার করলেন। তারপর বললেন— ‘দাদা, আপনাকে এই মুহূর্তে ঘর দিতে পারব না। তবে আগামী মাসে একটা ঘর খালি হবে সেটা দিতে পারি।’
—না, আমার এখনই লাগবে। যদি কিছু থাকে তো বলুন।
একটু ভেবে ভদ্রলোক উত্তর দিলেন— ‘একটা বাড়ি আছে কিন্তু আপনি সেখানে বেশিদিন থাকতে পারবেন না।”
—কেন বলুন তো?
—এর আগে ওখানে দু’জন ছিল কিন্তু থাকতে পারেনি। শুনেছি কোনও একটা সমস্যা আছে। ওই বাড়িটার দু’টো ভাগ। সামনের দিকে বাড়ির মালিক, ওনার স্ত্রী এবং এক মেয়ে থাকে। আর পেছন দিকের ভাগটা ভাড়া দেন। তাই ওই জায়গায় আপনাকে পাঠাতে চাই না।
—কী সমস্যা আছে? ভূত-টুতের কথা বলছেন কি? আমি ওসবে বিশ্বাস করি না। আমি গ্রামে থাকাকালীন রাতবিরেতে বহুবার শবদাহ করতে শ্মশানে গেছি। ওসব ভয় আমি পাই না। এ প্রসঙ্গে আপনাকে একটা ঘটনা বলি—
আমাদের পাড়াতে ‘মেটে পুকুর’-এর পাশে একটা বাড়ি পরিত্যক্ত হিসেবে অনেকদিন পড়েছিল। বাড়ির মালিক বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। পরে ঠিক করেন বাড়ি বিক্রি করে দেবেন। কিন্তু এর মধ্যেই শুরু হল এক ব্যাপার। চারিদিকে রটে গেল— ওই বাড়িতে ভূতেরা থাকে। প্রতিদিন রাতে বাড়ির ছাদে প্রদীপ জ্বলতে দেখা যায়। বাড়ি তো তালা দেওয়া। তাহলে কে এই প্রদীপ জ্বালায়? এসব ভূতের কাণ্ড! অনেকেই রাতে ওই প্রদীপের আলোও দেখেছে। আমিও দেখেছি। তখন আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম এই ভূতকে দেখতেই হবে। তাই রাতের অন্ধকারে কয়েকজন মিলে ওৎ পেতে রইলাম এবং শেষ পর্যন্ত রহস্য উদ্ঘাটিত হল।
এটা ছিল পাশের বাড়ির লোকের কাজ। তারা চাইত না যে ওই বাড়িটা অন্য কেউ কিনুক। ভূতের ভয়ে অন্য কেউ না কিনলে তারা সস্তায় ওই বাড়িটা মালিকের থেকে কিনতে পারবে। তাই রাতের বেলা ছাদ টপকে পাশের ছাদে গিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে আসত ভূতের ভয় দেখাতে। আর লোকের মধ্যে প্রচার করে দিয়েছিল, ওই বাড়িতে ভূত আছে। তাই আমি ওসব নিয়ে ভাবি না।
হাসতে হাসতে অনিমেষ বলল, ‘সবচেয়ে মজার কি জানেন, সবাই ভূতের ভয় দেখায় কিন্তু কেউ দেখেছে বলে এখনও ‘শুনিনি।’
—ঠিক আছে, আপনি যখন রাজি তখন ওখানেই চলে যান। পরে আমাকে দোষ দেবেন না। বাড়ির মালিককে আমার কথা বললেই উনি আপনাকে ঘর দেখিয়ে দেবেন। বাড়ির ঠিকানা ও মালিকের নাম এই কাগজে লিখে দিলাম। বলে একটা কাগজে ঠিকানা লিখে অনিমেষের হাতে দিয়ে দিলেন।