প্রাত্যহিক কর্মজীবনে পাকযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য কোন কোন বিষয়গুলিকে মাথায় রাখতে হবে, তা জেনে নেওয়া জরুরি। যেমন, ব্রেকফাস্ট করতে হবে ভারী। লাঞ্চ হবে হালকা এবং ডিনারটিও করতে হবে হালকা। এটাই হচ্ছে প্রাত্যহিক জীবনের ভালো খাদ্যাভ্যাস। তাছাড়া তেল-মশলা জাতীয় খাবারকে বর্জন করতে হবে। অ্যালকোহল ও ধূমপান বর্জন করতে হবে। ভালো ভাবে তৈরি টাটকা খাবার খেতে হবে এবং রেস্তোরাঁর খাবারকে এড়িয়ে চলতে হবে। কলকাতা-র সল্টলেক-এ অবস্থিত, এএমআরআই হাসপাতাল-এর অঙ্কোসার্জারি এবং অ্যাডভান্সড ল্যাপারোস্কোপিক কনসালটেন্ট জিআই সার্জন ডা সঞ্জয় মণ্ডল এই বিষয়ে জানিয়েছেন বিস্তারিত।
বর্তমান সময়ে পড়াশোনার কারণে ছাত্রদের মধ্যে প্রচণ্ড ভাবে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। একইসঙ্গে দেখা যায় যে তাদের পাচন প্রক্রিয়াটিও যথাযথ নয়। ছেলেমেয়েদের পাকযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য তাদের বাবা-মায়েদের কী টিপস দেবেন ?
ছেলেমেয়েদের বাড়িতে তৈরি খাবার দিতে হবে। খাবার হতে হবে সুষম ও পুষ্টিকর। বাইরের রেস্তোরাঁর খাবার থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। ছেলেমেয়েদের টাটকা ফল ও তরিতরকারি খেতে উৎসাহিত করতে হবে। ঠান্ডা ও নরম পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
কেউ যদি তার জীবনচর্যার প্রাত্যহিক নির্ঘন্টকে নতুন করে সাজাতে চায়, তাহলে সেখানে স্বাস্থ্যকর পরিকল্পনা কী হতে পারে?
নিয়মিত ভাবে ব্যায়াম করতে হবে। সময়মতো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সঠিকমাত্রার ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করতে হবে।
ডায়েটিং কতটা স্বাস্থ্যসম্মত অথবা সঠিক ডায়েটটাই বা কী?
খাবার এড়িয়ে গিয়ে কখনওই ডায়েটিং হতে পারে না। সঠিক সময় উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত মাত্রায় খাবার গ্রহণ করেই সঠিক ডায়েটিং হতে পারে। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার, চিনি ও তেল-মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
অ্যাসিডিটি’র কারণ কী? এর প্রভাব এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
অ্যাসিডিটি হল কোনও মানুষের দেহের পাকস্থলি থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যাসিড ক্ষরণের ঘটনা। এর কারণে পেটের উপরের দিকে ব্যথা হয় এবং বমি বমি ভাব তৈরি হয়। এর মাত্রা বেড়ে গেলে পাকস্থলিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে রক্ত বের হয় এমনকী অন্ত্রে ছিদ্রও হয়ে যেতে পারে। এর চিকিৎসায় অ্যান্টাসিড খেতে হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার-এর সাহায্যে, যাকে পিপিআই বলা হয়ে থাকে।
সুস্থ পাকযন্ত্রের জন্য কোনও ব্যায়াম কি রয়েছে?
সুস্থ পাকযন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যায়াম নেই। তবে সার্বিক ভাবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে সেটা শরীর এবং পরিপাক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভালো হয়৷
সুস্থ জীবনপ্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হলে দিনের শুরুতে ব্রেকফাস্ট কীরকম হতে হবে?
ব্রেকফাস্ট হল দিনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আহার। ব্রেকফাস্ট-এ সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি যুক্ত খাবার রাখতে হবে। ব্রেকফাস্ট কিংবা অন্য যে-কোনও খাবারই হোক না কেন, খাবার হতে হবে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর। রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এবং অত্যধিক পরিমাণে তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।
ভারী অথবা তেল, মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক ভাবে এর প্রতিকার কী হতে পারে?
যে-কোনও মানুষেরই উচিত সবসময় ভারী আহার এড়িয়ে চলা। তবে যদি কোনও কারণে ভারী আহার হয়ে যায়, তখন সমস্যা দেখা দিলে অ্যান্টাসিড খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে এনজাইমও খেতে হবে। এই এনজাইম খাবারকে হজম করতে সাহায্য করে।
সুস্থ ও কর্মঠ ভাবে বাঁচার জন্য দৈনন্দিন রুটিন কী হওয়া উচিত?
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। নিয়ম করে আহার গ্রহণ করতে হবে। মানসিক চাপমুক্ত হয়ে থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় চা, কফি ও এনার্জি ড্রিংকস বর্জন করতে হবে।
নানান কারণে ক্ষুধামান্দ দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ সময়ই এটা দেখা দেয় সীমিত সময়ের জন্য। তখন এর জন্য কোনও চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না। তবে যদি এই ঘটনা বেশিদিন ধরে চলতে থাকে এবং দিন দিন দেহের ওজন কমে যেতে থাকে, তখন অবশ্যই এই বিষয় নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৫০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের পরিপাক ক্রিয়া সঠিক ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় টিপ্স কী হতে পারে ?
প্রতি ঘন্টা ছাড়া ছাড়া হালকা খাবার গ্রহণ করতে হবে। অতিরিক্ত লবণ এবং অতিরিক্ত চিনি খাওয়া বর্জন করতে হবে।